জাতীয়

সীতাকুণ্ডে বাসে বাসে তল্লাসি, শিক্ষার্থীদের হয়রানির অভিযোগ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডে ঢাকা ও উত্তরবঙ্গগামী বেশ কয়েকটি বাসে তল্লাশি চালিয়ে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) বাড়ি ফেরত শিক্ষার্থীদের হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

Advertisement

মঙ্গলবার (০৭ আগস্ট) দিনগত রাতে সীতাকুণ্ড থানার সামনের মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে।

সূত্র জানায়, শিক্ষার্থীদের টানা তিন দিনের আন্দোলনের মুখে গতকাল (মঙ্গলবার) চুয়েট বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্রকে মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ও ছাত্রীদের আজ বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এ ঘোষণার পর দুপুরের পর পরই হল ছেড়ে চট্টগ্রাম শহরে চলে আসেন শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রাম ও আশপাশের শিক্ষার্থীরা যার যার বাড়িতে চলে গেলেও ঢাকাসহ উত্তরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা রাতে নাইট কোচে বাড়ি যাচ্ছিলেন। শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে মঙ্গলবার রাত ১২টার পার ঢাকাসহ উত্তরাঞ্চগামী যেসব বাস চট্টগ্রাম ছেড়েছে, সেসব বাস আটকে শিক্ষার্থীদের নামিয়ে নেয় পুলিশ।

Advertisement

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বেশ কয়েকটি গাড়ি থেকে বেছে বেছে চুয়েট শিক্ষার্থীদের নামিয়ে নেয় পুলিশ। এ সময় তাদের ব্যাগ ও লাগেজ চেক করা হয়। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ও হল ভ্যাকেটের কথা জানানো হলেও পুলিশ তাদের কোনো কখাই শোনেনি।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থী ইকবাল কবির সৈকত জাগো নিউজকে বলেন, ‘দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল বন্ধ ঘোষনার পর আমরা বিকেলেই হল ছেড়ে দেই। রাতে বাড়ি ফেরার জন্য রাজশাহীগামী সৌদিয়া পরিবহনের একটি বাসে উঠি। গাড়িতে আমরা ২৫ জন শিক্ষার্থী ছিলাম। হঠাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল এক সঙ্গে বন্ধ হওয়ায় রাতে ঢাকা-রাজশাহীসহ উত্তরবঙ্গগামী সব গাড়িতেই ছিল চুয়েট শিক্ষার্থীরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের গাড়িটি সীতাকুণ্ড থানা এলাকায় পৌঁছলে কয়েকজন পুলিশ সদস্য গাড়িতে উঠে আমাদের নাম, কোথায় যাচ্ছি এবং ইউনিভার্সিটির নাম জিজ্ঞাসা করে। এর কিছুক্ষণ পর আমাদের গাড়ি থেকে নামিয়ে নেয়। এসময় আমরা বাববার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ও বাড়ি যাওয়ার কথা জানালেও তারা আমাদের কোনো কথাই শুনছিলেন না। পরে আমাদের গাড়ি ঘুড়িয়ে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় আমাদের সবার লাগেজ গাড়ি থেকে নামিয়ে বাসকে চলে যেতে বলে। তবে আমরা বাসের সুপারভাইজারকে বুঝিয়ে বাস দাঁড় করাতে বলি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করি।’

আহমাদ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘পুলিশ সদস্যদের আমরা অনেকবার বলেছি আমরা চুয়েট শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ায় বাড়ি যাচ্ছি। এমনকি নিউজপোর্টালে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের খবরও দেখিয়েছি। কিন্তু তারা আমাদের কোনো কথায় শোনেননি। তারা বলছেন- আমরা নাকি ঢাকায় ভাঙচুর করার জন্য যাচ্ছি। এসময় তারা আমাদের সবার আইডি কার্ডের ছবি তুলে নেন। শুধু আমাদের গাড়ি নয়। অন্যান্য গাড়িতে থাকা চুয়েট শিক্ষার্থীদেরও হয়রানি করা হয়।’

Advertisement

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক চেষ্টার পর আমাদের কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করি, পরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের বিষয়ে জানানো হলে, ওই পুলিশ সদস্যরা স্যারদের জানান, তাদের ভুল হয়েছে, ওপরের নির্দেশ ছিল। এসময় স্যারদের কাছে উপস্থিত এক পুলিশ কর্মকর্তা ক্ষমা চেয়ে আমাদের ছেড়ে দেন।’

এ বিষয় জানতে বুধবার সকালে জাগো নিউজের পক্ষ থেকে সীতাকুন্ড থানায় যোগাযোগ করা হলে এসআই অজিত বলেন, ‘এটি রাতের ঘটনা, তাই আমি বলতে পারছি না।’

সীতাকুণ্ড থানার ওসি ইফতেখার হাসান জাগো নিউজের প্রতিবেদককে ‘এ বিষযে জানতে ১০টার পর ফোন দেন’ বলে মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দেন।

উল্লেখ্য, ছাত্র আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে গত তিনদিন ধরে টানা ক্লাস বর্জন করেছে চট্টগ্রাম প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত রোববার স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীদের সঙ্গে চুয়েট শিক্ষার্থীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। গতকালও শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে মিছিল সমাবেশ করলে জরুরি বৈঠকে বসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ডিন, পরিচালক, বিভাগীয় প্রধানরা। বৈঠকে ঈদুল আজহা উপলক্ষে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

এমবিআর/পিআর