জাতীয়

দুই গরু ১১ লাখ

ভাদ্রের মেঘমুক্ত আকাশে গনগনে সূর্য মাথার ওপর। গরমে নগরবাসীর হাঁসফাঁস অবস্থা। অস্থির আইউব আলীও। কখনো হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন। কখনোবা পানির বালতি নিয়ে এপাশ-ওপাশ করছেন। মাঝে মাঝে তোয়ালে পানিতে ভিজিয়ে গা মুছে দিচ্ছেন। ছোট ছোট করে কাটা খড় এনে দিচ্ছেন গরু দুটির মুখের সামনে।

Advertisement

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী-চট্টগ্রাম রোডের শনির আখড়ায় গরুর হাটে শুক্রবার দুপুরে গিয়ে আইউব আলীকে তার দুটি গরু নিয়ে এভাবে অস্থির থাকতে দেখা গেছে। কেনইবা তিনি অস্থির হবেন না। তার দুটি গরুই বাজার সেরা।

গরু দুটি দেখতে ছাত্র-ছাত্রী, শিশু, তরুণ, বৃদ্ধ- সবাই ভিড় জমাচ্ছেন। কিন্তু প্রচণ্ড রোদে নিচু করে টাঙানো ছামিয়ানাও গরম হয়ে গেছে। অস্থির হয়ে গরু দুটি বসে পড়েছে, মাঝে মাঝে মুখ দিয়ে লালা পড়ছে। আইউব আলী গরুর গায়ে বাতাস লাগার জন্য ভিড় সরিয়ে দিচ্ছেন। একদলকে সরাতে না সারাতেই অন্যদল হাজির।

সেবাযত্নের পর এক পর্যায়ে গরু দুটি উঠে দাঁড়ায়। আইউব আলী জানান, মাগুরা থেকে বৃহস্পতিবার গরু দুটি নিয়ে এসেছেন তিনি। ফ্যানের নিচে থাকে রাখতে হয় তাদের। হঠাৎ অতিরিক্ত গরমে ঠিক মতো খাচ্ছে না। বসে পড়ছে। কয়েকদিন এমন গরম থাকলে যে কী হবে...। গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে ফের গরুর সেবায় লেগে যান আইউব।

Advertisement

দাম চাইছেন কত- জানতে চাইলে আইউব বলেন, ‘দুইডা ১১ লাখ ভাই।’

আগামী বুধবার (২২ আগস্ট) দেশে ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত এ উৎসবে মুসলমানরা মহান আল্লাহর নামে পশু কোরবানির মাধ্যমে তার সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করেন।

শনির আখড়ায় ওভারপাস থেকে একেবারে কাজলা পর্যন্ত এবার হাট বসেছে। হাট ঘুরে দেখা গেছে, বিপুল সংখ্যক গরু উঠেছে। তবে ক্রেতা নেই বললেই চলে। হাট কর্তৃপক্ষ ও গরু বিক্রেতারা বলছেন মূল বেচাবিক্রি হবে রবি, সোম ও মঙ্গলবার।

আব্দুর রহমান রনি ফরিদপুর থেকে ৭টি গরু নিয়ে এসেছেন। দাম চাইছেন এক লাখ ৮০ হাজার থেকে আড়াই লাখ। তিনি বলেন, হাটে ক্রেতা নেই, অনেকে এসে পরিস্থিতি দেখছেন। গরমে গরুর সমস্যা হচ্ছে। খাচ্ছে না। আর মশার কামড় তো আছেই।

Advertisement

সিরাজগঞ্জ থেকে ৫০টি গরু এনেছেন আলী আকবর। তিনটি সিন্ধি গরু দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকে কথা বলে রেখেছেন, দাম-দরও প্রায় ঠিক, তবে নেননি। ফোনে কথা হচ্ছে, যে কোন সময় নিয়ে যাবেন।’

হাটের ইজারাদার মোস্তাক আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘তিনদিনে হাটে ২০টি গরুও বিক্রি হয়নি। আশা করছি কাল থেকে বিক্রি বাড়বে।’

গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের পাশে হওয়ায় অনেকে ঈদের আগে এখানে যানজটের আশঙ্কা করছেন। শুক্রবার হাটের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়কের পাশে পায়ে হাঁটার পথ বলে কিছু নেই। মূল রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হচ্ছে মানুষকে। এছাড়া মূল সড়কে গরুর ট্রাক রেখে সেখান থেকে নামাতে দেখা গেছে।

শেষ মুহূর্তে নির্ধারিত গণ্ডি ছড়িয়ে হাট বহুদূর ছড়িয়ে পড়ে বলেও জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয় মিষ্টির দোকানের মালিক শাহরিয়ার হোসেন বলেন, দু’দিন পর হাটের আশপাশের এলাকার রাস্তাগুলো দিয়ে হাঁটা যাবে না। সব জায়গায়ই হাট বসে যাবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইজারাদার মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘আমাদের ভলান্টিয়ার, পুলিশ এখানে সার্বক্ষণিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। কোন যানজট যাতে না হয় সেই বিষয়ে আমরা সজাগ আছি। আশা করছি মানুষের ভোগান্তি হয় এমন কিছু হবে না।’

আরএমএম/এমআরএম/এমএস