মাদারীপুরের দুর্গম প্রত্যন্ত অঞ্চলে এক কিশোরকে কনে সাজিয়ে আরেক কিশোরের সঙ্গে সাজানো বিয়ে দেয়া হয়েছে। অভিভাবকরা বলছেন, জিন-পরীর হুমকির কারণে ছেলের জীবন বাঁচাতে তারা ওই বিয়ের আয়োজন করতে বাধ্য হয়েছেন। তবে গায়ে হলুদ, ভুরিভোজসহ নানা আয়োজন হলেও কোনো কাবিন বা বিয়ের অন্য কোনো আনুষ্ঠানিকতা হয়নি বলে পরিবারের দাবি। বিষয়টি জানাজানি হলে মাদারীপুরসহ সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি খোলাশার দাবি সুশীল সমাজের। এদিকে শনিবার দুপুরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে ওই দুই কিশোরকে আটক করেছে কালকিনি থানা পুলিশ।সরেজমিনে এলাকার একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, মাদারীপুর জেলা সদর থেকে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরের প্রত্যন্ত গ্রাম আউলিয়াপুর। সেখানকার বাসিন্দা জুয়েল সাজী। বয়স চৌদ্দ বছর। গত সাত মাস আগে তার মা নাজমা বেগম এলাকায় প্রচারণা চালান জুয়েলের সঙ্গে জীন-পরী আছে। তাদের নির্দেশে জুয়েল অসুস্থ্য মানুষের চিকিৎসা করাতে পারে। এটি প্রমাণ করতে বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনকে চিকিৎসা দেয়া শুরু করে। এতেই ক্ষান্ত হয়নি প্রতারক পরিবারটি। চমক সৃষ্টি করতে পার্শ্ববর্তী নাজমুল নামের একটি ছেলের সঙ্গে জুয়েলের বিয়ের নাটক সাজান। এখানেও বলা হয় জীন-পরীর নির্দেশের কথা। গত ৪ আগস্ট মঙ্গলবার গায়ে হলুদ থেকে শুরু করে বরযাত্রী আসা, তাদের খাওয়ানোসহ বিয়ে পড়ানো বাদ দিয়ে বিয়ের অন্যান্য সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করা হয়। জুয়েলের আত্মীয়দের সহায়তায় এসব করা হয়। সাজানো বর নাজমুলের বাবা জব্বার বেপারী জাগো নিউজকে জানান, জুয়েলের মায়ের আকুতিতে আমার ছেলেকে বর সাজিয়েছি। তার ছেলেকে না কি পরী এরকম করে বিয়ে দিতে বলেছে। এখন ঝামেলায় পড়ছি আমি। তবে আমার ছেলের সাথে কোনো মৌলিভী দিয়ে বিয়ে পড়ানো হয়নি। বাবার সঙ্গে একই কথায় সায় দেয় সাজানো বর নাজমুল হাসান।বিয়ের আয়োজন থেকেই সেটি ভিডিও করে পরে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে ঘটনাটি গণমাধ্যমের নজর কাড়ে। ভিডিওটিতে বেশ কিছু নারীর অংশগ্রহণ ও শিশুদের উল্লাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রয়া সৃষ্টি করেছে। এরপর থেকে বিভিন্ন মহল থেকে চাপ আসতে থাকে সাজানো কনে জুয়েলের পরিবারের উপর। সেই কথা স্বীকারও করলেন তার মা নাজমা বেগম। এ বিষয়ে নিজেকে দায়-মুক্ত দাবি করেন জুয়েল হোসেন।সাজানো কনের মা নাজমা বেগম জাগো নিউজকে জানান, পরীর কারণে আমি গ্রামবাসীর কাছ থেকে টাকা-পয়সা তুলে বিয়ের আয়োজন করি। কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে করিনি। শুধু জিন-পরীর কথা রাখার জন্য এটা করেছি। এখন গ্রামের মাতব্বররা আমাকে চাপ দিচ্ছেন। আমি কী করবো, আমার ছেলেকে বাঁচান।এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক কামাল উদ্দিন বিশ্বাস জাগো নিউজকে জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যদি কোনো স্বার্থান্বেষী মহল এগুলো করে থাকেন, তবে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হবে। আমি কালকিনি প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি বিয়ষটি দেখভালের জন্য।এ ব্যাপারে কালকিনি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা জাগো নিউজকে জানান, বিষয়টি জানার পর শনিবার দুপুরে ওই ছেলেদের থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। প্রাথমিক জানার পরে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদালত সমকামী বিয়ে বৈধ ঘোষণার পর এ নিয়ে সামাজিক গণমাধ্যমসহ বাংলাদেশে ব্যাপক আলোচনা হয়। তাই বিষয়টি সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে খোলাসা করার দাবি সুশীল সমাজের।এ কে এম নাসিরুল হক/এমজেড/আরআইপি
Advertisement