জাতীয়

শেষ দিনেও দীর্ঘ লাইন, বিক্রি হচ্ছে সিরিয়ালও

রোববার সকাল ৮টা থেকে কমলাপুর রেল স্টেশনে ২৬টি কাউন্টারে পঞ্চম দিনের মতো বিক্রি হচ্ছে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট। আজ দেয়া হচ্ছে ২১ আগস্টের টিকিট। এই দিনের টিকিট পেতে শনিবার রাত থেকেই লাইনে দাঁড়িয়েছেন অনেকেই। সকাল হতে হতে এই লাইন আরও লম্বা হয়ে বাইরের রাস্তার দিকে চলে যায়।

Advertisement

শনিবার রাত ৮টার দিক থেকে মূলত টিকিটের লাইনে মানুষ এসে সিরিয়াল দিয়েছেন। টিকিটের জন্য সারা রাত অপেক্ষার পর যখন সকাল ৮টায় টিকিট বিক্রি শুরু হলো, তখন প্রতিটা কাউন্টারের সামনেই মানুষের দীর্ঘ সারি। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনগুলোর কাউন্টারের সামনে টিকিট প্রত্যাশীদের ভিড় বেশি।

লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন হাসিবুর রহমান নামে একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। ঈদের আগের দিন রংপুর যাবেন তিনি। এসেছেন রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কাটতে। কিন্তু তিনি যখন এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন তখন প্রায় সকাল ৮টা বাজে। আর ততক্ষণে উত্তরবঙ্গগামী কাউন্টারগুলোর সামনে মানুষ আর মানুষ। টিকিট প্রত্যাশীদের লাইন কাউন্টারের সামনে থেকে বাইরের রাস্তায় গিয়ে ঠেকেছে। তিনি তখন সেই লাইনেরই পেছনের দিকে। তার সামনে মানুষের যে ভিড় তাতে করে টিকিট আর পাবেন না ভেবেই নিয়েছিলেন।

এমন সময় তার মনে ফের আশা জাগালো মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি। তার কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন, ‘সামনের দিকে সিরিয়াল পাইয়ে দেব,বিনিময়ে লাগবে ৩০০ টাকা।’ সহজেই রাজি হয়ে গেলেন তিনি।

Advertisement

হাসিবুর রহমান বলেন, আমি সেই ব্যক্তিকে ৩০০ টাকা দিলে উনি আমাকে নিয়ে এসে প্রায় ৪০/৫০ জনের পেছনে সিরিয়াল করে দিলেন। সেই সিরিয়ালে আগে থেকেই একজন ছিন্নমূল ধরনের মানুষ দাঁড়ানো ছিল। আমি আগের লোকটির সঙ্গে সেখানে আসা মাত্রই ওই ছিন্নমূল লোকটি কৌশলে সরে গিয়ে আমাকে দাঁড়াতে বললো। তিনি কৌশলে বললেন, ও ভাই এসেছেন,তাহলে দাঁড়ান আপনি আমি পরে আসছি।

সিরিয়াল বিক্রির অভিযোগ জানিয়ে টিকিট প্রত্যাশী নাইমুল ইসলাম নামের আরেকজন বলেন, আমরা মধ্যরাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। যখন এসেছি তখনও টিকিটের লাইনে অনেক মানুষ দাঁড়ানো। এদিকে সকাল ৮টার সময় যখন টিকিট বিক্রি শুরু হয়, তখন আমাদের ৩/৪ জন সামনে যিনি দাঁড়িয়েছিলেন তিনি সরে গিয়ে অন্য একজনকে দাঁড়াতে দিলেন। উনি চলে যাওয়ার পর নতুন করে দাঁড়ানো ওই লোকের কাছ থেকে শুনলাম তিনি ২৫০ টাকা দিয়ে সেই সিরিয়াল কিনেছেন।

তিনি আরও বলেন, গত রাতে যখন এসে লাইনে দাঁড়ালাম তখন আমাদের সামনে বেশ কিছু ছিন্নমূল ধরনের মানুষ ছিল, যাদের দেখে বোঝাই যাচ্ছিল তারা আসলে যাত্রী বা টিকিট প্রত্যাশী নয়। তারা দাঁড়িয়েছেই সিরিয়াল বিক্রি করার জন্য।

আজ ৫ম দিনের মতো ২৬টি কাউন্টার থেকে বিক্রি হচ্ছে ঈদের অগ্রিম টিকিট। যার মধ্যে দুটি কাউন্টার নারীদের জন্য সংরক্ষিত। বরাবরের মতো এবারও মোট টিকিটের ৬৫ শতাংশ দেয়া হচ্ছে কাউন্টার থেকে। বাকি ৩৫ শতাংশের ২৫ শতাংশ অনলাইন ও মোবাইলে। ৫ শতাংশ ভিআইপি ছাড়াও রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৫ শতাংশ।

Advertisement

কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, সকাল থেকেই প্রতিটি কাউন্টারের সামনে টিকিট প্রত্যাশী মানুষের ভিড়। যাত্রী চাপের কথা মাথায় রেখে প্রতিটি ট্রেনেই অতিরিক্ত বগি সংযুক্ত করা হবে। অগ্রিম টিকিট বিক্রিতে যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে লক্ষ্যে আইন-শৃংখলা রক্ষকারী বাহিনীসহ রেলওয়ের নিজস্ব বাহিনী তৎপর রয়েছে।

সিরিয়াল বিক্রির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছিন্নমূলরা যাত্রী বেশে দাঁড়াতেই পারবে না। কারণ, সাধারণ মানুষ খুবই সচেতন, আগের রাত থেকে তারা নিজেরাই লাইনে দাঁড়িয়ে সিরিয়াল ঠিক রাখে। সিরিয়াল বিক্রির অভিযোগ সঠিক নয়।

এএস/এনএফ/এমএস