হত্যা ইসলামে জঘন্য অপরাধ। আর মানুষ হত্যা মানবতা হত্যার শামিল। বিনা কারণে অন্যায়ভাবে অহরহ চলছে মানুষ হত্যার মহড়া। মানুষের মধ্যে বিন্দুমাত্র মমত্ববোধও কাজ করছে না।
Advertisement
ইসলামের তৃতীয় খলিফা হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন বিদ্রোহীদের দ্বারা নিজ ঘরে আবদ্ধ তখন তিনি প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদিস বর্ণনা করে বিদ্রোহীদের শুনিয়ে দেন এবং নিজের প্রতি তার বিশ্লেষণ করে বুঝিয়ে দেন যে, ইসলাম কোন কোন পর্যায়ে হত্যা বা মৃত্যুদণ্ড দেয়ার অধিকার দিয়েছে।
হজরত আবু ওমামা ইবনে সাহল ইবনে হুনাইফ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বিদ্রোহীদের দ্বারা বাড়িতে অবরুদ্ধ থাকাকালে (বিদ্রোহীদের) বলেন, আমি আল্লাহর শপথ করে তোমাদেরকে বলছি, ‘তোমরা কি জান? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
‘তিনটি অপরাধ ব্যতিত কোনো মুসলমানকে হত্যা করার বৈধ নয় (সে অপরাধ ৩টি হলো)-
Advertisement
- বিয়ে করার পর (বিবাহিত ব্যক্তির) জিনা বা ব্যভিচার করা;- ইসলাম গ্রহণের পর (ইসলাম) ধর্ম ত্যাগ করা এবং- কোনো ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে খুন করা। এগুলোর যে কোনো একটি অপরাধের কারণে (দোষী ব্যক্তিকে) মৃত্যুদণ্ড দেয়া যায়।
(হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু) আল্লাহর শপথ (করে বলছেন)!-- আমি জাহেলি যুগেও জিনা করিনি, ইসলাম কবুলের পরও তা করিনি।- আমি আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে যেদিন আনুগত্যের শপথ (বাইআত) নিয়েছি, সেদিন থেকে (মুহূর্তের জন্য) ধর্মত্যাগীও হইনি।- আর এমন কোনো (ব্যক্তির) প্রাণও আমি হত্যা করিনি, যার হত্যা আল্লাহ তাআলা অবৈধ করেছেন। (তাহলে) আমাকে কি কারণে তোমরা হত্যা করবে? (বুখারি, মুসলিম, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি)
হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু কিছু সংখ্যক বিদ্রোহীর হাতে শাহাদাত বরণ করার আগে মুসলিম জাহানের মানুষের কাছে শান্তির এ বার্তা দিয়ে যান যে-
‘৩টি কারণ ব্যতিত কোনো মুসলমান কোনো মুসলমানকে হত্যা করবে না।’ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি প্রতিষ্ঠায় হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণিত প্রিয়নবির সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এ হাদিস হলো ইসলামের সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ। এর মাধ্যমেই অপরাধমুক্ত সমাজ নির্মাণ করা সম্ভব।
Advertisement
আরও পড়ুন > লেনদেনে সাক্ষী-প্রমাণে কুরআনের বিধান
হত্যার মতো মারাত্মক অপরাধমুক্ত সমাজ গঠনে আল্লাহ তাআলা বিধান জারি করে বলেন-
- হে ঈমানদারগণ! মানুষ হত্যার ব্যাপারে তোমাদের জন্য কিসাস (প্রতিশোধ গ্রহণের বিধান) বিধিবদ্ধ করা হল- ‘স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস ও নারীর বদলে নারী। কিন্তু তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে কিছুটা ক্ষমা প্রদর্শন করা হলে, প্রচলিত প্রথা অনুসরণ ও সদয়ভাবে তার (বিনিময়) পরিশোধ করা উচিত। আর এতো তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে ভার লাঘব ও অনুগ্রহ।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৭৮)
জিনা ব্যভিচারের অপরাধে করণীয় সম্পর্কে কুরআনে বিধান হলো-
‘ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী, ওদের প্রত্যেককে একশ’ কশাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকরীকরণে ওদের প্রতি দয়া যেন তোমাদের অভিভূত না করে, যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস কর। আর বিশ্বাসীদের একটি দল যেন ওদের (অপরাধীদের) শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।’ (সুরা নুর : আয়াত ২)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় প্রিয়নবি অবিবাহিত জিনাকারীদের শাস্তি একশ’ বেত্রাঘাত আর বিবাহিত জিনাকারীদেরকে পাথরের আঘাতে মৃত্যু নিশ্চিত করার কথা বলেছেন।’
বর্তমান দেশীয় আইনেও এসব অপরাধের মারাত্মক শাস্তি; এমনকি মৃত্যুদণ্ড হতেও দেখা যায়। দেড় হাজার বছর আগে প্রিয়নবির ঘোষিত বাণীই হোক বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠার অনন্য হাতিয়ার।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত অপরাধ থেকে নিজেদের হেফাজতের পাশাপাশি ইসলামি সমাজ বিনির্মাণে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহর সঠিক বুঝ গ্রহণের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর