কৃষি ও প্রকৃতি

বদলে যাচ্ছে গাইবান্ধার ১৬৫ চরের মানুষের জীবন

গাইবান্ধার চারটি উপজেলায় নদীর বুকে জেগে ওঠা ১৬৫টি চরকে ঘিরে বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবন। চরাঞ্চলগুলো পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুললে মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। পাশাপাশি যে কোন অঞ্চলের মানুষও শহর জীবনের বাইরে গিয়ে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে। এতে আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনসহ ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে চরাঞ্চলের মানুষের। বিস্তারিত জানাচ্ছেন রওশন আলম পাপুল-

Advertisement

ব্রহ্মপুত্র নদসহ তিস্তা ও যমুনার ভাঙনের কবলে পড়ে গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার চরাঞ্চলে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় ১৬৫টি চর। এসব চরে বসবাস করে প্রায় ৪ লাখ মানুষ। তাদের একমাত্র প্রধান পেশা হচ্ছে কৃষি। কৃষির উপর নির্ভর করেই তারা খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকেন।

একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের চেয়ে ২০১৭ সালে বড় বন্যা হলেও গাইবান্ধা সদর উপজেলার কুন্দেরপাড়া, ফুলছড়ি উপজেলার বাজে তেলকুপি ও সাঘাটা উপজেলার কালুরপাড়া চরে বন্যার পানি ওঠেনি। বিভিন্ন সময়ে পূর্ব গাবগাছী, বাজে ফুলছড়ি, পোড়ারচর, কড়াইবাড়ী, পূর্ব খাটিয়ামারী, পশ্চিম দেলুয়াবাড়ীসহ কয়েকটি চরে গিয়ে দেখা যায়, মাটি ও বালুতে ধান, পাট, গম, ভুট্টা, বাদাম, কাউন, মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ হয়। এসময় দিগন্তজুড়ে মাঠের পর মাঠ সবুজ ফসলের দিকে তাকিয়ে থাকলে প্রাণটা জুড়িয়ে যায়।

প্রাকৃতিকভাবেই এক মনোরম পরিবেশের সৃষ্টি হয় ফসলের সবুজ পাতায় পাতায়। এসব চরে যদি পরিকল্পনা অনুযায়ী বিনোদন কেন্দ্র করে এগিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে আমুল পরিবর্তন হবে চরবাসীর জীবন। বিনোদনপ্রিয় মানুষের আকর্ষণ বাড়বে চরাঞ্চলের প্রতি।

Advertisement

> আরও পড়ুন- পেঁপে চাষ করে সফল তাপস

বিনোদনপ্রেমীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চরাঞ্চলের রাস্তার দুই পাশে বিভিন্ন প্রকার ফুল ও ফলের গাছ, শোভাবর্ধনকারী গাছ, ছায়াপ্রদানকারী গাছ লাগানো হলে দৃষ্টিনন্দন হবে চরগুলো। থাকতে হবে বিদ্যুতের ব্যবস্থা, বিশ্রামের জন্য ঘরসহ বসার ব্যবস্থা। তৈরি হতে পারে নারিকেল ও সুপারির বাগান। এতে বেকার যুবকদের পাশাপাশি চরের মানুষের জন্যও সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের।

পাশাপাশি নিরাপত্তার জন্য শ্যালো ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকাগুলোতে লাইফ জ্যাকেট ও নিয়মিত পুলিশের টহল নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া শিশুদের আকর্ষিত করতে চরাঞ্চলগুলোতে বিভিন্ন ধরনের খেলনা সামগ্রীর ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে বলে মনে করেন বিনোদনপ্রেমীরা। এসব সুবিধা থাকলে মানুষ চরাঞ্চলগুলোকে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে সহজেই।

শুকনো মৌসুমে পূর্ব গাবগাছীর চরে যাতায়াতের জন্য নদীর পাড়েই রয়েছে ঘোড়ার গাড়ি ও মোটরসাইকেল। হেঁটে ক্লান্ত হলে এখানকার দোকানে পাওয়া যাবে ফ্রিজের পানি। নদীর পাড় থেকে হেঁটেই সদর উপজেলার কামারজানী ইউনিয়নের কুন্দেরপাড়া চরে যাওয়া যায়। অন্যান্য চরের থেকে এ চর অপেক্ষাকৃত উঁচু।

Advertisement

বাজে ফুলছড়ি চরে রয়েছে অনেক পুরনো ঘন গাছপালার এক মনোরম দৃশ্য। এসব চরে গেলে দেখা যাবে পুরুষ ও নারীদের নিত্যদিনের কর্মযজ্ঞ। নদীর বুকে জেগে ওঠা এসব চরের বয়স ৪০ বছরের কম নয়। জীবনযাপনকে সহজ করতে এসব চরে রয়েছে দোকান, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

> আরও পড়ুন- চলনবিলের ক্ষিরা যাচ্ছে সারা দেশে

বাজে ফুলছড়ি ও পূর্ব খাটিয়ামারীর চরে গেলে দেখা মিলবে মহিষের। দক্ষিণ খাটিয়ামারী, কড়াইবাড়ী ও পূর্ব গাবগাছীসহ বিভিন্ন পুরনো চরে দেখতে পাওয়া যাবে ঘোড়া। নৌকায় করে ও নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে জেলেদের মাছ ধরা এবং ফসল মাথায় করে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দৃষ্টি কাড়বে অনেকেরই। এসব চরে যেতে কাশফুল, নদীর দু’ধারের মনোরম দৃশ্য ও নদীর ঢেউয়ের খেলা দেখলে আনন্দে মন উদ্বেলিত হবে।

পুরনো এসব চর স্থায়ীভাবে (সিসি ব্লক দ্বারা) সংরক্ষণ করা হলে মানুষ আর নদী ভাঙনের শিকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করবে না। এতে একদিকে যেমন রক্ষা পাবে চর, তেমনি বিনোদনের জন্য উদ্যোক্তারা গড়ে তুলতে পারবেন বিভিন্ন স্থাপনা। এজন্য দরকার সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা।

সন্ধানী ডোনার ক্লাবের কার্যকরী উপদেষ্টা নাহিদ হাসান চৌধুরী রিয়াদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘কুন্দেরপাড়া, বাজে তেলকুপি ও কালুরপাড়া চরসহ যেসব চরে বন্যার পানি ওঠে না; এমন চরগুলোতে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা দরকার। তাহলে একদিকে যেমন নদীর তীর সংরক্ষণ হবে; তেমনি চরের মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হবে।’

সংস্কৃতিকর্মী হাসান ইকবাল রিপন জাগো নিউজকে বলেন, ‘শহর জীবনের বাহিরে গিয়ে একটু বিনোদনের জায়গা আমিও খুঁজি। যেখানে নিরাপদে, ভালো পরিবেশে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেড়াতে যাওয়া যাবে। কিন্তু হতাশ হই এমন জায়গা না পেয়ে। তাই চরাঞ্চলগুলোকে ঘিরে যদি নিরাপদ কোন বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়, সেটা নিঃসন্দেহে খুবই ভালো হবে।’

এসইউ/জেআইএম