* পাঠাও, উবার চালকরা রাইড শেয়ারিং ছেড়ে বেশি ভাড়ায় খ্যাপ মারছে* বাসের ১৫ টাকার পথ রিকশায় ১৮০* আন্দোলনে সহমর্মিতা আছে, কিন্তু অনেকে সুযোগ নিয়ে বাড়তি আয়ে ব্যস্ত
Advertisement
মোটরসাইকেল চালিয়ে পাঠাও, উবারে অ্যাপসের মাধ্যমে টাকা আয় করা নতুন নয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অ্যাপস ছেড়ে সোজা খ্যাপ মারতে শুরু করেছেন তারা। ফলে সময়ও কম লাগছে পাশাপাশি লাভও বেশি হচ্ছে- ভাড়া দ্বিগুণেরও বেশি আসছে।
একই অবস্থা রিকশা চালকদের। অন্য যানবাহনের লাইসেন্স চেক করলেও রিকশার কোনো ঝামেলা নেই। ফলে সহসায় ভাড়া মারছে তারা। কিন্তু ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ। ফলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ভাড়াভিত্তিক বাইকার ও রিকশা চালকদের পোয়াবারো।
বৃহস্পতিবার সকাল খেকে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে দল দলে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন গাড়ির লাইসেন্স চেক করতে থাকে। এ সময় যেসব চালকের কাছে বৈধ লাইসেন্স পাওয়া যাচ্ছে, তাদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে অন্যথায় সার্জেন্ট ডেকে মামলা দেয়া হচ্ছে।
Advertisement
গতকাল থেকেই নগরীতে চলছে না কোনো গণপরিবহন। ফলে বিকল্প যানবাহনই একমাত্র ভরসা। এই সুযোগ নিচ্ছেন পাঠাও-উবার চালকসহ রিকশা চালকরা। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত বাইকে সর্বোচ্চ ভাড়া আসে ৫০ টাকা। আজ কোনো অ্যাপস ব্যবহার করছে না বাইকাররা। সুযোগ বুঝে চুক্তিভিত্তিকে যাচ্ছেন তারা। ভাড়া নিচ্ছেন ২০০-১৫০ টাকা।
একই দূরত্বে রিকশায় যেতে ভাড়া লাগতো ৫০ টাকা। আজ ১০০ টাকার নিচে কোনো রিকশা চালক যেতে রাজি হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন যাত্রী আরিফ।
তিনি জানান, আর্জেন্ট কাজ, গুলিস্তান যেতেই হবে। এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে বলে জাগো নিউজকে জানান তিনি। বৃহস্পতিবার যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত ঘোড়ার গাড়ি চলতে দেখা গেছে। ভাড়া দ্বিগুণেরও বেশি। আগে যাত্রাবাড়ী থেকে ঘোড়ার গাড়ি চলতো না। আজ সুযোগ পেয়ে ২০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা নিচ্ছেন চালক। ঘোড়ার গাড়ি চালক বসির জাগো নিউজকে বলেন, ৫০ টাকা নিয়েও যাত্রী সামাল দিতে পারছি না। যাত্রী চাপ বেশ। একটু বেশি আয় হবে আজ। একই চিত্র মিরপুর ১০ বা শেওড়াপাড়া এলাকায়। আগে ফার্মগেট খামারবাড়ী পর্যন্ত ভাড়া ছিল এখান থেকে ৫০-৬০ টাকা। বৃহস্পতিবার সে ভাড়া দাঁড়িছে ১৮০ টাকায়। তবুও অনেকে যেতে নারাজ। সহসায় পাওয়া যাচ্ছে না গাড়ি। বেসরকারি চাকরিজীবী মো. আলম বলেন, আন্দোলনে সহমর্মিতা আছে। এজন্য কষ্ট সয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এদেশের মানুষতো ভালো না। কোনো ভালো কাজে তাদের সাপোর্ট থাকে না। সবাই সুযোগ নিতে চায়। যেমন এখন নিচ্ছে রিকশা চালকরা। যেখানে বাসে মাত্র ১৫ টাকায় যাওয়া যায়, রিকশা চালকরা সেটা ১৮০ টাকা চাইছে।
সকাল থেকে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে অনেক বাইক চালককেও বেকায়দায় পড়তে হয়েছে। লাইসেন্স থাকলেও বার বার দেখাতে হয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবে বাইকও চালানো যাচ্ছে না। এমন একজন পাঠাও চালক হুমাইন জাগো নিউজকে বলেন, সকাল থেকে এ পর্যন্ত রাস্তায় ৭০ বার লাইসেন্স দেখাতে হয়েছে। বাধ্য হয়ে এটা বুক পকেটে রেখেছি। রাস্তা ফাঁকা কিন্তু চলা দায়। প্রচুর রিকোয়েস্ট পাচ্ছি। লোকেশন অনেক সময় দূর দূরান্তে। ফলে রাস্তার পাশ থেকে যাত্রী নিয়েই যাচ্ছি।
Advertisement
জানা গেছে, বাস সঙ্কটের পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে রাইড শেয়ারিং অ্যাপের রাইডার ও ড্রাইভারদের সংখ্যাও কমে গেছে। শামীম আহমেদ নামে পাঠাওয়ের একজন রাইডার জাগো নিউজকে বলেন, অধিকাংশ সড়কেই শিক্ষার্থীরা ঢুকতে দেয় না, যানজট থাকে। তাই আমি সন্ধ্যার পর বের হই।
বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর বুকে ব্যাপক বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টির মধ্যেও ভিজে ভিজে কাজ করতে থাকে শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের গায়ে স্কুলের ইউনিফর্ম দেখা গেছে।
উল্লেখ, রাজধানীর কুর্মিটোলায় বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনার প্রতিবাদ ও নৌমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিতে পঞ্চম দিনের মতো আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে দলে দলে গাড়ি ও চালকের লাইসেন্স যাচাই করছেন তারা। এ সময় যেসব চালকের কাছে বৈধ লাইসেন্স পাওয়া গেছে, তাদের ছেড়ে দেয় তারা।
আজ সারাদেশের স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হলেও শিক্ষার্থীদের গায়ে ইউনিফর্ম দেখা গেছে।
এমএ/এসআই/এএস/এমআরএম/জেআইএম