রাজধানীতে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় বিচার ও নিরাপদ সড়কসহ ৯ দফা দাবি আদায়ে এবার রাজপথে নেমেছে রংপুরের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে রাস্তায় নেমেছে শিক্ষকরাও।
Advertisement
বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশি বাধা উপক্ষো করে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে কয়েক দফায় বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের পূর্বঘোষিত এ কর্মসূচির কথা জেনে সকাল থেকেই নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অবস্থান নেয় পুলিশ। তারা শিক্ষার্থীদের কোথাও একত্র হতে না দেয়ার চেষ্টা করলেও রংপুর টাউন হল প্রজন্ম চত্বরে একজোট হয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা।
শত শত শিক্ষার্থীর উত্তাল স্লোগানে মুখরিত মিছিলটি নগরীর জিলা স্কুল মোড়ের বঙ্গবন্ধু চত্বরে পৌঁছালে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সেখানে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন সমাবেশ শুরু করলে আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা এতে যোগ দেয়।
Advertisement
মানববন্ধন শেষ না করেই বিশাল মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু চত্বর থেকে শ্বাশত বাংলা হয়ে মেডিকেল মোড় এলাকায় গিয়ে রংপুর-ঢাকা-দিনাজপুর মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা।
এ সময় বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত পোস্টার প্ল্যাকার্ড আর গোলাপ ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে আন্দোলনে সাধারণ জনগণকে সিক্ত করে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের ফুলে ফুলে সিক্ত হয় পুলিশ সদস্যরাও।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি একাত্মতা জানিয়ে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে অংশ নেয়। শিক্ষার্থীদের স্লোগানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে আসেন সাধারণ মানুষরাও। এখানেও বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেন।
সেখানে তারা ‘চাইলাম বিচার পাইলাম ছুটি, নিরাপদ সড়ক চাই, জাগো বাহে কোনটে সগায়, আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না, আমার ভাই কবরে অপরাধী কেন বাইরে’ লেখাসহ নয় দফা দাবি আদায়ের পক্ষে শত শত পোস্টার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা।
Advertisement
এতে পুরো মহাসড়কে যানবাহন চলাচল থমকে যায়। দীর্ঘ হতে থাকে আটকে পড়া গাড়ির বহর। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ঢাকার সঙ্গে উত্তরের জেলা দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় ও নীলফামারীর যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা জরুরি পরিবহনসহ অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস ও প্রশাসনিক কাজে ব্যবহৃত গাড়ি পারাপারে সহযোগিতা করে। তারা নিজেরাই বৃদ্ধ, শিশু, অসুস্থ মহিলা-পুরুষসহ সাধারণ যাত্রীদের নিরাপদে রাস্তা পারাপার করিয়ে দেয়। শিক্ষার্থীরা বাস, পিকআপভ্যান, অটোরিকশার চালককে বেপরোয়া যানবাহন না চালানোর পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে রাখার এবং ট্রাফিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানায়।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে গর্জে ওঠা এই আন্দোলনে অংশ নেয়- রংপুর জিলা স্কুল, রংপুর পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রংপুর উচ্চ বিদ্যালয়, বিয়াম স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বীর উত্তম শহীদ সামাদ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রংপুর মেডিকেল কলেজ, রংপুর ডেন্টাল কলেজ এবং আরসিসিআই স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ নগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী।
এদিকে, পুলিশ শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি শেষ করার জন্য সকাল থেকে চাপ সৃষ্টি করলেও বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাদের কথা মানতে রাজি হয়নি। বরং কয়েক দফা পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে তারা বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করে। এ সময় আন্দোলনে পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতা চায় শিক্ষার্থীরা।
দুপুর ২টার দিকে মেডিকেল মোড় থেকে ফিরে এসে বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়ে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার জন্য আহ্বান জানায়।
জিতু কবীর/এএম/জেআইএম