জাতীয়

রিকশা ছেড়ে কোরবানির পশুর হাটে মান্নান

সিরাজগঞ্জের মো. আবদুল মান্নান সংসারের ঘানি টানতে বছর দুয়েক আগে পাড়ি জমান ঢাকায়। পেশা হিসেবে বেছে নেন রিকশা চালানো। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে মালিকের জমা বাদ দিয়ে প্রতিদিন তার আয় হয় গড়ে ৮০০-১০০০ টাকা।

Advertisement

ঈদের আগে বাড়তি আয়ের আশায় এই আবদুল মান্নান রিকশা ছেড়ে কোরবানির হাট থেকে পশু বহনের কাজে লেগেছেন। হাট থেকে একটি গরু ক্রেতার বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিতে নিচ্ছেন ৫০০-৭০০ টাকা। অবশ্য এ টাকার সম্পূর্ণটা তিনি একা পাচ্ছেন না। সঙ্গে থাকা একজনকেও ভাগ দিতে হচ্ছে।

টাকা ভাগাভাগি করলেও আয় কম হচ্ছে না মান্নানের। কোরবানির হাটে শনিবার প্রথমদিন এসেই মান্নান আয় করেন আড়াই হাজার টাকা। দ্বিতীয় দিন রোববার দুপুর পর্যন্ত তার আয় হয়েছে দেড় হাজার টাকার মতো। দিন শেষে এ আয় তিন হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা তার।

আফতাবনগর অস্থায়ী পশুর হাটে রোববার জাগো নিউজের সঙ্গে মান্নানের কথা হয়। মান্নান বলেন, বাড়িতে বাবা-মা ও পরিবার রয়েছে। সবাই আমার ওপর নির্ভরশীল। ঢাকায় রিকশা চালিয়ে যা আয় হয়, তা দিয়েই নিজের ও পরিবারের খরচ মেটাই। আমার পরিচিত একজন গত বছর কোরবানির হাট থেকে গরু টানার কাজ করেছিল। তার পরামর্শেই এবার আমিও এসেছি।

Advertisement

তিনি বলেন, একটি গরু যতবড়ই হোক আমরা দু’জনে মিল টেনে নিয়ে যেতে পারবো। এ জন্য হাট থেকে ক্রেতার বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিতে আমরা ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা করে নিচ্ছি। আফতাবনগর ও রামপুরার মধ্যে হলে ৬০০ টাকা দিলেই হবে। কিন্তু রামপুরার বাইরে গেলে ৭০০ টাকা নিচ্ছি। কেউ কেউ খুশি হয়ে এক হাজার টাকা করে দিয়েছেন। আজ ছয়টি গরু পেয়েছি। এ থেকে জনপ্রতি আয় হয়েছে দেড় হাজার টাকারও বেশি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে কোনোদিন এত টাকা আয় করতে পারিনি।

শুধু মান্নান নয় তার মতো অনেকেই পেশাবদল করে কোরবানির পশুর হাটে গরু টানার কাজে লেগেছেন। শুধু আফতাবনগরেই গরু টানার এমন কাজ করছেন ৫০০ জনের ওপরে। অনেক সময় কোনো ক্রেতা গরু কিনলে সেখানে গরু টানার কাজ করাদের জটলাও বেঁধে যাচ্ছে। এমনকি কাজ পেতে তাদের মধ্যে একধরনের জোরাজুরিও করতে দেখা গেছে।

এমনই একটি জটলার মধ্যে কথা হয় মো. সাবুর সঙ্গে। তিনি বলেন, এটা হাটের স্বাভাবিক ঘটনা। সবাই চায় কাজ বাগিয়ে নিতে। চুপচাপ বসে থাকলে কাজ পাওয়া যাবে না, আয়ও হবে না। প্রতিবছর কোরবানির ঈদের সময় ৩-৪ দিন আমরা বাড়তি আয়ের সুযোগ পাই। তবে জোরাজুরি করে কাজ নিলেও গরু কিন্তু আমরা যত্নসহকারেই নিয়ে যাই।

গরু টেনে কেমন আয় হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, শনিবার খুব বেশি কাজ পাইনি। এক হাজার টাকার মতো আয় হয়। আজ ভালোই কাজ পেয়েছি। সকাল থেকে সাতটি কাজ পেয়েছি। আয়ও ভলোই হয়েছে। এখনো অনেক সময় আছে। আশা করি, আজ হাজার তিনেক টাকার মতো আয় হবে। তবে সোমবার ও মঙ্গলবার সব থেকে বেশি কাজ পাওয়া যাবে বলে আমাদের ধারণা। কারণ ওই দুইদিন সব থেকে বেশি গরু বিক্রি হবে।

Advertisement

মো. জাবেন নামের আরেকজন বলেন, গত বছর কোরবানির ঈদের সময় আফতাবনগর হাট থেকে গরু টেনে ১০ হাজার টাকার মতো আয় করেছিলাম। এবারও ভালো আয় হবে এই আশায় এই হাটে এসেছি। শনিবার থেকে কাজ শুরু করেছি। শনিবার তেমন একটা কাজ পাইনি, আজ কিছু কাজ পেয়েছি। আশা করছি, সোমবার ও মঙ্গলবার ভালো কাজ পাবো। তবে কেন যেন মনে হচ্ছে আয় গতবারের মতো হবে না। কারণ এবার প্রতিযোগী কিছুটা বেশি। অনেকে জোরাজুরি করে কাজ নিয়ে যাচ্ছে।

অন্য সময় কী কাজ করেন? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ভ্যানে করে বাড্ডায় দোকান থেকে আসবাবপত্র আনা-নেয়ার কাজ করি। কখনো কখনো বাসাবাড়ি পরিবর্তনের মাল টানার কাজও করি। এখন আসবাবপত্রের কাজ কম। আর বাসাবাড়ি পরিবর্তনের তো কোনো কাজ নেই। তাই গরুর হাটে চলে এসেছি। ঈদের পর আবার আগের কাজে ফিরে যাবো।

এমএএস/জেডএ/পিআর