আন্তর্জাতিক

তৃতীয় দফায় শক্তিশালী ভূমিকম্প ইন্দোনেশিয়ায়

তৃতীয় দফায় শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে ইন্দোনেশিয়া। লম্বক দ্বীপে এ নিয়ে এক সপ্তাহে তিনবার ভূমিকম্প আঘাত হানল। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভূমিকম্পের আঘাতে নিহতের সংখ্যা আগের চেয়ে দ্বিগুন হয়েছে।

Advertisement

প্রথম ভূমিকম্পটি আঘাত হানে রোববার রাতে। ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে লম্বক দ্বীপে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে। জাতীয় সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে গার্ডিয়ানের এক খবরে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ৩৮১ জনের মৃত্য হয়েছে।

তবে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থা কেন্দ্র বলছে, ভূমিকম্পে ২৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে, বৃহস্পতিবার ইন্দোনেশিয়ার শীর্ষ নিরাপত্তামন্ত্রী উইরানতো জানিয়েছেন, রোববার লম্বক দ্বীপে ভূমিকম্পের আঘাতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১৯ জন।

বৃহস্পতিবার দুপুরের পরে আঘাত হানা ৫ দশমিক ৯ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে আতঙ্কিত লোকজন বাড়ি-ঘর থেকে রাস্তায় নেমে আসে। ইন্দোনেশিয়ার ভূতাত্ত্বিক জরিপ জানিয়েছে, লম্বক দ্বীপ থেকে ৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এর গভীরতা ছিল ১২ কিলোমিটার।

Advertisement

ভূমিকম্পে নতুন করে আরও বেশ কিছু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রোববারের ভূমিকম্পে বহু বাড়ি-ঘর ধসে পড়ে। এরপর কয়েক দফা ভূমিকম্পে লম্বক দ্বীপ যেন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ার দুর্যোগ প্রশমন সংস্থা জানিয়েছে, রোববার রাতে আঘাত হানা ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের পর থেকেই লম্বকের ভবনগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তাছাড়া এর আগে গত মাসের ২৯ তারিখে ৬ দশমিক ৪ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পেও অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ওই ভূমিকম্পও বিভিন্ন স্থাপণা ও বাড়ি-ঘরকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং অনেক ভবনই পুরোপুরি ধসে না পড়লেও অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিল। ফলে চলতি সপ্তাহে কয়েক দফা ভূমিকম্পের আঘাতে দুর্বল স্থাপণাগুলো ধসে পড়েছে।

তবে ভূমিকম্পে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে এখনও বিতর্ক রয়ে গেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সরকারি তথ্য অনুযায়ী হতাহতের সংখ্যায় পার্থক্য রয়েছে। এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দিষ্ট হতাহতের সংখ্যা ঘোষণা করা হয়নি।

Advertisement

একের পর এক ভূমিকম্পের আঘাতে লম্বকের প্রায় দেড় লাখ মানুষ বাস্তুহারা হয়ে পড়েছে। ভূমিকম্পটি স্থল এলাকায় আঘাত হানার কারণে কোন সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়নি। তবে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ ভূমিকম্পের মাত্রা ৫ দশমিক ৯ বলে উল্লেখ করলেও ইন্দোনেশিয়ার ভূতাত্ত্বিক জরিপ প্রাথমিক খবরে জানিয়েছে যে, ৬ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।

অস্ট্রেলিয়ার হোবার্ট শহরের বাসিন্দা জোডি এপার ছয় মাস ধরে লম্বক দ্বীপে বাস করছেন। তিনি জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের বিভিন্ন জিনিস দিয়ে সহায়তা করা প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা আতঙ্কে রাস্তায় বেরিয়ে আসি। সে সময় প্রচণ্ড কম্পন হচ্ছিল।

তিনি বলেন, বেশ কিছু দেয়াল ভেঙে পড়েছিল। তবে বেশিরভাগ মানুষই ভয় পেয়েছিলেন আর খুব আতঙ্কে ছিলেন।

এপার জানিয়েছেন, তিনি এবং তার পরিবারের সবাই নিরাপদেই আছেন। তারা রাতের বেলা স্থানীয় একটি স্কুলে ঘুমিয়েছেন। ওই স্কুলটি একটি পাহাড়ের কাছে অবস্থিত। তারা সেখানে ছিলেন যাতে সুনামি আঘাত করলে তারা পাহাড়ে আশ্রয় নিতে পারেন।

তিনি জানিয়েছেন, রোববারের ভূমিকম্পের পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই পরাঘাত (আফটার শক) অনুভূত হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি বেশ কিছু ভবন ধসে পড়তে দেখেছি। আমাদের গ্রামের কেউ হতাহত হয়নি। তবে দ্বীপের অন্য কোথাও কি পরিমাণ মানুষ হতাহত হয়েছেন সে ব্যাপারে আমার জানা নেই।

লম্বক ফরগটেন চিলড্রেন ইমার্জেন্সি এইড ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান ইন্দ্রি সুশান্ত এবিসি নিউজকে জানিয়েছেন যে, তার বাড়িটি পুরোপুরি ধসে পড়েছে।

তিনি বলেন, আমার বাড়িটি একেবারে মাটির সাথে মিশে গেছে কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারিনি। তিনি বলেন, আপনি যখন কাউকে তার বাড়ি-ঘরের কথা জিজ্ঞেস করবেন তখন যদি তাদের বাড়ি বলতে আর কিছুই না থাকে তবে এটা বর্ণনা করা মানুষগুলোর জন্য কতটা কঠিন আমি তা বোঝাতে পারব না।

শুক্রবার সকালে ইন্দোনেশিয়ার রেড ক্রস জানিয়েছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রায় ২০ হাজার মানুষের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন। সংস্থাটির মুখপাত্র আরিফিন হাদি বলেন, কয়েক হাজার মানুষ বাড়ি-ঘর হারিয়েছেন। তাদের জরুরি ভিত্তিতে পরিস্কার পানি এবং খাবার প্রয়োজন। তিনি জানিয়েছেন, তারা পাঁচটি প্রত্যন্ত এলাকায় পানির ২০টি ট্রাক পাঠিয়েছেন।

রোববারের ভূমিকম্পের পর আরও ভূমিকম্পের আশঙ্কায় হাজার হাজার পর্যটককে ওই এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বিমানের অতিরিক্ত ফ্লাইটে করে অনেকেই দ্বীপটি ছেড়ে চলে গেছেন। এছাড়া আরও অনেকেই ফেরি বা নৌকায় করে প্রতিবেশি বালি দ্বীপে আশ্রয় নিয়েছেন।

রোববার রাতে ভূমিকম্প আঘাত হানার পর এ পর্যন্ত ৩৫৫ বার পরাঘাত (আফটার শক) অনুভূত হয়েছে। রিং অব ফায়ারের ওপর অবস্থিত হওয়ার কারণে ইন্দোনেশিয়ায় প্রায়ই ভূমিকম্প আঘাত হানে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় এই অঞ্চলটিতে ঘন ঘন ভূমিকম্প এবং আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত দেখা যায়। সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপরে বিশ্বের অর্ধেকের বেশি সক্রিয় আগ্নেয়গিরিগুলো এই রিংয়ে রয়েছে।

টিটিএন/এমএস