জাতীয়

‘মা নিষেধ করেছেন যেতে, আপনি কিন্তু যাবেন না’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার মায়ের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেছেন, শেখ মুজিবুর রহমান থেকে জাতির পিতা এবং বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠার পেছনে আমার মায়ের অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি। স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সফলতার পেছনে শেখ ফজিলাতুন্নেছার অনবদ্য অবদান ছিল।

Advertisement

বুধবার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছার ৮৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকায় এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই সভায় সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। স্বাগত বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম এনডিসি। এ ছাড়া ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান অধ্যাপক মমতাজ বেগম ও রেবেকা মোমেন এমপি বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে ফজিলাতুন্নেছার জীবনভিত্তিক একটি প্রমাণ্যচিত্র উপস্থাপন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বঙ্গমাতার পরামর্শ জাতির পিতাকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করেছে। জাতির পিতার জন্য প্রেরণা, শক্তি এবং সাহসের এক উৎস ছিলেন বঙ্গমাতা। স্বামীর সব সিদ্ধান্তে মনস্তাত্ত্বিক সহযোগিতা ছাড়াও বঙ্গমাতার পরামর্শ অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হয়।

তিনি বলেন, ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলনের সময় আমার মা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অন্তরীণ করে তার বিচার শুরু হয়। অসহযোগ আন্দোলনের একপর্যায়ে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে তাকে পাকিস্তানে নিয়ে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেন আইয়ুব খান। কিন্তু ফজিলাতুন্নেছার জন্যই বঙ্গবন্ধু ওই বৈঠকে যেতে পারেন নাই।

Advertisement

সেই প্রেক্ষাপট তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ওই বৈঠকে যোগ দেয়ার জন্য আব্বাকে প্যারোলে নিয়ে যাবে। আমাদের প্রায় সব নেতাই রাজি ছিলেন যে, আব্বা প্যারোলে যাক। কিন্তু আমার মা কখনোই এর সঙ্গে একমত ছিলেন না। মায়ের নির্দেশে বাবার সঙ্গে দেখা করার স্মৃতিচারণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘আমি ওখানে গিয়ে দেখি, আমাদের বড় বড় নেতারা সবাই কিন্তু ভেতরে। আমাকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না। আমি কিন্তু গেটের বাইরে দাঁড়ানো।’

সকলের অন্তরালে বাবার কাছে মায়ের বার্তা পৌঁছে দেয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আব্বা কথা বলতে বলতে যখন দরজার কাছে এসে দাঁড়ালেন, দেখলেন আমি দাঁড়ানো, নিচু কাঠের গেটে। ওখান থেকে উনি আমাকে আদর করার জন্য গলাটা জড়িয়ে ধরে বললেন, কোনো চিঠি-টিঠি দিস না, তোর মা কি বলেছে বল।

আমি শুধু বললাম, ‘মা এখনো প্যারোলে যেতে নিষেধ করেছেন, কোনো সিদ্ধান্ত নিতে নিষেধ করেছেন। উনি ইন্টারভিউয়ের জন্য সময় চেয়েছেন, সময় পেলে উনি আসবেন। মা নিষেধ করেছেন যেতে, আপনি কিন্তু যাবেন না’।

শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ কী চায় তা বোঝা, জনমত সৃষ্টি করার পেছনে তার মায়ের বিরাট অবদান ছিল। জীবনের সব আশা-আকাঙ্ক্ষা বিসর্জন দিয়ে, ভোগ-বিলাস বিসর্জন দিয়ে আমার বাবার পাশে থেকে এ দেশের মানুষকে স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন আমার মা। আমার বাবার পাশে থেকে যেভাবে... (তিনি) ত্যাগ স্বীকার... (করেছেন তা) না করলে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করতে পারতাম কি না...।

Advertisement

পরিবারের সকলকে হারানোর কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পরাজিত শক্তি, তাদের দোসর পাকিস্তানি বাহিনীর যারা দালাল, যারা স্বাধীনতা চায়নি.. দেশে থেকেও যারা মুনাফেকি বেঈমানি করেছে, তারাই তো ১৫ অগাস্টের ঘটনা ঘটালো। আমার মাকেও ছাড়েনি।

এফএইচএস/জেডএ/এমএস