নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে নগরবাসী। আর এতেই বদলাতে শুরু করেছে ঢাকার চিত্র। মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে থাকা নগরীতে কমতে শুরু করেছে যানজট। রাজধানীর অধিকাংশ সড়কে যান চলাচল কমেছে। বড় সড়ক ছাড়া অন্যত্র কোলাহল নেই বললেই চলে। কমে এসেছে নগরীর গণপরিবহন, রিকশা, সিএনজি অটোরিকশাও।
Advertisement
তবে আধিক্য রয়েছে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসের। যানজট কম থাকায় নগরবাসীর ব্যক্তিগত যান চলাচল করছে নির্বিঘ্নে। সরেজমিনে রোববার (১৯ আগস্ট) দুপুরের পর থেকে রাজধানীজুড়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
ঢাকার ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলের চিত্র ছিল গতানুগতিক। তবে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কম বলে যানজট ছিল না। সন্ধ্যার পরও মতিঝিলের যেসব রাস্তা থাকে বাস-রিকশা আর হকারদের দখলে, দুপুরের দিকে সেখানকার চিত্র ছিল কিছুটা ফাঁকা। যানবাহনের সঙ্গে কমে গেছে হকারের সংখ্যাও।
রিকশাচালক মতলব হোসেন বলেন, ‘গেরামের বাড়ি মাইমনসিং (ময়মনসিংহ)। আজই (১৯ আগস্ট) বাড়ি যাইতে চাইছিলাম। কিন্তু যাইনি। বউ-পোলাপাইন বৃহস্পতিবারই (১৬ আগস্ট) ট্রেনে বাড়ি গেছে। হেল্লাইগা টেনশন নাই। রাতে যাব। এখন যা ভাড়া মারছি তাই লাভ।’
Advertisement
মতলব বলেন, ‘মতিঝিল অফিস পাড়ায় কিছু মানুষ এখনও দেখা যাচ্ছে। অন্য জায়গায় এত মানুষ নেই। সবাই বাড়ি গ্যাছে গা।’
জানা গেছে, ঘরমুখো মানুষদের বাড়ি ফেরার হিড়িক পড়ে গেছে গত বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকেই। চাকরিজীবীরা আগেই পরিবারের সদস্যদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন।
গত কয়েক বছর থেকে রাস্তায় গাড়ির চাপ কমাতে রাজধানীর গার্মেন্টগুলোতে পর্যায়ক্রমে ছুটি দেয়া হয়। কোনো কোনো গার্মেন্ট দু’তিন দিন আগে থেকেই ছুটি দিয়ে দেয়। গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর অনুরোধে এই কাজ করা হয়।
রোববার সকালে রাজধানীর কালশী এলাকার ২৪ তলা ভবনের গার্মেন্টের সামনে দেখা যায়, গাড়ির লম্বা লাইন। রাস্তার দু’পাশে সারি সারি গাড়ি রাখা হয়েছে। আজই এই গার্মেন্টের ছুটি হবে। এজন্য গার্মেন্টের কর্মীরা নিজ উদ্যোগে এসব গাড়ি ভাগ করে এনেছেন। বিভিন্ন জেলার কর্মীরা একসঙ্গে যাবেন।
Advertisement
গার্মেন্টের সিকিউরিটি গার্ড মোকাররম আলী জাগো নিউজকে জানান, দুপুরের পর থেকে এসব গাড়ি ছেড়ে যাবে। আজ সবাইকেই বোনাস দেয়া হচ্ছে। প্রতি বছরই এই ব্যবস্থা করা হয়। মালিকপক্ষের সহযোগিতায় গার্মেন্টের কর্মীরা নিজেরা একত্রিত হয়ে এসব গাড়ি ভাড়া করে থাকে। ফলে ভাড়ার রেট একটু বেশি পড়লেও ঝামেলা নেই।
ধারণা করা হচ্ছিল, শুক্রবারের (১৭ আগস্ট) পর আর তেমন যানজট থাকবে না। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি অফিস চলমান থাকা ও রাস্তাঘাটে উন্নয়ন কাজের জন্য বেহাল অবস্থার কারণে আজ সোমবারও কিছু বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে ঘরমুখো মানুষদের। ফলে যানজট তেমন না থাকলেও গাড়ি চলছে ধীর গতিতে।
এদিকে সোমবার (২০ আগস্ট) রেল, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে নেমেছে ঘরমুখো মানুষের ঢল। রাজধানীর কমলাপুর এবং বিমানবন্দর রেলস্টেশন ঘরমুখো মানুষের ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই উঠছেন ট্রেনের ছাদে। এছাড়া প্রতিটি ট্রেনই ৩-৪ ঘণ্টা দেরিতে স্টেশন ছেড়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, মানুষের বাড়তি চাপের কারণে ট্রেন ছাড়তে বিলম্ব হচ্ছে।
ঈদে যাত্রীদের ঘরে ফেরা উপলক্ষে বাস-ট্রেন ও লঞ্চঘাটে নিরাপত্তার দায়িত্বে র্যাব-পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ফলে এখন পর্যন্ত রাজধানীর কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি।
এমএ/এমআরএম/এসআর/জেআইএম