ঢাকার বনানীর একটি সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠানের মালিক জামাল উদ্দিন আহমেদ ছোটকাল হতেই তার শখ ছিল দেশীয় আবহাওয়ায় আরব অঞ্চলের প্রাণি পালন করবেন। যেমর চিন্তা তেমনই কাজ। ২০১৪ সালে মাত্র ২৬টি দুম্বা নিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের বরকুল গ্রামের ৩ বিঘা জমির ওপর বহুতল ভবন নির্মাণ করে সেভ মিট নামে একটি খামার চালু করেছেন জামাল উদ্দিন। শুরুতে ২৬টি প্রাণির মধ্যে ২০টি মারা যায়। তবে তিনি দমে যাননি। যেখানেই শেষ সেখান থেকেই আবার শুরু করেন। সাধনা অনেকটা অসাধ্যকে সাধন করে। সেই সঙ্গে আমাদের দেশীয় আবহাওয়ায় মরুর বিভিন্ন জাতের প্রাণি পালনের অপার সম্ভাবনা জানান দিচ্ছেন তিনি।
Advertisement
গত কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশীয় আবহাওয়ার অপ্রত্যাশিত তারতম্যের কারণে বারবার তাকে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হয়েছে। বিভিন্ন প্রাণির জন্ম মৃত্যুর মধ্য দিয়ে কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি দেখতে পান সফলতা। বর্তমানে খামারে সাড়ে তিনশ মরু অঞ্চলের দুম্বা, গাড়ল ও বিভিন্ন উন্নত প্রজাতির ছাগল রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরেই তার খামার থেকে দুম্বা, গাড়লসহ বিভিন্ন জাতের প্রাণি বিক্রি করা সম্ভব হবে।
জামাল উদ্দিন আহমেদের খামারে ৭ জন শ্রমিক কাজ করেন। কাজের প্রয়োজনে ঢাকায় অবস্থান করলেও মন পড়ে থাকে তার খামারে। কিছুক্ষণ পরপর মুঠেফোনেই প্রাণিগুলোর পরিচর্যার খবর নেন। তবে ছুটি পেলেই ছুটে যান খামারে। এসব প্রাণির প্রাকৃতিক খাবার ঘাসের জন্য তিনি লিজ নিয়েছেন আশেপাশের কৃষকের কয়েক একর জমি। উৎপাদিত ঘাসের সঙ্গে সঙ্গে খড়, ভূসিও রয়েছে মরুর প্রাণিদের খাদ্যের তালিকায়। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখেন উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার সঙ্গে।
জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, তার এ উদ্যোগকে প্রথমে কেউ ভালোভাবে নেয়নি। সবার কাছে ছিল এটা এক প্রকার পাগলামী। কিন্তু তার নিজের প্রতি অবিচল আস্থা থাকায় তিনি লক্ষ্যচ্যুত হননি। এটাই ছিল তার প্রথম সফলতা। তিনি এ মরুর প্রাণি পালনে প্রথম দিকে বেশ বিপদে পড়েছিলেন। অবশেষে এই প্রাণিগুলোর তৃতীয় প্রজন্মে এসে বেশ ভালোই সফলতা পান। এবার তার খুশি যেন আর ধরে না। বর্তমানে তার খামারে ৩শ বেশি মরু প্রাণি রয়েছে।
Advertisement
তিনি আরও জানান, আমাদের দেশীয় আবহাওয়ায় এই প্রাণিগুলোর নিয়মিত বাচ্চাদানসহ স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এই প্রাণি পালনে পৃষ্টপোষকতা পেলে অনেকেই মরুর প্রাণি পালনে আগ্রহী হবে। যা দেশের মাংসের চাহিদা পূরন করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখতে পারবে।
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল জলিল জানান, আমরা সেইফ মিট খামারের লোকজনদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের এ সব প্রাণিগুলোর খাবার ও স্বাস্থ্যগত ব্যবস্থার নজরদারী করে থাকি। অল্পকয়েক বছরেই এই মরু অঞ্চলের প্রাণীগুলো পালণে ব্যাপক সফলতা এসেছে। দেশীয় আবহাওয়ায় এসব প্রাণী পালণের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
শিহাব খান/আরএ/পিআর
Advertisement