খেলাধুলা

যেদিন তামিমের ব্যাটে ম্লান হয়েছিল কভেন্ট্রির বিশ্বরেকর্ড

২০০৯ সালের ১৬ই আগস্ট তারিখটা ছিলো রোববার। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল তখনো অবস্থান করছে জিম্বাবুয়েতে। পাঁচ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের তিন ম্যাচ শেষে ২-১ ব্যবধানে সাকিব আল হাসানের দল। আজ থেকে ঠিক নয় বছর আগে ১৬ই আগস্ট তারিখে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচ জিতে সমতা ফেরানোর লক্ষ্যই ছিল স্বাগতিকদের সামনে।

Advertisement

স্বাগতিকদের কাজটা আরও সহজ করে দেন তিন নম্বরে নামা চার্লস কেভিন কভেন্ট্রি। তিন নম্বরে নেমে ১৫৬ বলের অপরাজিত ইনিংসে ভাগ বসান পাকিস্তানের কিংবদন্তী সাঈদ আনোয়ারের ১২ বছরের আগের রেকর্ডে। ১৬ চার ও ৭ ছক্কার মারে করেন অপরাজিত ১৯৪ রান।

সাঈদ আনোয়ার ১৯৯৭ সালে ভারতের বিপক্ষে ১৯৪ রানের ইনিংসে আউট হয়ে যাওয়ায় ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের তালিকায় তখন সবার উপরে উঠে যায় কভেন্ট্রির ১৯৪ রানের অপরাজিত ইনিংসটি। জিম্বাবুয়ে পায় ৩১২ রানের বিশাল সংগ্রহ।

সিরিজ জিতে নিতে টাইগারদের সামনে লক্ষ্য ছিল ৩১৩ রান। সেসময় বিবেচনায় তামিম-সাকিবদের জন্য এটি ছিল পাহাড়সম রান। কেননা তখনো পর্যন্ত মাত্র তিনবার ৩০০ ছাড়াতে পেরেছিল বাংলাদেশ। আর দ্বিতীয় ইনিংসে অর্থ্যাৎ রান তাড়া করে ৩০০ করা হয়নি একবারও।

Advertisement

এমন ম্যাচের ফলাফল নিজেদের পক্ষে আনতে খেলতে হতো কভেন্ট্রির মতো অবিশ্বাস্য ইনিংস, গড়তে হত রেকর্ড। তখনকার দলে অবিশ্বাস্য সব কীর্তি গড়ার তকমা বেশ ভালোভাবেই ছিল মোহাম্মদ আশরাফুলের। কিন্তু তিনি পুরোপুরি ব্যর্থ হন সেদিন। আউট হন মাত্র ১০ রান করে।

তবে আশরাফুল না পারলেও ইতিহাস গড়ার দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে নেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাত্র তৃতীয় বছর কাটানো ২০ বছর বয়সী মারকুটে ওপেনার তামিম ইকবাল। তখন ওপেনার হিসেবে তামিম বিধ্বংসী রূপের জন্যই বিশেষ পরিচিত হলেও দলের প্রয়োজনে মাত্র ২০ বছর বয়সেই খেলেন পরিণত এক ইনিংস।

প্রথম পাওয়ার প্লে’র ১০ ওভারে জুনায়েদ সিদ্দিকীর সাথে করেন দুর্দান্ত সূচনা। ৩৮ রান করে ফেরেন জুনায়েদ। খানিকবাদে অল্পতেই বিদায় নেন আশরাফুলও। তৃতীয় উইকেটে রকিবুল হাসানকে সাথে নিয়েই মূলত ম্যাচের গতিপথ ঠিক করে দেন তামিম।

১১৭ বলের তৃতীয় উইকেট জুটিতে তামিম-রকিবুল যোগ করেন ১১৯ রান। যেখানে রকিবুলের অবদান ছিল ৫৫ বলে মাত্র ৩৫ রান। জুটির সিংহভাগ রানই আসে তামিমের ব্যাট থেকে। ৬১ বলে পঞ্চাশ করা তামিম নিজের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন ১০৫ বলে।

Advertisement

দলীয় ২১৪ রানের মাথায় রকিবুল ফিরে গেলেও দলকে জেতানোর দায়িত্ব নিয়ে খেলতে থাকেন তামিম। বন্ধু সাকিব আল হাসানকে সাথে পেয়ে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন তিনি। বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম দেড়শ রান করতে তামিম খেলেন ১৩৫ বল। অর্থ্যাৎ ১০০ থেকে ১৫০ রানে পৌঁছতে খরচ করেন মাত্র ৩০টি বল।

বাউন্ডারি নির্ভর ক্রিকেট খেলতে স্বচ্ছন্দ তামিম খেলেন পুরোপুরি পরিণত এক ইনিংস। আউট হন টাইগারদের জয়ের একদম কাছে নিয়ে। ১৩৮ বলে তামিম ১৫৪ রান করে আউট হওয়ার সময় বাংলাদেশের জিততে প্রয়োজন ৩৩ বলে ৩৪ রান। যা কিনা সহজেই করে ফেলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিমরা।

১৯১ মিনিটের দীর্ঘ ইনিংসে তামিম বাউন্ডারি হাঁকান মাত্র ১৩টি। ৭ চার ও ৬ ছক্কার মারে বাউন্ডারি থেকে ৬৪ রান। বাকি ৯০ রান তিনি নেন উইকেটের মাঝে দৌড়েই। তামিমের এই পরিণত ইনিংসে ১৩ বল হাতে রেখেই বাংলাদেশ পায় ৪ উইকেটের সহজ জয়, ম্লান হয় চার্লস কভেন্ট্রির বিশ্ব রেকর্ড গড়া ১৯৪ রানের ইনিংস।

এসএএস/আরআইপি