নানা মুনির নানা মত। সমালোচকরা বলেন, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বড্ড দুর্বল ও কমজোরি দল বাংলাদেশ। আবার এক পক্ষের জোর দাবি, ২০ ওভারের ক্রিকেট পারে না টাইগাররা। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটে জিততে যা যা দরকার, সাফল্যের বন্দরে পৌঁছাতে যে সব অতি প্রয়োজনীয় তথা অত্যাবশ্যকীয় উপাদান একান্তই জরুরি- তা নেই বাংলাদেশের।
Advertisement
আবার অন্য পক্ষের কথা, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ এখন সঠিক কম্বিনেশনই খুঁজে পায়নি। এ ফরম্যাট উপযোগী দলই এখন পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি। ওপেনিং থেকে শুরু করে লেট অর্ডার ও ফিনিশিং পয়েন্ট- সব জায়গায়ই দুর্বলতা ও ফাঁক-ফোকর আছে। একইভাবে বোলিংটাও ঠিক এ ফরম্যাট উপযোগী নয়।
সব মিলে লাইনআপে দুর্বলতা, লক্ষ্য-পরিকল্পনা ও কৌশলে ত্রুটি, দুর্বলতা এবং সময়মতো বাস্তব প্রায়োগিক ক্ষমতায় কমতি- সব মিলে টিম বাংলাদেশের প্রায় ‘সারা অঙ্গেই ব্যথা। অষুধ দিব কোথা’র মতোই বেশ কিছু জায়গায় ফাঁক-ফোকর। যা সারতে বেশ কিছু জায়গায় দাওয়াই দিতে হবে। তারচেয়ে বড় কথা, সে ব্যথা প্রশমণও সহজ নয়। অল্প সময়ে তা নিরসনও হবে না। তাইতো ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে না।
ওপরের কথাগুলোকে অমূলক ভাবার অবকাশ কম। কারণ ইতিহাস-পরিসংখ্যানই সাক্ষী দিচ্ছে ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট ফরম্যাটে বাংলাদেশের পারফরমেন্স খুবই অনুজ্জ্বল। রেকর্ডও খারাপ। আগের পরিসংখ্যানে নাইবা গেলাম। শুধু গত দুই বছর মানে ২০১৭, ২০১৮ সালের পরিসংখ্যান দেখি আসুন। এই দু’বছর দেশে ও বিদেশে ১৮টি টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন টাইগাররা। ২০১৭ সালে সাতটি ও ২০১৮ সালে রোববারের ম্যাচের আগে পর্যন্ত ১১টি ম্যাচে অংশ নিয়েছে সাকিবের দল। এর মধ্যে ২০১৭ সালে সাত ম্যাচের একটিতে শুধু জয়ের রেকর্ড আছে। সেটা মাশরাফি বিন মর্তুজার বিদায়ী ম্যাচে। ওই বছর ৬ এপ্রিল কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন পারফরমার সাকিব আল হাসানের নজরকাড়া ও ম্যাচ জেতানো অলারাউন্ড নৈপুণ্যের সুবাদে ৪৫ রানে জিতেছিল বাংলাদেশ। সাকিব ৩১ বলে ৩৮ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলার পর বল হাতে ২৪ রানে ৩ উইকেট দখল করেছিলেন।
Advertisement
বাকি ছয়টিতেই পরাজয় সঙ্গী। এ বছর খেলা ১১ ম্যাচের নয়টিতেও হেরেছে টাইগাররা। জিতেছে মাত্র দুটিতে। ওই দুই জয়ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। তার মানে গত দুই বছর ১৮ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ছাড়া আর কাউকে হারানো সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে আফগানিস্তানের সাথেও তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হবার রেকর্ড আছে।
এবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ দুই ম্যাচে সে ব্যর্থতার জাল ছিন্ন করে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে কি-না, সাকিবের দল পরাজয়ের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আলোয় ফিরতে পারবে কি না? তা নিয়ে রাজ্যের জল্পনা-কল্পনা। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই মাঠে বাংলাদেশ আগে কখনো খেলেননি। তবে ফ্লোরিডার লডার হিলের এই নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যে ঘেরা স্টেডিয়ামে ক্যারিবীয় প্রিমিয়ার লিগ মানে সিপিএল খেলার রেকর্ড আছে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের।
ভাবা হচ্ছিলো অধিনায়ক ও প্রধান চালিকাশক্তি সাকিবের ফ্লোরিডার মাঠ ও উইকেট সম্পর্কে ধারনা পরিষ্কার। আসলে তা নয়। এ স্টেডিয়ামের উইকেটের চরিত্র কি এবং গতি-প্রকৃতি কেমন? জানতে চাওয়া হলে সাকিব জবাব দিতে গিয়ে যে সব কথা বলেছেন, তা শুনে মনে হয় উইকেট সম্পর্কে টাইগার অধিনায়কের ধারণা পরিষ্কার নয়।
রোববার বাংলাদেশ সময় রোববার, ৫ আগস্ট ভোর ৬টায় ফ্লোরিডার যে মাঠে খেলা হবে, সেই লডার স্টেডিয়ামের উইকেট সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা- এ তথ্য জানিয়ে সাকিব বলে ওঠেন, ‘গত বছর সিপিএলে যখন এই মাঠে খেলেছিলাম, তখনকার উইকেট থেকে এখনকার উইকেট অনেকটাই ভিন্ন রকম। আজকের অনুশীলনেই বোঝা যাবে আসলে উইকেট কেমন হবে। আমরা মূল উইকেটের পাশের উইকেটেই অনুশীলন করছি। অনুশীলনের উইকেট আর ম্যাচের উইকেটে খুব বেশি পার্থক্য থাকবে বলে মনে হয় না। আজকের অনুশীলনের পর আমরা বিচার করতে পারব, উইকেট কেমন হতে পারে। কারণ দেখতে এক রকম মনে হলেও, অনেক সময় উইকেট ভিন্ন রকম হয়। অনুশীলনটা হলে ভালো বলা যাবে, তবে দেখে মনে হচ্ছে গত ম্যাচের থেকে আরেকটু ভালো হবে এই উইকেট।’
Advertisement
এদিকে এ ম্যাচ দেখতে যুক্তরাষ্ট্র ও বিশেষ করে ফ্লোরিডা প্রবাসীদের রাজ্যের উৎসাহ-উদ্দীপনা অনেকেই অন্য রাজ্য থেকে ফ্লোরিডায় ছুটে গেছেন। রোববার ভোরের ম্যাচে অনেকে প্রবাসী বাংলাদেশি ভক্ত ও সমর্থক উপস্থিত থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশের বাইরে ‘সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারে’ খেলতে এসেও প্রবাসি বাঙালিদের অকুণ্ঠ সমর্থন-দল চাঙ্গার একটা রসদ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
অধিনায়ক সাকিবও খানিক পুলকিত। খানিক রোমাঞ্চিতও। তার কথা, ‘এ ম্যাচে তার দল সবার জন্য এক্সাইটিং হবে সময়টা। এখানে অনেক বাংলাদেশি দর্শক থাকবে, তাই সাবার জন্যই সময়টা মজার হবে।’
এদিকে সাকিব চান সেন্ট কিটসে হওয়া আগের ম্যাচ থেকে শিক্ষা নিতে। তার কথায় পরিষ্কার ওই ম্যাচের ভুল ত্রুটি কাটিয়ে ভালো পারফরম করলে একটা সুযোগ থাকবে অবশ্যই। তাই তো মুখে এমন কথা, ‘আমাদের সুযোগ ছিল, বেশ কিছু রান করার। কয়েকটা কারণে, আমরা সেটা পারিনি। ওই জায়গাগুলোতে আমাদের উন্নতি হলে অবশ্যই আরও কিছু রান করা সম্ভব। আর উইকেট যদি আগের ম্যাচের মতোই আচরণ করে, তাহলে আমাদের বড় সংগ্রহ গড়ার সুযোগ থাকবে।’
বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রথম ওভারে তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারের উইকেট হারানো আর পাওয়ার প্লে’র ছয় ওভার শেষ না হতেই আরও দুই নির্ভরযোগ্য উইলোবাজ লিটন দাস ও অধিনায়ক সাকিব মাত্র ৪৩ রানের মধ্যে ফিরে যাবার পরও ১০ ওভার পূর্ণ হবার আগেই প্রায় শতরান পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল; কিন্তু ইনিংসের অর্ধেকটা বাকি থাকতেও পরের ১০ ওভারে বাংলাদেশ মিডল ও লেট অর্ডার ব্যাটসম্যানরা চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিলে রান ১৪০’র ঘরে আটকে থাকে।
মাহমুদউল্লাহ, মুশফিক ও আরিফুল পরের দিকে ইনিংসকে নতুনভাবে সাজানোর সম্ভাবনা জাগিয়েও পারেননি। শেষ ৬৩ বলে ৫ উইকেট হাতে থাকার পরও রান উঠেছে মোটে ৫৩। মাহমুদউল্লাহ-মুশফিক ও আরিফুলরা একটু বুদ্ধি খাটিয়ে শেষ দিকে উইকেটে টিকে থাকলে অনায়াসে শেষ ১০ ওভারে ৭৫ থেকে ৮০ রান করা যেত। তাহলে বৃষ্টি বিঘ্নিত ও ডাকওয়ার্থ লুইস মেথডে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১১ ওভারে ৯১ রানের বদলে ১১৫ থেকে ১২০ রানের টার্গেট দাঁড়াতো । তখন খেলার চালচিত্র ও ফল ভিন্ন হতেও পাররতো।
দেখা যাক, রোববার ভোরে নতুন সূর্যের দেখা মেলে কি-না?
এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম