এবার বিজেপির বিরুদ্ধে নতুন স্লোগান দিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেও এমনটা হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ থেকে তেমন রাজনৈতিক সুফল মিলবে না এমনটা আগাম বুঝতে পেরেই ২০১৪ সালে খুব বেশি সময় পশ্চিমবঙ্গে ব্যয় করেননি বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী।
Advertisement
গুটিকয়েক সভা করেছিলেন। তারই মধ্যে হুগলির শ্রীরামপুরের সভা থেকে মোদি বলেছিলেন, কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশিদের তাড়ানো হবে। বাক্স-প্যাঁটরা গুছিয়ে রাখতেও বলেছিলেন তিনি।
অনুপ্রবেশকারী তাড়ানোর সেই হুঁশিয়ারিকে রাতারাতি ইস্যু বানিয়ে ফেলে তৃণমূল কংগ্রেস। পাল্টা প্রচার শুরু হয়ে যায় যে, পূর্ববঙ্গ থেকে আগত ‘বাঙাল’দের দেশ থেকে তাড়াতে চায় বিজেপি। বড় মঞ্চ থেকে তো বটেই পূর্ববঙ্গ থেকে আগত মানুষের সংখ্যা যেখানে বেশি সেখানে প্রচারের অভিমুখটাই বদলে যায়। বলা হয় বিজেপি এলে তাদের সবাইকে বাংলাদেশে ফিরে যেতে হবে।
সেই অস্ত্র কাজে দিয়েছিল অনেকটাই। এবার লোকসভা ভোটের আগে সেই অস্ত্র নতুন করে কাজে লাগাতে চাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপি যতই পুরনো দিনের কথা মনে করাতে চাক না কেন রাজনীতি সব সময়ই বর্তমানের ওপর নির্ভর। ২০০৫ সালের অাগস্ট আর ২০১৮ সালের অাগস্ট মাসের মধ্যে ১৩ বছরের তফাত।
Advertisement
সেবার অাগস্টে লোকসভায় রাজ্য থেকে অনুপ্রবেশকারী হঠানোর দাবি নিয়ে সরব হয়েছিলেন মমতা। স্পিকারের চেয়ারের দিকে নথিপত্র ছুড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা অতীত। আজকের মমতা মানবাধিকারের প্রশ্নে নাগরিক পঞ্জির বিরুদ্ধে। তার বিশাল সংগঠন এই বর্তমানের প্রচারটাই করবে এবং করছে। সেখানে বিজেপির কর্মীবল অনেক অনেক পিছিয়ে।
তাই কলোনি এলাকায় মমতার অতীতের নীতি কিংবা অমিত শাহর শিখিয়ে দেওয়া শরণার্থী ও অনুপ্রবেশকারীর মধ্যে পার্থক্য বোঝানোর মতো তৃণমূল স্তরের সংগঠন নেই দিলীপ ঘোষদের।
আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে তাই এই নাগরিক পঞ্জি ইস্যুকেই মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চায় তৃণমূল কংগ্রেস। এখন রাজ্য জুড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের উদ্যোগে চলছে সেই প্রচার। রক্তদান উৎসবেও ‘রক্তদান-মহৎদান’ নিয়ে দেড় মিনিট বলার পরেই নেতারা চলে যাচ্ছেন এনআরসি প্রসঙ্গে। আর তাতে স্পষ্ট ভয় দেখানো হিন্দু-মুসলমানের মতো বাঙাল-ঘটি বিভাজনও চাইছে বিজেপি।
দেশভাগের পরে কিংবা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যে সব হিন্দু পরিবার শরণার্থী হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন তারা নিজেদের সংখ্যালঘু মনে করত। সেই মনোভাব এখনও অনেক জায়গাতেই রয়েছে। আর তাই শরণার্থীদের আশ্রয় নেওয়া কলোনি এলাকা ছাড়াও শহরে শহরে রয়েছে ‘বাঙাল পাড়া’।
Advertisement
সংখ্যালঘু মানসিকতা থেকেই এই সঙ্ঘবদ্ধ থাকার প্রবণতা। সুতরাং ‘মা-মাটি-বাঙাল’ স্লোগান ব্যবহারের জন্য এলাকাও নির্দিষ্ট রয়েছে রাজ্যে। আর প্রকাশ্যে না হলেও এখনও সামাজিক ভাবে ‘ঘটি-বাঙাল’ বিভাজন রয়েছে।
নতুন ভোটারদের বড় অংশেরই দেশভাগের স্মৃতি নেই। তবে বড়দের মুখে গল্প শোনা ভয়ঙ্কর কষ্টের ছবি রয়েছে মনে। পদ্মার দেশের মানুষের উত্তর প্রজন্মের মনে থাকা সেই ভয়ের ছবিটাকে একটু জীবন্ত করে তুলতে পারলেই নরেন্দ্র মোদির রথের চাকা গঙ্গার বঙ্গে থমকে যেতে পারে। এমনই ভাবনা তৃণমূলের।
এখন তো সবে শুরু। ভোট যত এগোবে তত নতুন এক ‘ভোট-অঙ্ক’ তৈরি হবে রাজ্যে। হিসেব কষতে হবে কারা কাকে নিজেদের দলের বলে বেছে নেবে।
টিটিএন/জেআইএম