দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় বৃষ্টির আশায় ব্যাপক ধুমধাম করে দেয়া হয়েছে ব্যাঙের বিয়ে। বিয়েতে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন প্রায় ৫০০। রং মেখে নেচে গেয়ে দেয়া হয় ব্যাঙের বিয়ে। শনিবার সকাল থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে এ বিয়ের অনুষ্ঠান। সকলের মনের বিশ্বাস ব্যাঙের বিয়ে দিলেই অনাবৃষ্টি কেটে যাবে। পালন করা হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের বিয়ের নিয়ম কানুন। ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করে বিরল উপজেলার ভারাডাঙ্গী বেতুড়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের মানুষ।আয়োজকরা জানান, আজ শ্রাবণ মাসের ২৪ দিন। কিন্তু বৃষ্টি নেই। জমিতে চাষ দেয়া যাচ্ছেনা। যে জমিগুলোতে চারা রোপণ করা হয়েছে, সে জমিগুলো পানির অভাবে চৌচির হয়ে গেছে। যাতে বৃষ্টি আনে সেজন্য ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করা হয়।বৃষ্টির আশায় ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন চলছিল সাত দিন আগে থেকেই। গ্রামের যুবরা সাত দিন আগে থেকে গ্রামের বাড়ি গিয়ে নেচে গেয়ে অর্থ, চাল, মরিচ, পিঁয়াজ, রসুন, আদা, তেল ইত্যাদি সংগ্রহ করে। এ সময় প্রতিটি বাড়িতে ব্যাঙের বিয়ে খেতে আসার জন্য দেয়া হয় দাওয়াত। শনিবার সকাল থেকে শুরু হয় ব্যাঙের বিয়ে। বাঁশ তলায় সাজানো মাড়োয়ায় সকাল থেকে গ্রামবাসী আসতে শুরু করে। বাঁজানো হয় মাইক। রং মেখে, কাঁদা মেখে শুরু হয় নাচ-গান। দুপুর সাড়ে ১২টার সময় বর ব্যাংকুর মা লাইলী ও কনে মেনকার মা ডালো রানী রায় বর কনেকে নিয়ে হাজির হয় মাড়োয়ায়। এ সময় পাশেই চলছিল রান্না-বান্নার কাজ। শুরু হয় নাচ-গান । গ্রামের মানুষ বর-কনেকে দেখে টাকাসহ বিভিন্ন প্রকার উপহার দিয়ে খিচুড়ি খেয়ে যায়।মাড়োয়ার আশেপাশে চলে লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ। শুকনায় লাগানো হয় ধানের চারা ।এ যেন এক অন্য রকম উৎসব। শুরু হয় মুসলমান-হিন্দু সকল সম্প্রদায়ের সকল বয়সের মানুষের মিলন মেলা।এ ব্যাপারে তেলীয়া বর্মন জানান, `অতীতেও এভাবে ব্যাঙের বিয়ে দেয়া হয়েছে। ভগবান জলও দিয়েছে। এবারো সে আমা থেকেই এই আয়োজন করা হয়েছে।` বজেন্দ্র বর্মন জানান, `আমরা গ্রামবাসী সবাই মিলে সৃষ্টিকর্তাকে খুশি করার জন্য ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছি। ভগবান অবশ্যই দেখছেন আমরা বৃষ্টির জন্য এ আয়োজন করেছি। অবশ্যই বৃষ্টি হবে।`বিরল ভান্ডারা ইউপির ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মহেশ চন্দ্র রায় জানান, গত সাত দিন ধরে এ আয়োজন চলছে। এলাকার যুবরা মূলত এই আয়োজন করেছে। বিকেলে গরুর গাড়িতে করে কনের বাসায় যাওয়া হবে। কনেকে শ্বশুর বাড়িতে আনার জন্য।তিনি আরো বলেন, `দিনাজপুরে এখন চলছে অনাবৃষ্টি। ক্ষেতে পানি না থাকায় কৃষকের মধ্যে শুরু হয়েছে হাহাকার। মানুষ বিকল্প ব্যবস্থায় আমন চারা রোপন করছে। জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। বৃষ্টি না হলে জমিতে আমন চারা জ্বলে যেতে শুরু করবে।`এমদাদুল হক মিলন/এআরএ/এমআরআই
Advertisement