‘বিনা উসকানিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে হামলার চেষ্টা করেছে ছাত্ররূপী বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীরা। হামলায় আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।’ এমন দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
Advertisement
শনিবার আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় হামলাকারীদের বাধা দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলেও জানান ওবায়দুল কাদের। আহতদের মধ্যে ১৭ জন জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে চিকিৎধীন।
কাদের বলেন, তারা এই অফিসের দিকে তেড়ে আসছে, কোনো ছাত্রছাত্রীর এই সাহস আছে? এরা স্কুলের ছাত্রছাত্রী নয়, এরা কলেজের ছাত্রছাত্রী নয়। এরা রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত, যারা আজ দেশকে অশান্ত করতে চায়।
বাংলাদেশে অশান্তি কোনোদিনও দূর হবে না, যদি বিএনপি নামক একই দলটির দাপটের অস্তিত্ব থাকে। সে জন্য, এ দেশের অশান্তি দূর করার জন্য বিএনপির ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত সকল নেতার পদত্যাগ আহ্বান করছি। এরা না সরলে দেশ শান্ত হবে না। সব অশান্তির মূল এরা।
Advertisement
আহতদের মধ্যে একজন মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে সিসিইউ’তে আছেন বলেও আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, 'ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অশুভ চেষ্টায় ব্যস্ত বিএনপি। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য পাঁচ হাজার লোক নিয়ে একটা সভা, সমাবেশ, আন্দোলন, মিছিল তারা করতে পারেনি। তারা তাদের চেয়ারপারসনের জন্য আন্দোলন করতে ব্যর্থ। তারা তাদের ব্যর্থতাকে ঢাকতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের যে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ওপর ভরসা করছে। ব্যর্থতার দায় নিয়ে বিএনপির ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত সকল নেতাকর্মীর পদত্যাগ করা উচিত।'
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যালয়ে হামলা উদ্দেশ্যমূলক উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'যে পাথরগুলো মারা হয়েছে, তা দেখে আমরা বলতে পারি, এই হামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক। এই হামলা ছাত্রদের হামলা নয়। এই ধরনের পাথর পথে ঘাটে পাওয়া যায় না। এই পাথর তারা ব্যাগে করে নিয়ে এসেছে, তারা স্কুল ড্রেস ও আইডি কার্ড বানিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে হামলা করেছে। হামলার ধরণ দেখে আমরা বলতে পারি, এই হামলা বিএনপি-জামায়াতের প্রশিক্ষিত ক্যাডার বাহিনী দ্বারা চালানো হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সব দাবি প্রধানমন্ত্রী মেনে নিয়েছেন। দাবিগুলো খুব দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। পুলিশকে কোনো প্রকার বল প্রয়োগ না করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।’
Advertisement
‘সাংবাদিক ভাইদের কাছে অনুরোধ, যা দেখবেন তাই লিখবেন। কারো শোনা কথায় কান দেবেন না। আমরা বিশ্বাস করি, আপনারা আপনাদের দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা করে যাবেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আপশক্তির মুখোস উম্মোচন করতে ভূমিকা রাখবেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নমনীয়। তাই তারা কিছু করতে পারছে না। তাই বলে, তাদের ব্যর্থ বলা ঠিক হবে না।'
উল্লেখ্য, গত রোববার (২৯ জুলাই) দুপুরে কালশি ফ্লাইওভার থেকে নামার মুখে এমইএস বাসস্ট্যান্ডে ১৫-২০ জন শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে ছিল। জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস ফ্লাইওভার থেকে নামার সময় মুখেই দাঁড়িয়ে যায়। তখন পেছন থেকে আরেকটি দ্রুতগতি সম্পন্ন জাবালে নূরের বাস ওভারটেক করে সামনে আসতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। নিমিষেই বাসটি ওঠে পড়ে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর। চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় দুইজন। এ ছাড়া আহত হয় আরও ১৩ জন শিক্ষার্থী।
নিহত দুজন হলো- শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল করিম রাজিব।
ওই ঘটনায় গত রোববার রাতেই নিহত মিমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৩৩। এ ঘটনায় জাবালে নূরের তিনটি বাসের তিন চালক ও দুই হেলপারকে গ্রেফতার করে র্যাব।
আন্দোলনে নেমে নৌমন্ত্রীর পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবি করে শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো হলো- দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় দায়ী বেপরোয়া ড্রাইভারকে ফাঁসি দিতে হবে, নৌ-পরিবহনমন্ত্রীকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে, শিক্ষার্থীদের চলাচলে এমইএস ফুটওভার ব্রিজ বা বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, প্রত্যেক সড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় স্প্রিড ব্রেকার দিতে হবে, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্রছাত্রীদের দায়ভর সরকারকে নিতে হবে, শিক্ষার্থীরা বাস থামানোর সিগন্যাল দিলে- থামিয়ে তাদের নিতে হবে, শুধু ঢাকা নয়, সারা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে, ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল বন্ধ ও লাইসেন্স ছাড়া চালকরা গাড়ি চালাতে পারবেন না এবং বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া যাবে না।
এইউএ/এফএইচএস/জেডএ/আরআইপি