আইন-আদালত

ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে যেসব যোগ্যতা দেখে বিআরটিএ

ড্রাইভিং লাইসেন্স কোন যোগ্যতার ভিত্তিতে দেয়া হয়? তা জানতে চেয়ে আদালতের আদেশের পর প্রতিবেদন দাখিল করেছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। ওই প্রতিবেদনে যে ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু বা নবায়ন করা হয় তা উল্লেখ করা হয়েছে।

Advertisement

রোববার প্রতিবেদন দাখিলের পর হাইকোর্টের বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ৭ অক্টোবর দিন ঠিক করেন। আদালতে এদিন জাবালে নূর পরিবহনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী পঙ্কজ কুমার কুণ্ডু। বিআরটিএ’র পক্ষে ছিলেন রফিকুল ইসলাম। অন্যদিকে, রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আবেদনকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

প্রতিবেদনের একটি অংশে (অ্যানেক্সার-১১) বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি হতে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট চালানোর পেশাদার ড্রাইডিং লাইসেন্স ইসু/নবায়নের ক্ষেত্রে যোগ্যতা/শর্তের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

 

নতুন ইস্যুর ক্ষেত্রে যেসব যোগ্যতার কথা বলা হয়েছে সেগুলো হলো-

Advertisement

১. বাংলা অথবা ইংরেজি লিখতে ও বলতে পাড়া ২. প্রার্থীর বয়স ২০ বছর হওয়া, ৩. রেজিস্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক স্বাস্থ্য পরীক্ষার উপযুক্ততার মানদণ্ডে উত্তীর্ণপূর্বক শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহণ করা।

৪. শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ কমপক্ষে ২ (দুই) মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর ড্রাইভিং কম্পিটেন্সি টেস্ট বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা, ৫. ড্রাইভিং কম্পিটেন্সি টেস্ট বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত পরীক্ষায় লিখিত, মৌখিক এবং ব্যবহারিক পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়া,৬.আবেদনকারীর স্থায়ী ঠিকানার পুলিশ যাচাই প্রতিবেদন সঠিক হওয়া।

৭. রেজিস্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক প্রদত্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষার উপযুক্ত মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হওয়া, ৮.কমপক্ষে তিন বছর হালকা বা মধ্যম শ্রেণির মেটোরযান চালানোর অভিজ্ঞতা না থাকলে কোনো আবেদনকারী মধ্যম বা ভারী (যে ক্ষেত্রে যেটা প্রযোজ্য) মোটরযান চালানোর ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন না।

তবে, শর্ত থাকে যে উপযুক্ত বলে বিবেচিত কোনো শ্রেণির লোকজনকে সরকার এই বিধির কার্যকারিতা থেকে অব্যাহতি প্রদান করতে পারবে।

Advertisement

৯. কমপক্ষে তিন বছর হালকা বা মধ্যম শ্ৰেণির মোটরযান চালানোর অভিজ্ঞতা থাকাসাপেক্ষে আবেদনকারী মধ্যম বা ভারী (যে ক্ষেত্রে যেটা প্রযোজ্য) মোটরযান চালানোর ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে পূর্বানুরূপে সংশ্লিষ্ট শ্রেণির শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহণ করা এবং এর মেয়াদ কমপক্ষে ২ মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর ড্রাইভিং কমপিটেন্সি টেস্ট বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়া।

১০. পরিবহন যানের চালকদের আঞ্চলিক পরিবহন কমিটি (আরটিসি) হতে ইস্যুকৃত পাবলিক সার্ভিস ভেহিকল অথরাইজেশন (পিএসভি) প্রাপ্ত হওয়া।

নবায়ন

১. মোটরযান পরিদর্শক কর্তৃক পরিচালিত ফিল্ড টেস্ট এ কৃতকার্য হওয়া।

২. প্রার্থীদের রেজিস্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক প্রদত্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষায় (উপযুক্ততার মানদণ্ডে) উত্তীর্ণ হওয়া।

ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল সাংবিাদিকদের বলেন, বিআরটিএ’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-জাবালে নূর পরিবহন শহীদ রমিজউদ্দিন কলেজের নিহত দুই শিক্ষার্থীর পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা করে দেবে। এ জন্য তারা সময় চেয়েছিল। কিন্তু আদালত সময় দেয়নি। এদিকে চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স কোন যোগ্যতার ভিত্তি দেয়া হয় এবং সড়কে চলাচলকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিআরটিএ’র নেয়া পদক্ষেপের প্রতিবেদন নিয়ে শুনানির জন্য ৭ অক্টোবর দিন ঠিক করেছেন আদালত।

গত ৩০ জুলাই এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই দুই শিক্ষার্থীর পরিবারকে আপাতত ৫ লাখ টাকা করে দেয়ার নির্দেশ দিয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স কোন যোগ্যতার ভিত্তি দেয়া হয় এবং সড়কে চলাচলকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিআরটিএ কী পদক্ষেপ নিয়েছে সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে বিআরটিএ’কে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত ।

ঢাকায় কুর্মিটোলার এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় জাবালে নূর পরিবহনের দায় নির্ধারণে তদন্ত প্রতিবেদন দুই মাসের মধ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালকের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এতে সহায়তা করবে পুলিশ ও বিআরটিএ।

উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে এমইএস বাসস্ট্যান্ডে জাবালে নূর পরিবহনের দুই বাসের চালকের রেষারেষিতে এক বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। আহত হয় আরও ১০-১৫ শিক্ষার্থী। ঘটনার দিনই নিহত দিয়া খানম মিমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন। মামলা নং ৩৩ (৭) ১৮।

জাবালে নূর বাসের মালিক শাহাদাত হোসেন বর্তমানে রিমান্ডে আছেন। এ ছাড়া জাবালে নূর পরিবহনের অপর দুই বাসের চালক সোহাগ আলী ও জুবায়ের এবং হেলপার এনায়েত হোসেন ও রিপন রিমান্ডে আছেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন।তদন্ত করছেন গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক কাজী শরিফুল ইসলাম।

এই দুর্ঘটনার দিন থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করে কলেজটির শিক্ষার্থীরা। এরপর ৯ দফা দাবিতে টানা নয়দিন রাজপথে আন্দোলনে ছিল দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী। গত শনি ও রোববার তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা চালানো হয়। এই আন্দোলনের সংবাদ ও ছবি সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হন অন্তত ২০ জন সাংবাদিক। ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সহিংসতায় ১৬টি থানায় মোট ২৯টি মামলা করা হয়েছে।

এফএইচ/জেডএ