চলমান ট্রাফিক সপ্তাহের কারণে অনেক ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। সে কারণে ট্রাফিক সপ্তাহ ঢাকায় আরও তিনদিন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। পরে চলমান ট্রাফিক সপ্তাহ আরও তিনদিন বাড়ানোর ঘোষণা আসে পুলিশ সদর দফতর থেকেও।
Advertisement
শনিবার (১১ আগস্ট) বিকেলে পুলিশ সদর দফতর থেকে পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয়, ইতিবাচক ফল আসায় ঢাকাসহ সারাদেশে আরও তিনদিন ট্রাফিক সপ্তাহ চলবে।
দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন ডিএমপি কমিশনার ও বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আছাদুজ্জামান মিয়া।
তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট শুরু হওয়া ট্রাফিক সপ্তাহের কারণে আমরা অনেক ইতিবাচক ফল পেতে শুরু করেছি। ট্রাফিক আইন প্রয়োগের কারণে সড়কে শৃঙ্খলার অগ্রগতি হয়েছে। শৃঙ্খলা আরও টেকসই করতে এ অভিযান চলমান রাখা দরকার বলে মনে করছি। চলমান এ অভিযান আরও বেগবান করতে ট্রাফিক সপ্তাহ আরও তিনদিন (১২-১৪ আগস্ট) বর্ধিত করার ঘোষণা করছি।
Advertisement
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আইন অমান্যকারীদের ব্যক্তি-পেশা না দেখে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের বার্তাও একই ছিল। আমরা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বার্তা অন্তরে ধারণ করেছি। আইন অমান্যকারীরা যে পেশা বা শ্রেণিরই হোক না কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ট্রাফিক সমস্যা রাজধানীর অন্যতম বড় সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চার হাজারেরও বেশি ট্রাফিক সদস্য দিন-রাত পরিশ্রম করছে। রাস্তার অপ্রতুলতা, খোঁড়াখুঁড়ি, রাস্তার পাশেই শপিং সেন্টারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং আইন না মানার প্রবণতার কারণে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা অনেক কষ্টসাধ্য এবং চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। এত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
ইতোমধ্যে আমরা একটি বার্তা দিতে পেরেছি যে, কোনো ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান পেশা নির্বিশেষে আইন লঙ্ঘনকারী যেই হোক, তার বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করা হবে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বিবেককে নাড়া দিয়েছে। তাদের বার্তা অন্তরে ধারণ করে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলার স্বার্থে বিষয়টি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ট্রাফিক সপ্তাহের ছয় দিনে ঢাকায় ৫২ হাজার ৪১৭টি যানবাহন ও ১১ হাজার ৪০৫ চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ফিটনেস ও নিবন্ধনের কাগজ ঠিক না থাকায় পাঁচ হাজার ৫৭২টি যানবাহনকে ডাম্পিং-রেকারিং করা হয়েছে। তিন কোটি টাকার রাজস্ব (জরিমানা) আদায় হয়েছে।
Advertisement
গত দুই বছরে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারের দায়ে ৪৪ হাজার ৫৮৫টি গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, বিকন লাইট ব্যবহারের দায়ে পাঁচ হাজার গাড়ির বিরুদ্ধে, উল্টোপথে চলাচলের দায়ে এক লাখ ৪৪ হাজার ৪৬১টি গাড়ির বিরুদ্ধে, স্টিকার ব্যবহারের দায়ে এক হাজার ৪৭টি, কালো গ্লাস ব্যবহারের দায়ে ছয় হাজার ১৬২টি গাড়ি এবং চার লাখ মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ সময়ে ১০ হাজারেরও বেশি মোটরসাইকেল ডাম্পিং করা হয়েছে।
ভিডিও মামলা চালু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ৯৯ হাজারেরও বেশি গাড়ির বিরুদ্ধে ভিডিও মামলা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ মামলার সংখ্যা আরও বাড়বে। ফুটপাতে মোটরসাইকেল চলাচল রোধ করতে ডিএমপি নিজস্ব অর্থায়নে চার হাজার ৭৭টি মেটালিক বার স্থাপন করেছে। ট্রাফিক সচেতনতায় তিন হাজার ৬৩৯টি বৈঠক করেছি।
ঢাকাবাসীকে আইন মেনে চলার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, সবাই আইন না মানলে কাজটা কঠিন হয়ে যায়। আসুন আমরা সবাই আইন মানি এবং অন্যকেও উদ্বুদ্ধ করি। ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে যত্রতত্র রাস্তা পারাপার হলে এখন থেকে আমরা আইন প্রয়োগে বাধ্য হব।
বর্তমানে ট্রাফিক পুলিশের সব মামলায় ইলেক্ট্রনিক প্রসিডিউর মেনটেইন করা হয়। তাই এ ক্ষেত্রে অবৈধ লেনদেনের সুযোগ নেই। এরপরেও ঊর্ধ্বতনরা বিষয়টি খেয়াল রাখছেন।
রাস্তায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন অযুহাতে কাউকে রাস্তা অবরোধ করতে দেয়া হবে না। রাস্তা অবরোধ কোনো প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে না। যে কোনো বিষয়ে রাস্তা অবরোধ করার মানসিকতা পরিহার করে ঐক্যবদ্ধভাবে ট্রাফিক শৃঙ্খলায় পুলিশকে সহায়তা করুন।
এআর/জেইউ/এনএফ/এএইচ/আরআইপি