ভ্রমণ

ভুটানের কোথায় কী দেখবেন?

ভুটানে ভ্রমণ করলে প্রকৃতি ছাড়াও দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা, বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান, পাহাড় বেয়ে গড়িয়ে পড়া অনেক ঝরনা ও পাথুরে নদী দেখতে পাবেন। আছে ঝুলন্ত ব্রিজও। এছাড়া জাতীয় জাদুঘর, ভুটানের চিড়িয়াখানায় জাতীয় পশু দেখে মন-প্রাণ জুড়িয়ে যাবে। বার বার যেতে ইচ্ছে করবে।

Advertisement

সড়কপথে ভুটান গেলে ফুন্টসোলিং হয়েই প্রবেশ করতে হবে। ভুটানের এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। শহরটি সীমান্ত জেলা চুখায় অবস্থিত। শহরটি ভুটানের শিল্প ও বাণিজ্য শহর হিসাবেও পরিচিত। শহরটি ভারত ও ভুটান সীমান্তে। এই শহর দ্বারাই ভুটানের সঙ্গে ভারতের বেশির ভাগ ব্যবসা-বাণিজ্য। এই শহরে ঢুকতে ভারতীয় এমনকি অন্যান্য দেশের নাগরিকদের ঢুকতে কোনো ভিসা লাগে না।

পারো: ভুটানের পারোতে গিয়েছিলাম প্রথমে। শহরটি পারো উপত্যকায় অবস্থিত। এটি ঐতিহাসিক শহর যেখানে বিভিন্ন পবিত্র স্থান এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা ছড়িয়ে আছে। সেখানকার পারো নদী সবাইকে মুগ্ধ করে। নীরবতাই যেখানে উজ্জীবনের শক্তি। সড়কপথে গেলে ভারতের জয়গাঁয়ে ইমিগ্রেশন করে রাতে সেখানকার একটি হোটেলে থাকি আমরা ১৩ জন। আর রাতে ভুটানের ইমিগ্রেশন শেষ করে রাখি। সকালে নাস্তা সেরেই তাড়াতাড়ি রওনা দেই ভুটানের ফুন্টসোলিং টাউন থেকে পারোর উদ্দেশে। পাহাড় ও মেঘ ছাড়াও বেশ কয়েকটি ঝরনা দেখে মুগ্ধ হই আমরা। সেখানে একটি হোটেলে রাত কাটাই।

টাইগার নেস্ট: এশিয়ার সুইজারল্যান্ড নামে খ্যাত ভুটানের টাইগার নেস্ট এক রোমাঞ্চকর জায়গা। স্থানীয়রা টাইগার্স নেস্টকে তাক্তসাং বলে থাকে। পারো শহর ঘুরতে আসা অপূর্ণই থেকে যাবে যদি কেউ টাইগার্স নেস্ট না দেখে। পাহাড় চূড়ায় এক বিস্ময়ের নাম এটি। পর্যটকপ্রেমীদের কাছে এটি একটি আকর্ষণীয় নাম। পারো শহর থেকে প্রায় ৯০০ মিটার উঁচুতে টাইগার্স নেস্ট। নামের সঙ্গে বাঘ থাকলেও সেখানে কিন্তু বাঘ নেই। এটি একটি মনেস্ট্রি। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা টাইগার্স নেস্ট দেখতে চাইলে প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা ট্রেকিং করতে হবে। সকাল থেকেই কেডস-শর্টস পরে বহু পর্যটক হাজির হন পাহাড় চূড়ায় ওঠার জন্য। অনেক পরিশ্রম করে সেখানে ওঠার পর সব ক্লান্তি দূর হয়। মনে আসে প্রশান্তি।

Advertisement

> আরও পড়ুন- কলকাতায় ট্রাম ভ্রমণে একদিন

পারো বিমানবন্দর: রাজধানী থিম্পু থেকে ৬৩ কিলোমিটার দূরে পারো শহরে অবস্থিত ভুটানের একমাত্র বিমানবন্দর এটি। পাহাড়ের উপর দিয়ে গাড়িতে যাওয়ার সময় এ বিমানগুলোকে খেলনা বিমান বলে মনে হয়। ছোট্ট ছিমছাম এ বিমানবন্দর পৃথিবীর ঝুঁকিপূর্ণ কয়েকটি বন্দরের একটি। তবুও দক্ষতার সঙ্গে বিমান ওঠানামা করে এখানে।

পারো নদী: ভুটানের পারো নদীর কল কল শব্দের মায়াবী জল সবাইকে মুগ্ধ করে রাখে। পাথুরে এ নদীর স্বচ্ছ শীতল পানিতে পা ভেজালে মনটা ভরে যায়। যেখানে প্রিয়জনকে নিয়ে আসে আরো কাছাকাছি। এটি শহরের ভেতর দিয়েই বয়ে গেছে। তাই খুব সহজেই দেখতে পাবেন নদীটিকে।

বুদ্ধ পয়েন্ট: রাজধানী থিম্পুতে এই বুদ্ধ ডর্ডেনমা বা বুদ্ধ পয়েন্ট দেখে সবাই বিস্মিত হতে বাধ্য। কারণ এই মূর্তির বিশালতা ও সামনের বিস্তৃত জায়গা মনটাকে বিশাল করে দেয়। কারণ মূর্তিটি ১৭৭ ফুট উঁচু (প্রায় ১৭ তলা ভবনের সমান)। বুদ্ধ ডর্ডেনমা বা বুদ্ধ পয়েন্টের সামনের অংশ। সেখানেও রয়েছে একই ধরনের ১৭টি মূর্তি। যা ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরি। থিম্পু শহরের প্রায় সব প্রান্ত থেকেই বুদ্ধ ডর্ডেনমা মূর্তিটি চোখে পড়ে। এটি মহান শাক্যমুনি বুদ্ধের সবচেয়ে বড় উপবিষ্ট মূর্তি (শাক্যমুনি বুদ্ধের অন্যতম নাম। শাক্য জনগোষ্ঠীতে জন্মগ্রহণের কারণে তার এ নামকরণ)। চতুর্থ রাজা জিগমে সিঙ্গে ওয়াংচুকের ৬০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ভুটানের রাজধানী থিম্পুর কুয়েসেলফোদরং পাহাড়ে এই বিশালাকায় মূর্তিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। আমরা জুলাইয়ে সেখানে ভ্রমণ করার সময়ও এ বিস্তৃত মাঠের কাজ চলছিল। এই বুদ্ধ পয়েন্ট থেকে থিম্পু শহরও একনজরে দেখা যায়।

Advertisement

পুনাখা: পারো হয়ে থিম্পু। সেখান থেকে আমরা পুনাখা যাই। থিম্পু থেকে পুনাখা গিয়ে দিনে থিম্পুতে ফিরে আসা যায়। আবার কেউ ইচ্ছা করলে সেখানকার মোটেলে থাকলেও থাকতে পারবেন। পুনাখা (জংখা) জেলার প্রশাসনিক কেন্দ্র। পুনাখা ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ভুটানের রাজধানী এবং সরকারের আসন ছিল। এটা থিম্পু থেকে ৭২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং রাজধানী থিম্পু থেকে পুনাখা গাড়িতে আসতে প্রায় ৩ ঘণ্টা সময় লাগে। এটা সমুদ্রতল থেকে ১৩১০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। সেখানে রয়েছে সাসপেনশন ব্রিজ। আর পথে যাওয়ার সময় পড়বে মেমোরিয়াল কর্টেন ও ভুটানের জাতীয় উদ্যান।

> আরও পড়ুন- গতিমান এক্সপ্রেসে তাজমহলের পথে

পুনাখা সাসপেনশন ব্রিজ: পুনাখা সাসপেনশন ব্রিজ- ভুটানের দীর্ঘতম সাসপেনশন ব্রিজ। এটি ভুটানের পু ছ্যু নদীর উপরে। যার দৈর্ঘ্য ১৬০ মিটার। এ ব্রিজের নিচ দিয়ে বয়ে গেছে।

মেমোরিয়াল কর্টেন: পুনাখা যাওয়ার পথে দেখতে পাবেন মেমোরিয়াল কর্টেন। এটি মূলত স্মৃতিস্তম্ভ। ভুটানের তৃতীয় রাজা জিগমে দরজি ওয়াংচুকের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ১৯৭৪ সালে এ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়। এটি বেশির ভাগ সময়ই কুয়াশায় ঢাকা থাকে। আকাশ পরিষ্কার থাকলে এখান থেকে মাউন্ট এভারেস্ট দেখা যায়। আর আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে দেখতে পাবেন নেপালের এভারেস্ট। পুনাখার প্রশাসনিক কেন্দ্র: ভুটানের পুনাখার প্রশাসনিক কেন্দ্র। প্রাসাদটি ১৭৩৭-৩৮ সালে নির্মিত। এটি জং স্থাপত্যশিল্পের দ্বিতীয় পুরাতনতম এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাসাদ। পু ছ্যু নদীর ধারে এটি অবস্থিত। শান্ত নিরিবিলি পরিবেশে অবস্থিত এই কেন্দ্র প্রাচীনকালের এক অন্যন্য স্থাপনা।

পুনাখা নদী: এই নদী পুনাখা জং টি পুনাখা–ওয়াংড়ু উপত্যকার পু ছ্যু (পিতা) এবং মু ছ্যু (মাতা) নদীর মিলনে হয়েছে পু ছ্যু নদী। এটি ভুটান–ভারত সীমা অতিত্রম করেছে এবং অবশেষে ব্রহ্মপুত্র নদীর সাথে মিলিত হয়েছে।

দেখুন ভিডিও :

এইচএস/এসইউ/এমএস