জাতীয়

চট্টগ্রামে আবারও রাস্তায় নামছে ব্যাটারিচালিত রিকশা?

চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় আবারও ব্যাটারিচালিত রিকশা নামানোর ঘোষণা দিয়েছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও অটোবাইক মালিক ফেডারেশন। নিরাপদ সড়কের দাবিতে সারাদেশ যখন উত্তাল, ঠিক সেই সময়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা সড়কে নামানোর ঘোষণা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলবে বলে আশঙ্কা করছে সচেতন মহল।

Advertisement

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা সংগঠনের নেতারা জানান, আজ মঙ্গলবার (৭ আগস্ট) থেকে নগরের বিভিন্ন সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল আবার শুরু করার প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা। তাদের দাবি, শুধু চট্টগ্রাম নয় বরং সারাদেশে ৫০ লাখের বেশি রিকশা রাস্তায় নামানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার (৬ আগস্ট) দুপুরে প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেয়া হয়।

এদিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, নগরের সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করতে পারবে-এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা তাদের কাছে নেই।

অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রামে চলাচলকারী ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে অধিকাংশ সময় যানজট ও দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। এছাড়াও প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ অবৈধভাবে ব্যবহার হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। দেশের বাইরে থেকে আমদানিকৃত যন্ত্রাংশের পাশাপাশি দেশি নিম্নমানের যন্ত্রাংশ দিয়ে স্থানীয়ভাবে সংযোজন করে এ ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো তৈরি করা হয়।

Advertisement

অটোরিকশা ও অটোবাইক সার্ভিসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবুল কালাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আজ থেকে বাংলাদেশ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও অটোবাইক সার্ভিস লিমিটেড এবং বাংলাদেশ আওয়ামী ব্যাটারিচালিত অটোরিক্শা ও অটোবাইক মালিক ফেডারেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও অটোবাইক নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে ৮টি জোনে অলিগলিতে চলাচল করবে।’

‘শুধু চট্টগ্রাম নয়, দেশে ৫০ লাখের বেশি রিকশা রাস্তায় নামানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ট্যাক্স এবং বছরে রিকশার নম্বর প্লেট বাবদ সিটি কর্পোরেশনকে ৪ হাজার টাকা পরিশোধ করে আইন মেনে এই অটোরিকশা চালানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।’

তিনি দাবি করেন, বছরে নবায়ন ফি এক হাজার টাকা এবং এনবিআরকে এক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব প্রদান করে সরকারের লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়ে ও সরকারের অনুমোদন নিয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও বাইক চট্টগ্রামসহ সারাদেশে আজ থেকে চলাচল করবে।'

নগরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচলের বিষয়ে সরকারি কোনো নির্দেশনা আছে কি না জানতে চাইলে নগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) হারুন অর রশিদ হাজারী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি গতকাল (সোমবার) পর্যন্ত ছুটিতে ছিলাম তাই বিস্তারিত বলতে পারছি না। তবে যতটুকু জানি এ সংক্রান্ত কোনো ঘোষণা নেই।’

Advertisement

এদিকে চট্টগ্রামের সচেতন ব্যক্তিরা মনে করছেন, সারাদেশে যখন নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন চলছে, তখন নগরে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নামানোর ঘোষনা আগুনে তেল ঢালার মতো। তারা মনে করেন, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় যানজট ও দুর্ঘটনার জন্য অন্যতম দায়ী বাহন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা।

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে অংশ নেয়া চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থী কল্লোল মহাজন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার কারণে প্রায় সময় মারাত্মক সব দুর্ঘটনা ঘটে। কয়েক বছর আগে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় নগরীতে এক এইচএসসি পরীক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। আমরা যখন নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায়, তখন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নামানোর ঘোষণা পুরোপুরি উল্টোটা।’

চকবাজার এলাকার বাসিন্দা জাহেদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে বাকলিয়া ও চকবাজার এলাকার রাস্তা দিয়ে এখন হাঁটাই যায় না। প্রতিদিনই কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটে। এমনকি এসব যানবাহনের ভিড়ে বাজারেও প্রবেশ করা যায় না।’

২০১৩ সালের শুরু থেকে চট্টগ্রামে চালু হয় ব্যাটারিচালিত রিকশা। সিটি কর্পোরেশনের অনুমতি না থাকলেও ক্রমশ বাড়তে থাকে এর সংখ্যা। ফলে যানজট তীব্র হওয়ার পাশাপাশি ঘটতে থাকে একের পর এক দুর্ঘটনা।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত ২০১৫ সালের ২০ মার্চ থেকে নগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ করে দেয় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ-সিএমপি। এর পরেও অনেক সময় পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলছিল এসব অবৈধ রিকশা।

সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, হাইকোর্টে দায়ের করা রিট পিটিশন নম্বর-১৯৯৭/২০১৪ এর পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম নগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এসআর/জেআইএম