অর্থনীতি

মন্ত্রী-সচিবের দ্বিমত!

সকল মানুষকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণে ব্যাংকের শাখা বাড়ানোর ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. ইউনুসুর রহমান দুই রকম মত দিয়েছেন।

Advertisement

দেশব্যাপী বিভিন্ন ব্যাংকের যে শাখা আছে তা যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী মুহিত ব্যাংকের শাখা বাড়ানো দরকার বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তবে সিনিয়র সচিব ইউনুসুর রহমান বলেছেন, ব্যাংকের শাখা না বাড়িয়ে বিকল্প উপায়ে সকলকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণের উদ্যোগ নিতে হবে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে ‘বাংলাদেশের জাতীয় আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকারণ কৌশলপত্র’ শীর্ষক এক কর্মশালায় অর্থমন্ত্রী এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব নিজ নিজ অভিমত তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে। ‘বিজনেস ফাইন্যান্স ফর দি পুওর ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে এতে সহায়তা করে ইউকে এইড।

Advertisement

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন পদ্ধতিতে আমরা আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ কার্যক্রম বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। ব্যাংকের শাখা বিস্তৃত করা এবং সকলের কাছে ব্যাংকের সেবা পৌঁছে দেয়া। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন খুব বড় নয়। কারণ, ব্যাংকের শাখা এখন সারাদেশে ১০ হাজারের কিছু কম আছে। ১৬ কোটি মানুষের জন্য এটা মোটেই যথেষ্ট না। ব্যাংকের শাখা আরও অনেক বিস্তৃত হওয়া প্রয়োজন।

মুহিত তার বক্তব্যের শুরুতে ১০ দিন ছুটি পাওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, বাজেট পাশের পর থেকেই আমি চেষ্টা করছিলাম কাজ একটু কম করার। আজ থেকে আমার ১০ দিনের ছুটি শুরু হয়েছে। টানা কাজ করার কারণে শক্তি ক্ষয় হতেই থাকে। এই ক্ষয় হওয়া শক্তি ফিরে পাওয়া সহজ নয়। আমি চেষ্টা করবো এই ১০ দিনের মধ্যে ক্ষয় হওয়া শক্তি কিছুটা ফিরে পাওয়ার। এই ব্যক্তব্য দিয়েই অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন অর্থমন্ত্রী।

এরপর অনুষ্ঠানের শেষপর্যায়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. ইউনুসুর রহমান বলেন, এখন আমাদের ব্যাংকের শাখা বাড়ানোর দিকে না গিয়ে বিকল্প উপয়ে সকল মানুষকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণের চেষ্টা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং এবং এজেন্ট ব্যাংকিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথির ব্যক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, ডিএফআইডি বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ জেইন এডমন্ডসন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা বক্তব্য দেন।

Advertisement

প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, দারিদ্র্যতা বাংলাদেশে আছে। তবে সেটা মোকাবেলা করার প্রচেষ্টা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো মধ্যে রয়েছে। বর্তমান সরকার সংস্কার কাজে হাত দিয়েছে। ভবিষ্যতে আর্থিক খাতে আরও সংস্কার হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি। আমাদের সরকার দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) শক্তিশালী করছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয় মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক কাজের ক্ষেত্রে বীমা খাতের সংস্কার দরকার। প্রতিটি কাজে আমাদের উদ্ভাবনী পথ খুঁজে বের করতে হবে। প্রয়োগ করতে হবে উদ্ভাবনী শক্তি। যেমন বিদ্যুৎ বিল দেয়ার ক্ষেত্রে সরাসরি অর্থ দেয়ার পদ্ধতি বন্ধ করে, একটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দেয়ার ব্যবস্থা করলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রম অনেকখানি হয়ে যাবে।

কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অরিজিৎ চৌধুরী। প্রতিবেদন তৈরির অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন কৌশলপত্রের লিড কনসালটেন্ট ড. মুস্তফা কে মুজেরি। আর বাংলাদেশের জাতীয় আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ কৌশলপত্র তুলে ধরেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (ডিডি) আসিফ ইকবাল।

এমএএস/জেডএ/পিআর