ভ্রমণ

গাইবান্ধার যত ঐতিহাসিক স্থাপনা

অনেকেই জানতে চান শেকড়ের কথা, ইতিহাস-ঐতিহ্যের কথা। দেখতে চান ঐতিহাসিক সব স্থাপনা। এমন ভ্রমণপ্রিয় মানুষ ঘুরে আসতে পারেন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, সাদুল্লাপুর, সুন্দরগঞ্জ ও সাঘাটা উপজেলার রাজপ্রাসাদ, জমিদার ও জোতদার বাড়িগুলো থেকে। তাদের সুবিধার জন্য বিস্তারিত জানাচ্ছেন রওশন আলম পাপুল-

Advertisement

রাজা বিরাট প্রাসাদ: গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজাহার ইউনিয়নের রাজা বিরাট এলাকায় অবস্থিত এই রাজপ্রাসাদ। রাজপ্রাসাদটি এখন আর দেখার মতো নেই। বহুবছর আগেই প্রাসাদটি মাটির নিচে চলে গেছে। প্রাসাদটির উপরের অংশ এখনো দেখা যায়। তবে সেটি দেখতে শুধু একটি মাটির ঢিবি মাত্র। এছাড়া রাজপ্রাসাদটির ইট দেখা যায় বাহির থেকে। প্রচলিত আছে, এই রাজার কারণে গাইবান্ধা মহকুমাকে জেলা হিসেবে ঘোষণার সময় নামকরণ করা হয় ‘গাইবান্ধা’।

ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের গোবিন্দগঞ্জ চৌমাথা থেকে পশ্চিম দিকে সিএনজিযোগে যাওয়া যাবে রাজপ্রাসাদে। যেতে হয় গোবিন্দগঞ্জ-ঘোড়াঘাট আঞ্চলিক মহাসড়কের কাটামোড় থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের সড়ক দিয়ে। এ রাজপ্রাসাদে যেতে গোবিন্দগঞ্জ চৌমাথা থেকে প্রতিজনের খরচ হবে ২৫-৩০ টাকা।

বর্ধণকুঠি: এটি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা শহরের সরকারি কলেজের সাথে অবস্থিত। সুদূর প্রাচীনকাল থেকে বর্ধণকুঠি তৎকালীন রাজা-বাদশাহদের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ইউনিট ছিল। ষোড়শ শতাব্দীর শুরুতে রাজা রামপাল এখানে বাসুদেব মন্দির নির্মাণ করেন। তখন রাজা মানসিংহ বাংলার সুবাদার ছিলেন। ইংরেজ আমলে তা জমিদার বাড়ি হিসেবে খ্যাতি পায়। সর্বশেষ বর্ধণকুঠির সাথে জড়িত সৈলেশ চন্দ্র নামটি পাওয়া যায়।

Advertisement

> আরও পড়ুন- ঈদে ঘুরে আসুন কাট্টলী সমুদ্রসৈকত

ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার চৌমাথায় নেমে পূর্বদিকে মহিমাগঞ্জ সড়কের উত্তর পাশে অবস্থিত বর্ধণকুঠিতে রিকশাযোগেই যাওয়া যায়। ১৯৬৫ সালে বর্ধণকুঠির এ জায়গায় গড়ে উঠেছে গোবিন্দগঞ্জ কলেজ। এছাড়া গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে বোনারপাড়া-মহিমাগঞ্জ হয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা শহরের চৌমাথায় যাওয়ার পথে হাতের ডানপাশেই এ কুঠি। রিকশাযোগে গোবিন্দগঞ্জ চৌমাথা থেকে বর্ধণকুঠিতে যেতে দু’জনের খরচ হবে ১৫-২০ টাকা।

নলডাঙ্গা জমিদার বাড়ি: সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের কালীবাড়ী পাড়া গ্রামে এটি। উপমহাদেশের প্রখ্যাত নাট্যকার-শিল্পী, চলচ্চিত্রকার তুলসী লাহিড়ীর জমিদার বাড়িটিও নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। বর্তমানে জমিদার তুলসী লাহিড়ীর বংশধর থাকেন এ বাড়িতে।

গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে যে কোন ট্রেনযোগে (আন্তঃনগর ছাড়া) সরাসরি নলডাঙ্গা রেলস্টেশনে নেমে যাওয়া যায় এ বাড়িতে। যা স্টেশনের পশ্চিম-উত্তর দিকে অবস্থিত। এছাড়া সড়কপথে গাইবান্ধা-সাদুল্লাপুর-নলডাঙ্গা সড়ক, গাইবান্ধা-লক্ষ্মীপুর-ধোপাডাঙ্গা নতুনবাজার-নলডাঙ্গা সড়ক, সুন্দরগঞ্জ-বামনডাঙ্গা-নলডাঙ্গা সড়ক দিয়ে যাওয়া যায় সিএনজিযোগে। নলডাঙ্গা রেলস্টেশন থেকে জমিদার বাড়িতে যেতে দু’জনের রিকশা ভাড়া বাবদ ব্যয় হবে ১০-১৫ টাকা।

Advertisement

প্যারীমাধবের জোতদার বাড়ি: প্যারীমাধবের জোতদার বাড়ি সাদুল্লাপুর উপজেলার কামারপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব কেশালীডাঙ্গা গ্রামে কামারপাড়া ডিগ্রি কলেজের সাথে অবস্থিত। তার বিশাল জমিজমার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। তাই শিক্ষানুরাগী হিসেবে প্যারীমাধব সরকারের নামটি ছড়িয়ে রয়েছে এ এলাকায়। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে থাইল্যান্ডের রাজকন্যা মাহা চাক্রী শিরিনধর্ণ জোতদার বাড়িটি পরিদর্শন করে গেছেন।

> আরও পড়ুন- ঘুরে আসুন হরিণঘাটা বনাঞ্চল

গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে যে কোন ট্রেনযোগে (আন্তঃনগর ছাড়া) সরাসরি কামারপাড়া রেলস্টেশনে নেমে যাওয়া যাবে এই জোতদার বাড়িতে। যা স্টেশনের পূর্ব-উত্তর দিকে অবস্থিত। এছাড়া সড়কপথে গাইবান্ধা-সাদুল্লাপুর-কামারপাড়া সড়ক, গাইবান্ধা-লক্ষ্মীপুর-কামারপাড়া সড়ক, সুন্দরগঞ্জ-বামনডাঙ্গা-নলডাঙ্গা-কামারপাড়া সড়ক, সুন্দরগঞ্জ-ইন্দ্রাপাড়-কামারপাড়া সড়ক দিয়ে যাওয়া যায় সিএনজিযোগে। কামারপাড়া রেলস্টেশন থেকে প্যারীমাধবের বাড়িতে যেতে দু’জনের জন্য ১০ টাকা রিকশা ভাড়া দিতে হবে।

রামজীবন জোতদার বাড়ি: জোতদার ইয়াকুব উদ্দিন সরদার থাকতেন এ বাড়িতে। বাড়িটিতে কেউ না থাকলেও এখন আশেপাশে নতুন বাড়ি তৈরি করে থাকেন তার বংশধররা। রয়েছে একটি শিয়া মিনারও। জোতদার বাড়িটি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামজীবন ইউনিয়নের কাশদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন কাশদহ গ্রামে অবস্থিত।

গাইবান্ধা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শহর থেকে সিএনজি ও অটোরিকশা দিয়েই যাওয়া যায় জোতদার বাড়িতে। নামতে হবে গাইবান্ধা-লক্ষ্মীপুর-বালাআটা-সুন্দরগঞ্জ সড়কের পাশে কাশদহ গ্রামে। গাইবান্ধা পুরাতন জেলখানার মোড় থেকে ম্যাজিক গাড়িতে প্রতিজনের লাগবে ২০-২৫ টাকা করে।

হাটভরতখালী জোতদার বাড়ি: যমুনা নদীর তীরে সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়নের হাটভরতখালী এলাকায় কালের সাক্ষী হিসেবে এখনো টিকে আছে বাড়িটি। অনেক আগেই এই জোতদারের বংশধররা ভারতে চলে গেছেন বলে জানায় স্থানীয়রা। এ বাড়ির সাথে রমনীকান্ত রায় বাহাদুর নামটি পাওয়া যায়।

> আরও পড়ুন- হামহামে জলের সঙ্গে সখ্য

গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে সিএনজিযোগে বাদিয়াখালী-উল্লাবাজার হয়ে সরাসরি যাওয়া যাবে এ বাড়িতে। গাইবান্ধা পৌর এলাকার ভিএইড রোডের মুন্সিপাড়ার সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে প্রতিজনের লাগবে ৩৫-৪০ টাকা করে। এছাড়া যে কোন ট্রেনযোগে বোনারপাড়া জংশনে নেমে সিএনজিযোগে বোনারপাড়া কলেজের সামনে দিয়ে যাওয়া যাবে। প্রতিজনের খরচ হবে ২০-২৫ টাকা।

এসইউ/পিআর