ফজলুর রহমান সরদার (৫৫)। যশোরের শার্শা উপজেলার শিয়ালকোনা গাতিপাড়া গ্রামের দীন আলি সরদারের ছেলে। তিন ভায়ের মধ্যে সে দ্বিতীয়। ছোট ভাই আলাদা সংসার করলেও তিনি ও তার বড় ভাই বাবলুর রহমান সরদারের এক সংসারেই বসবাস। এ বছর শার্শা উপজেলায় এককভাবে সবচেয়ে বড় গরু ও ছাগল কোরবানির জন্য প্রস্তুত করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এই দুই ভাই। প্রতিদিন মানুষ এই গরু দেখতে ভিড় করছেন তাদের বাড়িতে।
Advertisement
স্মৃতিচারণ করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ফজলুর রহমান বলেন, ‘১৯৯৬ সাল। আমরা দু’ভাই ভ্যান চালিয়ে কোনো রকম সংসার চালাতাম। ঈদের দিনও আমরা ভ্যান চালাইছি, না হলে চাল কেনা হতো না। ভ্যান চালিয়ে স্কুল মাঠে গেলাম মিসকিনের গোস্ত আনতে। কিন্তু দেরি হওয়ায় গোস্ত না দিয়ে মাতবররা আমাদের দুই ভাইকে মেরে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। ওই বছর সন্তানদের মুখে একটুকরো গোস্তও তুলে দিতি পারিনি।’
‘২২ বছর আগে কোরবানির গোস্ত না পেয়ে ফিরে এসে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে বলেছিলাম আগামী বছর যাতে আমরা কোরবানি দিতে পারি সেই ক্ষমতা আমাদের দিও। মহান আল্লাহ আমাদের কথা শুনেছেন। পরের বছর দুই ভাই ভ্যান চালিয়ে টাকা জমিয়ে একটা ছাগল কোরবানি দিয়েছিলাম। তারপর থেকে আল্লাহর রহমতে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন প্রতিবছর কোরবানি দিই। চার-পাঁচ কেজি গোস্ত রেখে বাকি গোস্ত আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশী ও গ্রামবাসীর মধ্যে বিলিয়ে দিই’ বলছিলেন ফজলুর।
ফজলুর বলেন, এবার কোরবানির জন্য একটি গরু ও একটি ছাগল প্রস্তুত করেছি। গরুটির ১৬ থেকে ১৭ মণ আর ছাগলটির ৫০ কেজির মতো মাংস হবে।
Advertisement
এক বছর আগে কেনা গরুটিকে সন্তানের মতো লালন পালন করছেন ফজলুরের স্ত্রী আনিছা বেগম ও ভাবি কল্পনা বেগম।
কল্পনা বেগম বলেন, ‘এত বড় গরু বাইরি (বাইরে) বের করা যায় না। তাই গোয়াল ঘরের মধ্যে রেখেই পুষছি। প্রতিদিন গরুর গা (শরীর) ধুয়াই। খাবার দেই। ভালোই লাগে।’
একজন ভ্যানচালক হয়ে আজ তাদের উত্থানের পেছনের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ফজলুর বলেন, কুড়ি বছর আগে দুইভাই পরামর্শ করে সংসারে সুখ আনতে শেষ সম্বল জমিতে লাগানো গাছগুলো বিক্রি করি। ওই টাকা দিয়ে বড় ভাইকে মালয়েশিয়া পাঠাই। পরে বড় ভাই আমার বড় ছেলে নুরুন্নবীকেও মালয়েশিয়া নিয়ে যায়। এর পর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আল্লাহ আমাদের সবকিছু পূরণ করেছেন। আমরা এখন সুখি পরিবার।
ফজলুর বাড়িতে তাদের কোরবানির বড় গরু ও ছাগল দেখতে আসা নজরুল, আলামিন ও কুদ্দুস বলেন, উপজেলায় কোনো বছরই এত বড় গরু-ছাগল কোরবানির খবর শুনিনি। তাই এখানে দেখতে এসেছি।
Advertisement
জামাল হোসেন/এফএ/জেআইএম