নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজে এসে রাস্তায় নামছে শিক্ষার্থীরা। ন্যায় বিচারের দাবিতে স্থবির রাজধানী। আটকে গেছে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা। আন্দোলন সামলাতেই হঠাৎ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করলো সরকার। শিক্ষার্থীদের ঘরে ফেরানোর কথা ছিল।
Advertisement
কিন্তু হালে পানি পায়নি। দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে দিনভর সড়ক দখলে রাখলো শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে জেলা, উপজেলা শহরগুলোতেও। ‘আমরা ন্যয় বিচার চাই’ স্লোগানে মুখোরিত রাজপথ। আন্দোলনের দৃশ্যমান নমনীয় ভাব সরকারের।
ইতোমধ্যেই সরকারের সেতু ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীরা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, এবার ঘরে ফিরুক।’ সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার ইঙ্গিতও মিলছে নানাভাবে।
‘সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপের পরেও শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে’, কেনো? জানতে চাওয়া হয় সাবেক শিক্ষা উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের কাছে। তিনি বলেন, ‘কোমলমতি শিক্ষার্থীরা সরকারের কথায় আশ্বস্ত হতে পারছে না। সম্প্রতি কোটা সংস্কারের আন্দোলন থেকেই এমন অবিশ্বাস দাঁড়িয়েছে।’
Advertisement
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ন্যয় বিচারের দাবি তুলে রাষ্ট্রের সার্বিক বিষয়ে জবাবদিহিতার অভাবকে বুঝিয়ে দিচ্ছে। রাজনীতি, সমাজ ভাবুকদের ওপর নির্ভর করতে পারছে না বলেই তারা স্কুল এবং ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসছে। সরকারের উচিৎ দাবির প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে যে কোনো ধরনের সংঘাত এড়িয়ে চলা।’
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ধুম বৃষ্টি রাজধানীতে। তবে বৃষ্টি আটকাতে পারেনি শিক্ষার্থীদের। পড়ুয়ারা সকালেই অবস্থান নিতে থাকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে গাড়ি এবং গাড়ি চালকের লাইসেন্স দেখতে থাকে শিক্ষার্থীরা।
মালিকপক্ষ গণপরিবহন চালানো বন্ধ রাখলেও প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন পরিবহনের কাগজপত্র তল্লাশি করে তারা। এ সময় গোটা রাজধানীজুড়েই শত শত লাইসেন্সবিহীন গাড়ি এবং চালকের বিরুদ্ধে পুলিশকে মামলা নিতে বাধ্য করে শিক্ষার্থীরা। বন্ধ থাকলেও স্কুল-কলেজের ড্রেস পরেই শিক্ষার্থীরা এদিন মাঠে নামে।
রাজধানীর কাঁটাবন মোড়ে তেঁজগাও কলেজ থেকে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন তামান্না। বলেন, আমরা ন্যয় বিচারের জন্য আন্দোলন করছি। আমরা সরকারকে সহায়তা করতে চাই। স্কুল কলেজ বন্ধ রেখে আমাদের এই ন্যায্য আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না।
Advertisement
আমাদের সঙ্গে আজ অন্য বন্ধুরাও এসেছে, যারা আগের দু’দিন আন্দোলনে ছিল না। আশা করছি সরকার দ্রুত আমাদের দাবি মেনে নিয়ে সমস্যার সমাধান করবে।
২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে এমইএস বাস স্ট্যান্ডে জাবালে নূর পরিবহনের দুই বাসের চালকের রেষারেষির ফলে একটি বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। একই ঘটনায় আহত হয় ১০-১৫ জন শিক্ষার্থী।
নিহত দুই শিক্ষার্থী হলো- শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল করিম রাজিব।
এএসএস/এমআরএম/পিআর