দেশজুড়ে

সমস্যায় জর্জরিত তাড়াশের আশ্রয়ন ও আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দারা

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার ৪টি আশ্রয়ন ও ৩টি আবাসন প্রকল্পে বসবাসকারী ৪৪৫ পরিবার। তবে জরাজীর্ণ ঘরে পলিথিন ও পাটের চট দিয়ে কোনোমতে চলছে বসবাস। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন সুবিধাসহ নানা প্রতিকূলতায় চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। দীর্ঘদিন মেরামত না করায় সবগুলো ঘরের টিনের চাল ও বেড়া ছোট বড় অসংখ্য ছিদ্রের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিটি ঘরের দরজা, জানালা, খুটি ভেঙে গেছে।

Advertisement

এ ছাড়া নিকটবর্তী বিদ্যালয় না থাকায় শিক্ষা লাভের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এখানকার শিশুরা। টয়লেটগুলো ভেঙে গেছে। নলকুপগুলোও প্রায় সব নষ্ট। বেশ খানিকটা হেঁটে অন্য পাড়া থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয়। নারী ও শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বসবাসের অনুপযোগী আশ্রয়ন ও আবাসন প্রকল্প ছেড়ে অনেকেই আগের ঠিকানায় চলে গেছেন।

দেশীগ্রাম ইউনিয়নের বড় মাঝদক্ষিণা আশ্রয়ন প্রকল্প, কুমাল্লু আশ্রয়ন প্রকল্প, বারুহাস ইউনিয়নের বস্তুল আশ্রয়ন প্রকল্প ১ ও ২, বস্তুল আবাসন প্রকল্প, মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়নের মাগুড়া আবাসন প্রকল্প ১ ও ২ সরেজমিনে দেখা যায়, আবাসন প্রকল্পে বেশির ভাগ ঘরের চালের ওপর ও নিচে পলিথিন দিয়ে রাখা হয়েছে। আর যাদের পলিথিন কেনার সামর্থ নেই, তারা চালের ছিদ্র দিয়ে পড়া বৃষ্টির পানি হাঁড়ি-পাতিল দিয়ে ঘর রক্ষার কাজ চালিয়ে নিচ্ছে। চলাচলের জন্য নেই উপযুক্ত রাস্তা। কেন্দ্রগুলোতে ছেলে-মেয়েদের জন্য স্কুল, বিনোদন কেন্দ্র বা খেলাধুলার ব্যবস্থা নেই। রয়ে গেছে নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানাসহ বিভিন্ন সমস্যা তো আছেই।

আশ্রয়ন ও আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা নূর মোহাম্মাদ, রেবেকা খাতুন, চান মিঞাসহ অনেকেই জানান, বৃষ্টি ও বৈরি আবহাওয়ায় তাদের সীমাহীন কষ্ট হয়। সামান্য বৃষ্টিতেই চাল ও বেড়ার ছিদ্র দিয়ে ঘরের মধ্যে পানি পড়ে। সেই পানিতে ঘরে থাকা শুকনো খাবারসহ কাপড়-চোপড়ও ভিজে যায়।

Advertisement

ভুক্তভোগীরা আরও জানান, প্রকল্পের আওতায় ঘর বরাদ্দের সময় প্রত্যেক বসতি পরিবারকে ২৫ ডিসি করে জায়গা রেজিস্ট্রি করে দেয় সরকার। ওই সময় কিছু লোক নিজেদের বাড়ি জমি থাকার পরেও এটুকো সম্পদের লোভ সামলাতে না পেরে তথ্য গোপন করে আশ্রয়ন কেন্দ্রে ঘর বরাদ্দ নেয়। অনেকে আছেন যারা কিনা একটি দিনও পরিবার নিয়ে আশ্রয়ন কেন্দ্রে বসতি গড়েননি। অথচ তাদের নামেই ঘরগুলো রয়ে গেছে বছরের পর বছর ধরে।

দেশীগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস, বারুহাস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোক্তার হোসেন ও মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুল ইসলাম বুলবুল জানান, আশ্রয়ন ও আবাসন প্রকল্পের কোনো ঘরই বসবাসের উপযুক্ত নয়। জরাজীর্ণ ঘরগুলোর দ্রুত মেরামতের প্রয়োজন। এ বিষয়ে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম ফেরদৌস ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে আশ্রয়ন ও আবাসন প্রকল্পে বসবাসরত মানুষের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে প্রকল্প প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবনা পাশ হলেই কাজ শুরু হবে।

ইউসুফ দেওয়ান রাজু/আরএ/পিআর

Advertisement