দেশজুড়ে

চামড়া কেনাবেচা নিয়ে শঙ্কায় নওগাঁর ব্যবসায়ীরা

কোরবানি ঈদে চামড়া কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন নওগাঁর চামড়া ব্যবসায়ীরা। বাজারে চামড়ার দাম কম হওয়ায় এবং ভারতে চামড়া পাচার হওয়ার আশঙ্কা করছে ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, গত দুই বছরের পাওনা প্রায় ২০ কোটি টাকা ট্যানারি মালিকরা পরিশোধ করছেন না। ট্যানারি মালিকরা স্বল্প সুদে সরকারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ওই টাকা অন্য ব্যবসার কাজে লাগান। অথচ আমাদের পাওনা টাকা পরিশোধ করেন না। তাদের কাছে একপ্রকার চামড়া ব্যবসায়ীরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন।

Advertisement

জেলা চামড়া সমিতি সূত্র জানায়, ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৩৫-৪০ টাকা। গত বছর ছিল ৪০-৪৫ টাকা। সারাদেশে প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দাম ১৮-২০ টাকা। গত বছর গরুর চামড়া ছিল ২০-২২ টাকা। আর ছাগলের ১৫-১৭ টাকা হলেও এবছর চামড়ার দাম ১৩-১৫ টাকা। জেলায় ছোট বড় মিলে প্রায় ৩৫ জন চামড়া ব্যবসায়ী রয়েছে। এসব ব্যবসায়ীরা কোরবানির সময় আসলে ধারদেনা করে টাকা সংগ্রহ করে চামড়া কেনেন। অথচ দফায় দফায় সময় নিয়েও বিগত বছরের পূর্বের পাওনা পরিশোধ করেনি ট্যানারি মালিকরা। গত দুবছরে ২০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে ট্যানারি মালিকদের কাছে। তারা টাকা পরিশোধ করছেন না। বিভিন্ন অজুহাত দেখাচ্ছেন। ফলে এ বছর চামড়া কেনা নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা।

সূত্র আরও জানায়, টাকা না পেয়ে কেউ কেউ এ ব্যবসা ছেড়ে অন্য ব্যবসায় চলে গেছেন। পাওনাদারের ভয়ে অনেকেই আবার এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। মূলধন সঙ্কটে চামড়া কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন জেলার চামড়া ব্যবসায়ীরা। এদিকে ৫০ কেজি ওজনের লবনের বস্তায় বেড়েছে প্রায় ২০০-২৫০ টাকা। তাদের দাবি, সরকার যদি তাদের ট্যানারি মালিকদের মত স্বল্প সুদে ঋণ দিত তাহলে এ ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতো।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্র জানায়, এ বছর জেলায় কোরবানির জন্য প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার পশু জবাই করা হবে। গত বছর এ জেলায় ১ লাখ ২০ হাজার পিস গরু, ছাগল ও ভেড়ার চামড়া সংগ্রহ করা হয়। বিক্রিত চামড়ার মূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা।

Advertisement

সদর উপজেলার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন বলেন, আমরা ছোট ব্যবসায়ী। ঈদ মৌসুমে ধারদেনা করে চামড়া কিনি। কিন্তু ট্যানারি মালিকদের সরকার ঋণ দিয়ে থাকেন। সরকার বা কোনো ব্যাংক জেলা পর্যায়ে চামড়া শিল্পের ওপর ঋণ দেয়া হয় না। অথচ ট্যানারি মালিকদের কাছে আমাদের পাওনা টাকা আছে। গত বছর আমি চামড়া কিনেছি প্রায় চার লাখ টাকার। এখনও কোনো টাকা পাওয়া যায়নি। এ বছর চামড়া কিনা নিয়ে শঙ্কায় আছি। অনেকে এ ব্যবসা ছেড়ে চলে গেছে।

জেলা চামড়া ব্যবসায়ী মালিক গ্রুপের সভাপতি মমতাজ হোসেন বলেন, ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে ব্যবসায়ীরা। চামড়ার ভালো দাম না পাওয়ায় এবং পাওনা টাকা না পাওয়ায় অনেক পুরনো চামড়া ব্যবসায়ী আজ হারিয়ে গেছে। চামড়া খাতে বরাদ্দকৃত টাকার সঠিক ব্যবহার না হওয়ায় আমরা দিন দিন ধ্বংসের পথে চলে যাচ্ছি। আমরা টাকা পাই না। এর মূল কারণ ট্যানারি মালিক।

তিনি বলেন, সরকারকে সরাসরি এই শিল্পের দিকে নজর রাখতে হবে। চামড়ার দাম কম হওয়ায় সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাবে। তাই প্রশাসনের নজরদারি বাড়াতে হবে।

আব্বাস আলী/আরএ/জেআইএম

Advertisement