নিষেধাজ্ঞা কেটে গেছে, যেকোন দিন খেলতে পারবেন জাতীয় দলে। জাতীয় দলে ফেরা কঠিন হলেও যে টুর্নামেন্টের কারণে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন সেই বিপিএলে খেলার অনুমতিও মিলছে আসন্ন মৌসুম থেকে। কিন্তু জনসাধারণের মনে প্রশ্ন একটাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার মতো ফিট তো তিনি?
Advertisement
কথা হচ্ছে মোহাম্মদ আশরাফুলকে নিয়ে। বিপিএলে ম্যাচ ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ ছিলেন তিনি। ১৩ই আগস্ট (সোমবার) শেষ হয়েছে সেই নিষেধাজ্ঞা। জাতীয় দলে ফেরার লক্ষ্যে ফিটনেসের যে বাধা, সেটি এখন আর বড় কোন বিষয় নয় বলে মনে করছেন ৩৪ বছর বয়সী আশরাফুল।
বর্তমানে নিজেকে খেলার মধ্যে রাখার জন্যে ইংল্যান্ডের ঘরোয়া এক টুর্নামেন্টে খেলছেন আশরাফুল। রোববার বাংলাদেশ সময় দুপুরের পর থেকে রাত ১১ টা অবধি একটি টুর্নামেন্টে ৪০ ওভারের ম্যাচও খেলেছেন। খেলার মাঠের পারফরমেন্সও ছিল দারুণ। অল্পের জন্য শতরান হাতছাড়া হলেও ৯৪ রানের ঝকঝকে তকতকে ইনিংস বেড়িয়ে আসে তার ব্যাট থেকে। সব মিলে দারুণ ফুরফুরে মেজাজেই ছিলেন আশরাফুল।
বাংলাদেশ সময় রাত ১২টার (লন্ডনে তখন সবে সন্ধ্যা সাতটা) অল্প সময় পর ম্যাচ শেষে ফেসবুকে যোগাযোগ জাগো নিউজের সাথে। সোমবার দিবাগত রাত ১২ টার পর মানে ১৩ আগস্ট প্রথম প্রহরে জাগো নিউজের সাথে মুঠোফোন আলাপ। সেসময়ই জানালেন ফিটনেস নিয়ে আর আগের মতো চিন্তিত নন তিনি। নিজের ফিটনেসের উন্নতির লক্ষ্যে দেশে-বিদেশে ঘাম ঝরিয়েছেন প্রচুর, পরিশ্রম করেছেন নিজেকে আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তুলতে। তিনি বলেন, ‘গত এপ্রিলে প্রিমিয়ার লিগ শেষ হবার পর চার মাসে দেশে ও ইংল্যান্ডে এসে নিয়মিত জিম করে আট থেকে নয় কেজি ওজন কমিয়ে অনেকটাই হালকা ও ফিট হয়েছি।’
Advertisement
তাহলে আপনার দাবি আপনি আগের চেয়ে অনেক ফিট? আশরাফুলের দৃঢ় কন্ঠের জবাব, ‘হ্যা অবশ্যই। গত এপ্রিলে জাগো নিউজকে দেয়া একান্ত ইন্টারভিউতে বলেছিলাম, লিগে টানা তিন ম্যাচে সহ পাঁচ সেঞ্চুরির পরও দাবি করিনি আমি ফিট। বলেছিলাম, আমি এখনো পুরোপুরি ফিটনা। তৈরীও না সেভাবে। এখন বলছি সেই আমি গত চার মাসে অনেক পরিশ্রম করেছি।’
নিজের ফিটনেস ট্রেনিংয়ের ব্যাপারে ধারণা দিয়ে আশরাফুল বলেন, ‘নিয়মিত ফিজিক্যাল ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি পরিকল্পিত ও সুষম ডায়েট করে এখন আমি আগের চেয়ে অনেকটাই ফিট। তবে এই ব্যক্তিগত উদ্যোগের ট্রেনিংই শেষ কথা নয়। জাতীয় দলে ফিরতে হলে চাই ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডের ফিজিক্যাল ট্রেনিং। সেটা জাতীয় দলের সাথে দলগতভাবেই করতে হয়। সেই ট্রেনিংটাই দরকার। তবেই আবার আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার শতভাগ ফিটনেস চলে আসবে। আমি টেস্ট, ওয়ানডে আর টি টোয়েন্টি-তিন ফরম্যাটেই দেশের হয়ে খেলতে পারবো।’
জাগো নিউজের সাথে দীর্ঘ আলাপে অনেক কথার ভীড়ে আশরাফুল জানিয়েছেন তার আসল লক্ষ্য আগামী বছর বিশ্বকাপ খেলা। তার ভাষায়, ‘আমার দীর্ঘ লালিত স্বপ্ন, ইচ্ছে ও আশা আমি আগামী বছর বিশ্বকাপ খেলবো। ২০১৯ সালে বিশ্ব ক্রিকেটের সর্ববৃহৎ আসর বসবে ইংল্যান্ডে। সে চিন্তা থেকেই এখন দেশে না থেকে ইংল্যান্ডে এসেছি। তাও ঘুরতে নয়। খেলতে। নিজেকে প্রস্তুত করতে।’
‘আগামী অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় লিগ। আমার দল ঢাকা মেট্রোপলিটন। তার আগের দুই মাস আমি অনেক প্ল্যান-প্রোগ্রাম করেই আগাচ্ছি। দেশে সিনিয়র ফ্রেন্ড আশিক ভাইয়ের (সাবেক ক্রিকেটার, প্রিমিয়ার লিগের দল প্রাইম ব্যাংক সহকারি কোচ ও বাংলাদেশ নারী দলের সহকারি কোচ) সাথে এক মাসের বেশী সময় ধরে প্র্যাকটিস করেছি। তিনি ট্রেনিং করিয়েছেন। আশিক ভাই আমাকে নিয়ে একা কাজ করেছেন। তার অধীনে এক মাস দেশে ফিজিক্যাল ট্রেনিং এবং স্কিল ট্রেনিং করার পর লন্ডনে এসেছি।’
Advertisement
আশরাফুলের পাকাপোক্ত লক্ষ্য যে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ তা পরিষ্কার হয় তার পরের কথাতেই। মূলত ইংলিশ কন্ডিশনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার জন্যই ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলছেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। শুধু তাই নয় ইংল্যান্ডে সেসব ম্যাচে নিয়মিতই রানের দেখাও পেয়েছেন বলে জানান আশরাফুল।
তিনি বলেন, ‘জানি আগামী বছর ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ, তাই ঐ কন্ডিশনে এক থেকে দেড় মাস ট্রেনিং করছি, টুর্নামেন্ট খেলছি। এখানে আমি একটি ৪০ ও ২০ ওভারের টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছি। টি টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত একটি ম্যাচে শুন্য রানে আউট হওয়া ছাড়া বাকি খেলায় (৯৭, ৭৬* ও ৪৪) রান পেয়েছি। আর ৪০ ওভারের ওয়ানডে টুর্নামেন্টে আজকে ছয় রানের জন্য সেঞ্চুরি করতে না পারলেও আরেক ম্যাচে একটি শতরানও (১৭০*) করেছি।’
এআরবি/এসএএস/আরআইপি