‘বাংলাদেশ টি টোয়েন্টি ফরম্যাটে দুর্বল।’ ২০ ওভারের ক্রিকেটে করনীয় কাজগুলো এখনো ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি টাইগাররা। ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট পরিসরে তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ ও মোস্তাফিজরা তেমন স্বপ্রতিভ, সাবলীল ও উজ্জ্বল নয়। বরং বেশ আড়ষ্ট। ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই জড়তা আছে। কখন কি করতে হবে, টপ অর্ডার ব্যাটিংয়ের ধরণ কেমন হবে? তারা পাওয়ার প্লে’তে কি করবেন? মিডল অর্ডারের দায়িত্ব কি হবে আর ফিনিশিংটাই বা কেমন হবে- তা মোটেই আত্মস্থ ছিল না।
Advertisement
বোলিংয়েও তাই। পাওয়ার প্লে’তে কোন লাইন-লেন্থে বোলিং করতে হবে, ইনিংসের মাঝামাঝি বোলিং অ্যাপ্রোচ কি হবে এবং ডেথ ওভারের করণীয়ই বা কি হওয়া উচিৎ- এসব কাজে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা বেশ পিছিয়ে। আর তাইতো টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে টাইগারদের ইতিহাস ও পরিসংখ্যান দুর্বল, জীর্ণ-শীর্ণ।
দীর্ঘ এক যুগ না হলেও গত চার-পাঁচ বছর সমালোচকদের মুখে এমন কথা বার্তাই শোনা গেছে। সমালোচকরা সব সময়ই টি টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশকে আন্ডারডগ ভাবতেই পছন্দ করতেন। আর আন্ডারডগ না ভেবে কিইবা করার আছে? এইতো দু’মাস আগে আফগানিস্তানের কাছেও তিন ম্যাচের টি টোয়েন্টি সিরিজে খাবি খেয়েছে সাকিবের দল।
সেই দল ওয়েষ্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্টে চরম ভাবে পর্যুদস্ত হবার পর প্রথমে ওয়ানডে সিরিজ জিতলো আর তারপর প্রথম ম্যাচ হেরেও পরের দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ নিজেদের করে নিলো। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের তাদের মাটিতে হারানো, কোন সহজ কম্ম নয়।
Advertisement
অনেক বড় দলও যা পারেনি। এই অর্জন শুধু দেশের ক্রিকেটের ডানায় নতুন মুক্ত খচিত পালকই নয়, ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমানও। এ সিরিজ বিজয়ে রচিত হলো সাফল্যের নতুন ইতিহাসও। ক্রিকেট বিশ্বে রীতিমতো আলোড়ন, সমালোচকদের মুখ বন্ধ। উল্টো প্রশংসা-স্তুতির পালা শুরু। দেশেও অনেক ভক্ত টি টোয়েন্টি ফরম্যাটে প্রিয় জাতীয় দলের এমন সাজানো-গোছানো ও টিম পারফরম্যান্স দেখে অবাক, মুগ্ধ ও পুলকিত।
শুধু ভক্তদের কথা বলা কেনো, এবার ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ফ্লোরিডায় টি-টোয়েন্ট সিরিজের শেষ দুই ম্যাচে টাইগাররা যে সত্যিই অন্যরকম ক্রিকেট খেলেছে, ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে সীমাবদ্ধতাগুলো অতিক্রম করে জয়ের জন্য করণীয় কাজগুলো বেশ দক্ষতারা সাথেই করে দেখিয়েছে সাকিবের দল।
দুই ম্যাচেই অভিন্ন পরিকল্পনা ছিলো বাংলাদেশ দলের। আগে ব্যাট করে ক্যারিবীয়দের সামনে ছুঁড়ে দিতে ১৭০-১৮০ রানের টার্গেট। পরে আঁটসাঁট বোলিংয়ে বেঁধে রাখতে হবে এভিন লুইস, মারলন স্যামুয়েলস, আন্দ্রে রাসেলদের মতো দানবদের। দুই ম্যাচেই অসাধারণ দক্ষতার সহিত এই কাজ করে দেখিয়েছেন তামিম-সাকিবরা।
প্রথম ম্যাচে সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের ৫০ বলে ৯০ রানের ঝড়ো জুটিতে ১৭১ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। যা ডিফেন্ড করতে নেমে আবার দুর্দান্ত বোলিং করেন মোস্তাফিজ, নাজমুল অপু, সাকিব আল হাসান ও আবু হায়দার রনিরা। বাংলাদেশ পায় ১২ রানের জয়।
Advertisement
পরের ম্যাচে দৃশ্যপটে হাজির আগের দুই ম্যাচে তেমন কিছু করতে না পারা লিটন দাশ ও সবসময়ই বিপদের বন্ধু হিসেবে খ্যাত মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তাদের ঝড়ো ব্যাটে সিরিজের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ পায় ১৮৪ রানের বিশাল সংগ্রহ। বল হাতে আবারো নিজেকে মেলে ধরেন মোস্তাফিজ, তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন আবু হায়দার, সাকিব আল হাসানরা। বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশ পায় ১৯ রানের জয়। সিরিজ জিতে নেয় ২-১ ব্যবধানে।
সবমিলিয়ে সিরিজের প্রথম ম্যাচ হেরেও দুর্দান্ত টেম্পারম্যান্টের পরিচয় দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ঘুরে দাঁড়িয়েছে দারুণভাবে। দেখিয়েছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলার যথাযথ মানসিকতা। বলা চলে ওয়ানডের মতো সাদা বলের এই ফরম্যাটটাও নিজেদের মতো করে আত্মস্থ করে নিয়েছে বাংলাদেশ।
এআরবি/এসএএস/আরআইপি