দেশজুড়ে

লতাপচা পানিতে ‘সর্বরোগের চিকিৎসা’ করান দুলাল কবিরাজ

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের আবদুল্লাহপুর গ্রামের পাশে রাজার বাজারে কবিরজ দুলাল চন্দ্র পালের চেম্বার। চেম্বারের নাম ‘বিশুদ্ধ আয়ুর্বেদ প্রদীপ ঔষধালয়’। চেম্বারের সাইনবোর্ডে নিজের ডিগ্রি হিসেবে দুলাল লিখেছেন, ‘এইচএসসি ব্যাকরণ বিদ্যা ভূষণ’। পাশাপাশি অনেক রোগের নাম লিখে উল্লেখ করেছেন তিনি এসব রোগের চিকিৎসক।

Advertisement

দুলাল চন্দ্র পাল কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের আবদুল্লাহপুর গ্রামের বাসিন্দা। অভিযোগ রয়েছে চেম্বারে বিভিন্ন লতাপাতা পচানো পানি বোতলে ভরে বিক্রি করে সর্বরোগের চিকিৎসা প্রদানের নামে প্রতারণা করে আসছেন দুলাল কবিরাজ। তার এসব ওষুধ খেয়ে রোগীরা তো রোগমুক্ত হচ্ছেনই না বরং ডাইরিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

রাজার বাজারের চেম্বারে গিয়ে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুলাল চন্দ্র পাল বলেন, 'তিনি ঢাকা থেকে এসব ওষুধ আনেন। প্রতিটি ওষুধ ল্যাবে পরীক্ষা করা। সব কাগজপত্র নিয়েই তিনি এই ব্যবসা করছেন। তবে কাগজপত্র দেখতে চাইলে একপর্যায়ে দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যান তিনি।'

পরে স্থানীয়দের দেয়া তথ্যে বাজারের পাশে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় একটি টিনশেড ঘর তালাবদ্ধ। ঘরের ভেতর থেকে ভেসে আসছে পচা দুর্গন্ধ। কবিরাজের স্ত্রী বলছিলেন ঘরটি খালি। তবে স্থানীয় লোকজনের চাপে একপর্যায়ে তিনি ঘরটির দরজা খুলে দেন। ঘরে বড় বড় প্রায় ২০টি প্লাস্টিকের ড্রাম। অনেকগুলো ড্রাম লতা-পাতার পচা পানিতে ভরা।

Advertisement

স্থানীয় সূত্র জানায়, দুলাল চন্দ্র বিভিন্ন লতাপাতা সংগ্রহ করে ড্রামের পানিতে ভিজিয়ে রেখে পচিয়ে ‘ওষুধ’ বানান। পরে এই ‘ওষুধ’ (পচা পানি) বোতলে ভরেন। বোতলের গায়ে লেবেল লাগান। লেবেলে ‘ওষুধ’ উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদ, রেজিস্ট্রেশন নম্বর নিজের মতো বসান। এরপর বোতলগুলো চেম্বারে সাজিয়ে রাখেন। এই পানি খাইয়ে প্রায় ২০ বছর ধরে রোগের ‘চিকিৎসা’ করছেন দুলাল চন্দ্র।

পরে ড্রামে লতাপাতা পচা পানি দেখে এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুলাল কবিরাজ সুর পাল্টে জানান, এসব ‘ওষুধ’ তিনিই বানান।

সূত্রমতে, স্থানীয় অধিকাংশ মানুষ প্রতারিত হয়ে এখন আর তার চিকিৎসা নেন না। তার বেশির ভাগ রোগী আসে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে দালালের মাধ্যমে।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, দুলাল চন্দ্র বিভিন্ন এলাকায় দালালের মাধ্যমে তার সর্বরোগের চিকিৎসার প্রচার চালিয়ে থাকেন। তার কিছু লোক এলাকায় এলাকায় গিয়ে বলেন, তার চিকিৎসা নিয়ে তারা বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন। এসব কথা শুনে গ্রামের সহজ-সরল মানুষ চিকিৎসা নিতে আসে তার কাছে। রোগীদের বেশির ভাগই নারী। রোগীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেন মোটা অঙ্কের টাকা।

Advertisement

মোস্তফা কামাল নামের একজন জানান, দুলাল চন্দ্রের এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে স্থানীয় মানুষ অনেকবার প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু তিনি স্থানীয় এক শ্রেণির প্রভাবশালীকে ম্যানেজ করে চলেন। প্রশাসন এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নেয়ায় তিনি বেপোরোয়া হয়ে উঠেছেন।

গৃহিণী আসমা বেগম বলেন, ‘একবার আমার একটি সমস্যা নিয়ে ওই কবিরাজের কাছে যাই। তিনি আমাকে কয়েক বোতল ওষুধ দেন। দুর্গন্ধযুক্ত ওই ওষুধ খাওয়ার পর আমার ডায়রিয়া শুরু হয়। অনেক সমস্যা দেখা দেয় শরীরে।’

উপজেলার নালগর গ্রামের সফিউল রানা বলেন, ‘কবিরাজ দুলাল চন্দ্রের লতাপাতা পচা পানি খেয়ে মানুষ আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছে।’

এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাইনুদ্দিন বলেন, খোঁজ নিয়ে ওই কবিরাজের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুমিল্লার সিভিল সার্জন মো. মুজিবুর রহমান জানান, লতা-পাতার এই পচা পানি পান করলে মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। ওই কবিরাজ ভেষজ ওষুধের নামে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে অপচিকিৎসা দিয়ে থাকলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এফএ/এমএস