জাতীয়

বাংলাদেশে ফেসবুকের অ্যাডমিনিস্ট্রেটর চায় পুলিশ

>> কয়েকশ অনলাইন পোস্টদাতা শনাক্ত>> ফেসবুকের কার্যক্রম জেলাপর্যায়ে মনিটরিং >> বিদেশে থেকেও আইনের বিঘ্ন ঘটালে ব্যবস্থা>> বঙ্গবন্ধুর পলাতক ২ খুনির অবস্থান শনাক্ত

Advertisement

ফেসবুকে ছড়ানো গুজব ঠেকাতে প্রয়োজনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির বাংলাদেশে একজন অ্যাডমিনিস্ট্রেটর রাখার অনুরোধ করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।

সোমবার পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।

আইজিপি বলেন, আমরা ফেসবুকের সঙ্গে একাধিকবার বসেছি। বাংলাদেশে তাদের একজন অ্যাডমিনিস্ট্রেটর রাখার অনুরোধ করেছিলাম। সম্প্রতি আবারও অনুরোধ করেছি।

Advertisement

আরও পড়ুন >> সাংবাদিকদের ওপর হামলা : পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তদন্ত হচ্ছে

তিনি বলেন, ‘গত ২৯ জুলাই সড়ক দুর্ঘটনায় দুই স্কুল শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্র-ছাত্রীরা রাস্তায় নেমে আসেন। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের প্রতিবাদ ছিল যুক্তিযুক্ত। তারা মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন, আমরাও তাদের সহায়তা করেছি। পরবর্তীতে অনুপ্রবেশকারীরা হীন উদ্দেশ্যে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে গুজব ছড়িয়ে আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে।’

‘৬-৭ আগস্ট থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ কঠোর হয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক ভালো কাজ হয়, কিন্তু সবচেয়ে বেশি হয় গুজব ছড়ানো। বিভ্রান্তিকর পোস্ট দিয়ে গুজব ছড়ানো কয়েকশ অনলাইন পোস্টদাতাকে আমরা শনাক্ত করেছি। ইতোমধ্যে ২১টি মামলা হয়েছে, সবাইকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। গুজব ছড়ানো কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। পুলিশ কাউকে হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে দেবে না।’

তিনি বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো এসব গুজবের বিরুদ্ধে পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ইউনিটের সমন্বয়ে সদর দফতরে একটি শক্তিশালী সাইবার মনিটরিং ইউনিট গঠন করা হয়েছে। যাদের মাধ্যমে নিয়মিত সাইবার পেট্রোলিং করা হবে। এর মাধ্যমে প্রতিটি জেলাপর্যায়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কার্যক্রমগুলো মনিটরিং করা হবে।’

Advertisement

আইজিপি এ সময় সবাইকে গুজবের ফাঁদে পা না দিয়ে শান্তিপূর্ণ দেশকে অশান্ত না করার আহ্বান জানান।

‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নাশকতা গোয়েন্দা ব্যর্থতা কিনা’- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটাকে আমি গোয়েন্দাদের ব্যর্থতা বলে মনে করছি না। গোয়েন্দারা কাজ করছেন বলেই অনেককে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।’

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হেলমেট পরে লাঠিসোটা ও চাপাতি নিয়ে কারা পুলিশকে সাহায্য করেছিল’- এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, ‘আইন রক্ষার দায়িত্ব পুলিশের। আমরা আমাদের সাহায্য করার কথা কাউকে বলিনি। আমরা কাউকে আহ্বান জানাইনি। আমাদের পরিপূরক হচ্ছে জনগণ। আমরা চাই জনগণ সবসময় আমাদের পাশে থাকুক।’

‘দেশের বাইরে বসে অনেকে রাষ্ট্র ও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালান। তাদের একজন সেফাতুল্লাহ। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে কিনা’- জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, ‘এ ধরনের কাজ যারা করছে তারা বিদেশ থাকুক আর যেখানেই থাকুক, আইনের বিঘ্ন ঘটালে ব্যবস্থা নেয়া হবেই। ইতোমধ্যে এ ধরনের অপরাধে কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ ধরনের অপরাধীরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক দেশের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পলাতকদের মধ্যে দুজনের অবস্থানের তথ্য আমাদের কাছে আছে। তাদের একজন যুক্তরাষ্ট্র এবং আরেকজন কানাডায় আছেন। আমরা তাদের ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীসহ সরকারি পর্যায়ে এ বিষয়ে যোগাযোগ অব্যাহত আছে।‘

গত ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কের এমইএস এলাকায় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসের চাপায় নিহত হন রমিজ উদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজীব।

ওই ঘটনার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। শিক্ষার্থীদের অন্যতম দাবি ছিল, সড়কে মৃত্যুর জন্য দায়ী বেপরোয়া চালকদের মৃত্যুদণ্ডের আইন করা। আন্দোলনের মুখে সরকার দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা সড়ক নিরাপত্তা আইনের যে খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করে সেখানে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর জন্য সর্বোচ্চ সাজা তিন বছর থেকে বাড়িয়ে পাঁচ বছর করা হয়। তবে তদন্তে ‘ইচ্ছাকৃত হত্যা’ প্রমাণিত হলে গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলা করার কথা উল্লেখ করা হয়।

ওই সময় শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবিতে নয় দফা দাবি পেশ করেন। দাবিগুলো মেনে নিয়ে সরকার নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেয়।

এআর/এমএআর/জেআইএম