দেশজুড়ে

মওদুদ ‘নাটক’ করছেন : হাছান মাহমুদ

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘মওদুদ আহমদকে নোয়াখালীতে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে মর্মে- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে একটি মনগড়া অভিযোগ উপস্থাপন করেছেন রিজভী আহমেদ। প্রকৃতপক্ষে মওদুদ আহমদকে কোনোভাবেই অবরুদ্ধ করে রাখা হয়নি। তিনি নাটক করছেন।’

Advertisement

রোববার সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম নগরের দেওয়ানবাজার এলাকায় নিজ বাসভবনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন।

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মওদুদ আহমদ আগে কখনোই ঈদের পাঁচদিন-সাতদিন বা কয়েকদিন আগে গ্রামের বাড়ি যেতেন না। তিনি যতদিন ধরে রাজনীতি করছেন, ক্ষমতায় থাকাকালীন এবং গত কয়েক বছর সাধারণত ঈদের পরদিন গ্রামের বাড়ি যেতেন। গত রমজানের ঈদের আগে তিনি গ্রামের বাড়ি গেছেন। এবার কোরবানির ঈদের পাঁচদিন আগে তিনি গ্রামের বাড়ি গেছেন।’

‘গত রমজানের আগের ঈদে কোটাবিরোধী আন্দোলন হয়েছিল। সে আন্দোলনে বাতাস দিয়েছিলেন মওদুদ আহমদসহ আরও অনেকেই। সেই আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর মওদুদ আহমদ গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন এবং গ্রামে গিয়ে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল বলেও তিনি নাটক সাজিয়েছিলেন।’

Advertisement

নিরাপদ সড়কের দাবিতে কিশোর-কিশোরীদের আন্দোলনে সরকারের পূর্ণ সমর্থন ছিল এবং প্রধানমন্ত্রী সব দাবি মেনে নিয়ে তা বাস্তবায়নের কাজও শুরু করেছেন জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, সে আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য মওদুদ আহমদসহ আরও অনেকেই ২৫-৩০ বছরের যুবক-নারীদের স্কুলের ড্রেস পরিয়ে পেছনে ব্যাগ ঝুলিয়ে কোমলমতি সাজিয়ে দিয়েছেন।

‘ব্যাগের মধ্যে পাথর পাওয়া গেছে। কোনো কোনো ব্যাগে আবার চাপাতিও পাওয়া গেছে। লোহার রডও পাওয়া গেছে। মওদুদ আহমদরাই এই কাজগুলো করেছেন। তাদের সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে এই কিশোর-কিশোরীদের ঘাড়ের ওপর চড়ে বন্দুক শিকার করার যে পাঁয়তারা তারা করেছিলেন সেটি ব্যর্থ হয়েছে।’

সাবেক পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হওয়ার পর মওদুদ আহমদ আবারও নোয়াখালীতে গেছেন। আবারও অবরূদ্ধ করে রাখা হয়েছে মর্মে নাটক সাজিয়েছেন। তিনি বলেছেন- পুলিশ নাকি তাকে অবরূদ্ধ করে রেখেছে। সেখানে কিন্তু তার বাড়ির আশেপাশে কোনো পুলিশ নেই। পুলিশ যেখানে নেই, সেখানে পুলিশ কীভাবে অবরুদ্ধ করে রাখলো? আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, সেখানে কোনো পুলিশ নেই।’

মওদুদ আহমদ অনেক আগেই বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দুজনেরই আস্থা হারিয়েছেন বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগের মুখপাত্র ড. হাছান মাহমুদ।

Advertisement

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দুজনই তাকে সন্দেহের চোখে দেখেন। কিছুদিন আগে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যে, আইনজীবী প্রতিনিধিদলকে বেগম জিয়া বলে দিয়েছেন মওদুদ আহমদকে যেন মামলায় রাখা না হয়। অর্থাৎ তার ওপর বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান কারওরই আস্থা নেই। বিএনপি নেতাকর্মীরাও তাকে সন্দেহের চোখে দেখেন।

একদিকে বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য এবং অন্যদিকে দেশবাসীর মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য মওদুদ আহমদ এ ধরনের নাটক সাজাচ্ছেন বলেও দাবি করেন হাছান মাহমুদ। অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ মনগড়া এবং এটি সাজানো নাটক ছাড়া অন্য কিছু নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, তার (মওদুদ) নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি কয়েকভাগে বিভক্ত। এ কারণে তাদের মধ্যেই দলাদলি আছে। তাদের মধ্যে কোন্দল আছে। এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে ঘায়েল করার জন্য সবসময় তৎপর থাকে। তিনি সেটিকে আড়াল করার জন্য সরকারের বিরুদ্ধে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উপস্থাপন করছেন। এটি অত্যন্ত নিন্দনীয়।

‘এ ধরনের নাটক করে মওদুদ আহমদ ও বিএনপি নেতারা নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ, দ্বন্দ্ব- যেমন লুকাতে পারবেন না, একই সাথে নাটক করে খালেদা ও তারেকের কাছে হারানো আস্থা মওদুদ আহমদ ফিরে পাবেন বলেও মনে হয় না।’ যোগ করেন হাছান মাহমুদ।

আগস্ট মাস আসলেই নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয় জানিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে হত্যা করা হয়েছিল। ২১ আগস্ট বৃষ্টির মতো গ্রেনেড ছুঁড়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার অপচেষ্টা চালানো হয়েছিল। আইভী রহমানসহ ২৪ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী সেদিন মৃত্যুবরণ করেছেন। আমাদের নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শ্রবণশক্তি অনেকটা লোপ পেয়েছে এ ঘটনার প্রেক্ষিতে। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারা দেশে বোমা হামলা হয়েছিল। এবার কিশোর-কিশোরীদের ঘাড়ে চড়ে যে ষড়যন্ত্র, সেটিও এই আগস্ট মাসে।

‘ড. কামাল হোসেন সাহেবসহ একটি পক্ষ হাঙ্গামায় জড়িত ছাত্রদের মুক্তি দেয়ার জন্য খুব সরব। কিন্তু তাদের হামলায় আমাদের দলের একজন নেতার চোখ উপড়ে ফেলা হলো, ২১ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী গুরুতর আহত, সবমিলিয়ে ৫০ জন আহত, আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে হামলা হলো- সেটা নিয়ে কোনো কথা নেই।’ যোগ করেন তিনি।

‘যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধীরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পথ বেছে নিয়েছিল। জননেত্রী শেখ হাসিনাকেও তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দেশবিরোধী শক্তি, জঙ্গী-সন্ত্রাসী গোষ্ঠির মদদদাতা বিএনপি-জামায়াতসহ যারা ১/১১’র কুশীলব তারা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এজন্য তারা এখন নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।’ বলেন হাছান মাহমুদ।

তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল রিজভী আহমেদ বলেছেন, আমাদের কর্মকাণ্ডে নাকি এক/এগারোর পথ প্রশস্ত হচ্ছে। এই কথা বলার মাধ্যমে রিজভী আহমেদ প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিয়েছেন যে, তারা এক/এগারোর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত আছেন। প্রকৃতপক্ষে এই ধরনের ষড়যন্ত্র করে কোনো লাভ হবে না।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বহু ষড়যন্ত্র হয়েছে। ষড়যন্ত্র কোথায় হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে, সে সমস্ত খবর মোটামুটি সরকারের কাছে আছে।’

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী উপস্থিত ছিলেন।

আবু আজাদ/বিএ