আইন-আদালত

শুনানিতে খালেদার আইনজীবী না থাকায় হাইকোর্টের ক্ষোভ

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালতে উপস্থিত না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাচঁ বছরের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালেদার আপিল শুনানি ছিল আজ। এতে খালেদা জিয়ার কোনো আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় ৮ আগস্ট পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেছেন আদালত।

Advertisement

বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোর্শেদ।

পরে ইউসুফ মাহমুদ মোর্শেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘মামলাটি কার্যতালিকায় আসার পর থেকেই উনারা (খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা) নানা কারণে কালক্ষেপণ করছেন। একেকদিন একেকটা কারণ দেখিয়ে কালক্ষেপণ করছেন। আজও মামলাটি কার্যতালিকায় ছিল। কিন্তু অন্য কোর্টে মামলা থাকার ব্যস্ততা দেখিয়ে তারা শুনানি করেননি।

‘পরে দেখা গেল ঘুরে ফিরে তারা (খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা) আবার এই কোর্টেই এসেছেন। তখন কোর্ট জিজ্ঞেস করল, আপনাদের না ব্যস্ততা আছে? তখন কিছু বলতে পারেননি আইনজীবীরা। উনাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই আজ শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল এবং মামলাটি (কজলিস্টের) কার্যতালিকার এক নম্বরে ছিল।’

Advertisement

রাষ্ট্রপক্ষের এই আইন কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আজ কোর্ট বসার পর খালেদা জিয়ার দুজন আইনজীবী এসে বললেন, পাসওভার (কিছু সময়ের জন্য মুলতবি) চাই। তখন কোর্ট বললেন যে, কোনো পাসওভার দেয়া হবে না, আজকেই শুনানি হবে। কোর্ট তখন এক নম্বর আইটেমটা (মামলা) রেখে কার্যতালিকার ৮৯ টি আইটেম শোনার পর এক নম্বর আইটেম (খালেদা জিয়ার আপিল) কল করলেন। কিন্তু সে সময় উনাদের (খালেদার আইনজীবীদের) কাউকে পাওয়া যায়নি।

‘তখন আদালত মামলার নথি হাতে নিয়ে উকালত নামায় দেখলেন যে, খালেদা জিয়ার পক্ষে কতজন আইনজীবী আছেন। দেখা গেল, খালেদা জিয়ার পক্ষে ২৫ জন আইনজীবী এ মামলাটি পরিচালনার জন্য উকালতনামা জমা দিয়েছেন। কিন্তু শুনানি করতে একজন আইনজীবীও উপস্থিত ছিলেন না’,- বলেন এ আইনজীবী।

তখন কোর্ট খুব অসন্তুষ্টি, উষ্মা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘এ মামলার কারণে অন্যান্য মামলা কার্যতালিকায় আনা যাচ্ছে না, যার কারণে বিচারপ্রার্থীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’

ইউসুফ মাহমুদ মোর্শদ বলেন, ‘যেহেতু একটা (খালেদার জিয়ার) বড় মামলা শুনানিতে সারাদিন লেগে যায়। যে কারণে কার্যতালিকায় কম মামলা নেয়া হয়। তাছাড়া আপিল বিভাগের নির্দেশনা আছে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করার জন্য। আবার কদিন পরে কোর্ট এক-দেড় মাসের জন্য বন্ধ হতে যাচ্ছে।

Advertisement

যে কারণে কোর্ট আদেশে বলেছেন, ‘এ মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে ২৫ জন আইনজীবী উকালতনামা দাখিল করলেও তাদের কেউ উপস্থিত না থাকায় মামলাটির শুনানি ৮ আগস্ট পর্যন্ত মুলতবি করা হলো।’

এদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ এই মামলাটি কার্যতালিকার এক নম্বরে ছিল। কোর্ট বসার পর অন্য সময় শুনানির জন্য পাসওভার চাইলে কোর্ট তা গ্রহণ করেননি। পরে কোর্ট কী আদেশ দিয়েছেন আমি জানি না। ৮ আগস্ট পর্যন্ত মুলতবি করে থাকলে সেটা আমাদের অনুপস্থিতিতে সে আদেশ দিয়েছেন।’

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজার রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপিল নিষ্পত্তির জন্য ৩১ জুলাই থেকে আরও তিন মাস ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

৩১ জুলাই প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই আদেশ দিয়ে বলেছেন, আগামী ৩১ আক্টোবরের মধ্যে হাইকোর্টে এ মামলার আপিল নিষ্পত্তি করতে হবে।

মঙ্গলবার এ মামলায় খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ আগামী ৮ আগস্ট পর্যন্ত বাড়িয়েছেন হাইকোর্ট। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো তার জামিনের মেয়াদ বাড়লো এই মামলায়। মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আদেশ দেন।

এফএইচ/জেডএ/জেআইএম