রাজনীতি

কেমন আছেন তরিকুল ইসলাম?

বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এম তরিকুল ইসলামের একটি রুগ্ন চেহারার ছবি কদিন ধরে ফেসবুকে অনেকের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। কিন্তু তার এই ছবির সঙ্গে নিকট অতীতের তরিকুলের চেহারা মেলানো যেন দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত প্রায় ছয় মাস ধরে তিনি নেই কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে।

Advertisement

সর্বশেষ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার দুদিন আগে গুলশানে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠকে অংশ নেন তিনি। অসুস্থতার কারণে সেদিনও তাকে অন্যের কাঁধের ওপর ভর করে বৈঠকে অংশ নিতে দেখা যায়।

                                          সুস্থ অবস্থায় তরিকুল ইসলাম

দীর্ঘদিন ধরে কিডনি, ডায়াবেটিস, হার্ট, শ্বাসকষ্টসহ বার্ধ্যকজনিত নানা রোগে ভুগছেন দেশের বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ। প্রায় এক বছর যাবৎ নিয়মিত তার কিডনি ডায়ালাইসিস করাতে হচ্ছে। চিকিৎসকদের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্যে গত মার্চে সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হসপিটাল থেকে চিকিৎসা করানো হলেও রাজনীতির পরিমণ্ডলে এখনও ফিরতে পারেননি তিনি। পারিবারিক ও রাজনীতিক ঘনিষ্ঠ মানুষজন নিয়মিত তার খোঁজ-খবর রাখতে পারলেও এর বাইরে যারা রয়েছেন তারা গণমাধ্যমকর্মীদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। প্রশ্ন রাখছেন কেমন আছেন তরিকুল ইসলাম?

Advertisement

এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে এ প্রতিবেদকের কথা হয় তরিকুল ইসলামের ছোট ছেলে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের সঙ্গে।

রোববার জাগো নিউজকে অমিত বলেন, ‘শারীরিকভাবে উনি (তরিকুল) খুব দুর্বল, ওনার জন্য মুভমেন্ট করা খুব কঠিন। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসকদের সঙ্গে আমরা কমিউনিকেট করেছি। ওনারা একটি সিটিস্ক্যান করানোর কথা বলেছেন। এই সপ্তাহের মধ্যে আমরা সিটিস্ক্যানটা করাবো। ওই রিপোর্ট সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদের কাছে পাঠাবো। তারপর ওনারা সিদ্ধান্ত দেবেন ওনাকে সিঙ্গাপুর নেয়া লাগবে কি লাগবে না।’

অমিত আরও বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিভিন্নভাবে নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখছেন। আমাদের মাননীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কয়েকবার করে বাসায় এসে দেখা করে গেছেন। জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্তত ৫-৭ সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যানসহ সিনিয়র নেতারা, যারা ওনারা কলিগ (সহকর্মী) তারা নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখেন। যারা আসতে পারেন না তারা অনেক সময় ফোনে কথা বলেন, খোঁজ-খবর রাখেন।’

তরিকুল ইসলামের ছেলে এবং বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রজ্ঞাবান এই নেতা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় না থাকলেও তাকে মূল্যায়নে নেতাকর্মী, বন্ধু-বান্ধব শুভানুধ্যায়ীদের ঘাটতি নেই।

Advertisement

                          তাকে আর এভাবে রাজনৈতিক মঞ্চে দেখা যায় না

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘তরিকুল ভাই অসুস্থ। ওনার শারীরিক অবস্থা মাঝামাঝি বলা যায়, উনি সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে যেতে পারছেন না। আমরা নিয়মিত তার খোঁজ-খবর রাখি। দলের পক্ষ থেকে ও তার বন্ধু-বান্ধবরা নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখেন। তবে বলা যায় তিনি চিকিৎসাধীন।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ বলেন, ‘আমি নিয়মিত তার খোঁজ-খবর রাখি।’

যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ, আমরা নিয়মিত তার খোঁজ নিচ্ছি।’

খুলনা বিভাগের বাসিন্দা কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নেতৃত্ব প্রত্যাশী আলমগীর হাসান সোহান, আসাদুজ্জামান আসাদ, আতিক আল হাসান মিন্টুও জানান তারা নিয়মিত তরিকুল ইসলামের শারীরিক অবস্থা এবং তার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন।

মিন্টু বলেন, ‘ ফেসবুকে একটা ছবি দেখতে পেয়েছি তার। একেবারেরই জীর্ণশীর্ণ অবস্থা।’

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক জমিয়তে উলাময়ে ইসলামের সভাপতি মুফতী ওয়াক্কাস বলেন, ‘সপ্তাহ খানেক আগে তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হিসেবেই জানি, এরপরে আর জানি না।’

বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় তথ্য এবং পরিবেশ ও বনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এম তরিকুল ইসলাম। স্ত্রী অধ্যাপক নার্গিস বেগম, বড় ছেলে শান্তনু ইসলাম সুমিত ও ছোট ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত নিয়মিত তার দেখভাল করছেন। বর্তমানে তিনি রাজধানীর শান্তিনগরে তার নিজ ফ্ল্যাটে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে রয়েছেন।

কেএইচ/জেডএ