প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশ থেকে নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে মিয়ানমারকে রাজি করানোর জন্য জাপানসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের অবশ্যই তাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে এ জন্য মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য বোঝাতে হবে।’
Advertisement
সফররত জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো মঙ্গলবা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে শেখ হাসিনা একথা বলেন। বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত বছরের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত বহুসংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী এসে এদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে এবং তারা সংখ্যায় কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীকেও ছাড়িয়ে যাওয়ায় নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণ এ কারণে ব্যাপক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে কারণ তাদের চাষাবাদের জমিগুলোতে পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নিতে হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাই আমরা স্থানীয় জনগণকেও সহায়তা প্রদান করছি।’
Advertisement
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যদিও নিপেডো রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছিল তথাপি তারা এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে নাই। তিনি বলেন, ‘আমরা এসব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য এবং স্বেচ্ছাসেবকরা রোহিঙ্গাদের কষ্ট লাঘব করতে কক্সবাজারে কাজ করে যাচ্ছে তারাও দেশে ফেরার পর এসব রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরার বিষয়ে সহযোগিতা করতে পারে।
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেন, তিনি তার সাম্প্রতিক মিয়ানমার সফরে দেশটির রাষ্ট্রপতি উইস মিন্ট এবং স্টেট কাউন্সিলর অং সাং সুকির সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, মিয়ানমারের নেতৃবৃন্দ তাকে জানান, তারা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ফিরে যাবার পর যাতে ভালো পরিবেশে তারা বসবাস করতে পারে সে জন্য রাখাইন স্টেটে ঘরবাড়ি এবং স্কুল নির্মাণ কর্মসূচি দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য আমি তাদেরকে বলেছি।’
Advertisement
তারো কোনো বলেন, বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলো যাতে তাদের প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে পরিদর্শন করানো হয় এবং রোহিঙ্গাতের ফেরত নেয়ার বিষয়ে তারা যেন বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সেজন্যও তিনি মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষতে আহ্বান জানিয়েছেন।
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের জন্য জাপান সরকার ২০ লাখ মার্কিন ডলারের আর্থিক সাহায্য প্রদান করবে, যাতে করে চলমান বর্ষা মওসুমে তাদের কোনো সমস্যা না হয়। এ প্রসঙ্গে মিয়ানমার এবং বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের পরিপূর্ণ অংশীদারিত্ব বিদ্যমান থাকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকার সকল উন্নয়ন কর্মকান্ডে টোকিও তার সহযোগিতাও অব্যাহত রাখবে।
তারো কোনো বলেন, জাপানের উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে আরও অধিক বিনিয়োগে আগ্রহী। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ইতোমধ্যেই জাপানের বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি বরাদ্দ করেছে, যাতে করে তারা সেখানে বিনিয়োগ করতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, টোকিওতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রুবাবা ফাতিমা এবং ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোইসয়াসু ইজুমি এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
এফএইচএস/বিএ