জাতীয়

ডেকে যাত্রী তুলছেন মোটরসাইকেল চালকরা

যাবেন? উত্তরা ৩০০, মোহাম্মদপুর ২৫০, গুলশান ১৮০ টাকা। কারওয়ান বাজার সিগন্যালের সামনে ফার্মগেটের দিকে রাস্তায় দাঁড়ানো ১৫/২০টা মোটরসাইকেল দাঁড়িয়ে রয়েছে। ভাড়ার বিনিময়ে যাত্রীদের নিয়ে যাচ্ছেন কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে।

Advertisement

বেশি মূল্যে ভাড়া মারার কারণেই মোটরসাইকেল আরোহীদের জটলা বেধে আছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ হাক-ডাক ছাড়ছেন ‘যাবেন নাকি? মিরপুর...মিরপুর। মিরপুর ১৫০ টাকা। উত্তরা ৩০০টাকা। এদিকে কিছুক্ষণের মধ্যেই যাত্রী এসে এসব মোটরসাইকেলে চড়ে গন্তব্যে চলে যাচ্ছেন।

আর যারা মোটরসাইকেল নিয়ে এখানে যাত্রীর অপেক্ষায় আছেন তাদের বেশিরভাগেরই নিজের মোটরসাইকেল। রাজধানীতে গণপরিবহন চলাচল না করার সুযোগে এভাবেই ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলে ভাড়ার বিনিময়ে যাত্রী আনা নেয়ার কাজ করছেন তারা।

শনিবার বিকেলে কারওয়ান বাজার সিগন্যাল থেকে যাত্রী আনা নেয়ার পন্থা দেখে আলাপ হয় সেখানে উপস্থিত মোটরসাইকেল চালকদের সঙ্গে। তাদের মধ্যে একজন খোরশেদ আলম। বলেন, এটা আমার নিজের মোটরসাইকেল। ছোট-খাটো ব্যবসা করি। কয়েকদিন ধরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে গণপরিবহন চলছে না। ফলে কর্মজীবী মানুষ পড়েছে ব্যাপক বিড়ম্বনায়।

Advertisement

তিনি বলেন, গত চার দিন আগে আমি মিরপুর থাকে মোটরসাইকেলে শাহবাগ যাচ্ছিলাম, তখন এক যাত্রী আমার গাড়ি থামিয়ে বললো আমিও ওইদিক যাবো নিয়ে যান, ভাড়া দিব। ওইদিন নিয়ে গেলাম ২০০ টাকা দিল।

এরপর ফিরে আসার সময় আবার নিজ ইচ্ছায় যাত্রী ডাকলাম, নিয়ে এলাম মিরপুর। এরপর থেকে প্রতিদিনই এভাবে ট্রিপ মারতে রাস্তায় মোটরসাইকেল বের করেছি। আজ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ৭ বার মিরপুর থেকে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ যাওয়া আসা করেছি। প্রতি ট্রিপেই ১৫০/২০০ টাকা করে পেয়েছি। আর রাস্তাও পুরো ফাঁকা যেতে আসতে বেশি সময় লাগছে না। ফলে আমারও টাকা ইনকাম হচ্ছে, গণপরিবহনহীন রাজধানীতে যাত্রীদেরও উপকার হচ্ছে। গত দুই দিন এত বাইকার ছিল না, আজই দেখছি অনেক বাইকার এসে এভাবে ট্রিপ মারছে।

ভাড়ার বিনিময়ে যাত্রী আনা নেয়ার কাজে নিয়োজিত আরেক মোটরসাইকেল আরোহী তুহিন আহমেদ। রাজধানীর একটি কলেজে অনার্স ৪র্থ বর্ষে পড়ছেন। বলেন, রাজধানীতে যেহেতু গণপরিবহন চলছে না, যাত্রীদের গন্তব্যে চাপও বেশি, তাই যে যেভাবে পারছেন যাতায়াত করছেন।

তিনি বলেন, আমি আর আমার বন্ধু এক আঙ্কেলের কাছে এভাবে যাত্রী আনা নেয়ার কথা শুনে আজই বের হয়েছি। আমাদের বাসা খিলক্ষেত তাই এদিক থেকে উত্তরার দিকের যাত্রী নিচ্ছি, আবার ওদিক থেকে যাত্রী নিয়ে এদিকে ফিরে আসছি। প্রতি ট্রিপেই ৩০০/৩৫০ ভাড়া নিচ্ছি। রাইড শেয়ারিং এর কোন অ্যাপসে নয়, এই ট্রিপগুলো মারছি নিজের উদ্যোগেই।

Advertisement

এমন সময় এই সিগ্যানালের সামনে ফাঁকা জায়গায় এসে দাঁড়ালো আরেক মোটরসাইকেল আরোহী। তিনিও এদিক-ওদিক তাকিয়ে যাত্রী খুঁজছিলেন বলে মনে হলো। তবে পোশাক-আশাক দেখে মনে হচ্ছিল চাকরিজীবী। এগিয়ে গিয়ে কথা বলে জানা গেল তিনি একজন বেসরকারি চাকরিজীবী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরে গণপরিবহন চলছে না। এ কারণে অফিসগামী এবং ফেরত মানুষের বিড়ম্বনার শেষ নেই। আমার অফিস বাংলামোটর, আর বাসা মোহাম্মাদপুর। বিগত কয়েকদিন ধরে যাওয়া-আসার সময় ভাড়ার বিনিময়ে যাত্রী আনা-নেয়া করছি। ফলে আমারও তেল খরচ হলো, যাত্রীদের উপকার হলো।

আবার ওই মোটরসাইকেলেই মোহাম্মাদপুর যাওয়ার জন্য উঠে বসলেন সাইফুল ইসলাম নামের একজন যাত্রী। তিনি বলেন, গণপরিবহন না চলার এই কদিন এখানে প্রতিদিনই বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য এভাবে মোটরসাইকেল পাওয়া যায়। চালকদেরও উপকার হয়, যাত্রীরাও উপকৃত হয়। যদিও গণপরিবহন না থাকার সুযোগে তারা বেশি ভাড়া চান, আর যাত্রীদের তাতেই বাধ্য হয়ে যেতে হয়।

‘সড়কে এখন বাস চলাচল নিরাপদ নয়’ এমন কারণ দেখিয়ে ঢাকা শহরের সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে পরিবহন মালিকরা। সড়কে চলছে তাদের অঘোষিত ধর্মঘট।

এদিকে গত রোববার কুর্মিটোলায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিবাদে শনিবার সপ্তম দিনের মতো রাস্তায় আন্দোলন অব্যাহত রেখেছিল শিক্ষার্থীরা। যে কারণে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রেখেছে পরিবহন মালিকরা। গণপরিবহন না থাকায় সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

গণপরিবহন চলাচল না করা বিষয়ে বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, নিরাপত্তাহীনতার কারণেই মালিক-শ্রমিকরা নিজ উদ্যোগে গাড়ি বন্ধ রেখেছে। পরিবহন মালিক সমিতি বা শ্রমিক সংগঠনগুলোর আনুষ্ঠানিক কোনো ধর্মঘট নেই।

উল্লেখ্য গত রোববার (২৯ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে এমইএস বাস স্ট্যান্ডে জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। এছাড়া আহত হন আরও ১০/১৫ জন শিক্ষার্থী। এই ঘটনায় আন্দোলন করেছে দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা।

জাবালে নূরের পরিবহনের বাসের চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান ওই দুই শিক্ষার্থী। তারা হলেন- শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল করিম রাজিব।

এএস/এমআরএম/জেআইএম