জাতীয়

শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ

রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই কলেজশিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

Advertisement

মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একথা জানান।

তিনি বলেন, ‘রাজধানীতে পাল্লা দিয়ে চলার সময় গাড়ির চাপায় দুই শিক্ষার্থীর প্রাণ নাশ হয়েছে। সারা ঢাকার সবাই খুব আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। সবাই মনে করছে পাল্লা দিয়ে গাড়ি চালানো, এর একটা প্রতিকার করা উচিত। যথার্থভাবে তাই।’

‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, ঘটনা যারা ঘটিয়েছে এবং যে গাড়িটি ঘটিয়েছে এগুলো যেন ইনকোয়ারি করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়।’

Advertisement

মন্ত্রী বলেন, ‘ইতোমধ্যে গাড়ি দুটো জব্দ করা হয়েছে, যে চালকরা গাড়ি চালাচ্ছিলেন তাদেরও অ্যারেস্ট করা হয়েছে। যার গাফিলতির কারণে এই ঘটনা ঘটে থাকুক, আইনানুযায়ী তাকে শাস্তি পেতেই হবে।’

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি নিহত ছাত্রী দিয়া খানম মিমের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের জন্য কিছু করবেন বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

নিহত ছাত্রীর বাবা জাহাঙ্গীরও একজন গাড়ি চালক জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি বলেছেন, এটা অদক্ষ ড্রাইভারের কাজ, কিংবা যারা চালাচ্ছিলেন তারা লাইসেন্সবিহীন। যাই হোক তার (দুর্ঘটনা ঘাটনো বাসের চালক) কৃতকর্মের জন্য তাকে শাস্তি পেতেই হবে, এটা হল পরিষ্কার কথা।’

গত রোববার দুপুরে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। একই ঘটনায় আহত হয় আরও ১০-১৫ শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার রাজধানীতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে এ ঘটনায় বিক্ষোভ করছে। কয়েকটি স্থানে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে।

Advertisement

মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কোমলমতি ছেলে-মেয়েরা রাস্তায় ব্যারিকেড দিচ্ছে। এটা তো হতেই পারে, তাদের দুঃখের কথা, বেদনার কথা তারা জানাতেই পারে। তারা জানাচ্ছেন। আমরা মনে করি সরকার অত্যন্ত কঠিন অবস্থানে রয়েছে। আমরা এর ব্যবস্থা নেবই। আমরা ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের আহ্বান করব- আপনাদের দাবির প্রতি আমরাও সমর্থন করি। এই ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদের উপযুক্ত বিচার আমরা করব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও আমাদের সেই নির্দেশনাটাই দিয়েছেন।’

আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমরা মনে করি তারা যথার্থভাবেই নিহত সহপাঠীর প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছেন। এখন আবার বাসায় ফিরে যাবেন, লেখাপাড়ার জন্য স্কুল কলেজে যাতায়াত করবেন সেটাই আশা করি।’

বাস দুর্ঘটনায় হত্যাকাণ্ডের পরও ৩০২ ধরায় সরাসরি মামলা হয় না- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মন্ত্রী বলেন, ‘দেখুন এটা তো আইনের ব্যাপার। তদন্ত করে যদি দেখা যায়, কেউ ইচ্ছা করে হত্যা করেছে, তবে তো ৩০২ ধারায় মামলা হয়েই থাকে।’

এই মামলা দীর্ঘসূত্রিতায় পড়বে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নিতে, সেই ব্যবস্থা আমরা নেব। খুব তাড়াতাড়ি যাতে বিচারের সম্মুখীন করতে পারি সেই ব্যবস্থাটা আমরা নেব।’

‘আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী কিডনি ও ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে যে সংখ্যক মানুষ মারা যায় তার চেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে। এটার প্রতিকারের জন্য আমরা অনেক কিছুই করছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সবাইকে ট্রাফিক আইন মেনে চলার জন্য অনুরোধ করছি, ফিটনেসবিহীন গাড়ি বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, লাইসেন্সবিহীন চালক যাতে গাড়ি না চালায় আমরা সেই অনুরোধ করছি। সেইফ ঢাকা নামে একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছি আমরা। ক্যামেরার মাধ্যমে আমরা ট্রাফিক কন্ট্রোল করতে পারি আমরা সেই ধরনের একটা ব্যবস্থা নিচ্ছি। কনসালটেন্ট সেটার কাজ করছে। সারা দেশে যেন দুর্ঘটনা কমানো যায় সেটার একটা প্রোগ্রামও আমরা নিচ্ছি।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক সব বাসগুলোকে একটি কোম্পানির আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেই উদ্যোগের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তার (আনিসুল হক) এ বিষয়ে একটি প্রপোজাল ছিল। তিনি বলেছেন, সব বাস একই কোম্পানির আওতায় চলবে, সেটা একটা যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। ইউরোপের অনেক দেশে এটা আছে। বাস এনে কোম্পানির আওতায় দিয়ে দেয়, যা আয় হয় সেটা সবাই ভাগ করে নেয়।’

‘আনিসুল হক সাহেব আরও কিছুদিন বেঁচে থাকলে তাহলে হয়তো তিনি ইমপ্লিমেন্ট করতে পারতেন। কিন্তু এই জায়গাটি থেমে রয়েছে। এটা ভবিষ্যতে হয়তো হবে’ বলেন আসাদুজ্জামান খান।

দুর্ঘটনা ঘটানো চালকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হলে, পরিবহন শ্রমিকরা গাড়ি বন্ধ করে মানুষকে জিম্মি করে আন্দোলনে নামে। সরকারের একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তাদের মদদ দেয়ার অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আইন সবার জন্য সমান, শ্রমিক হোক, বাস ড্রাইভার হোক, বাস মালিক হোক, আইনানুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব। কে কী করল সেটা আমাদের কাছে সেটা ধর্তব্যের মধ্যে না। আইন ভঙ্গ যে করবে তার বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা আমরা নেব।’

রাজধানীতে যানবাহনের বিরুদ্ধে করা মোট মামলার ৫ ভাগও বাসের বিরুদ্ধে হয় না- কেন বাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মাঝে মাঝেই আমাদের মোবাইল কোর্ট বসছে। ম্যাজিস্ট্রেট চেক করছে। প্রতিদিন যদি আমরা চেক করতে থাকি, তাহলে বিরাট যানজট লেগে যাবে। যানজট নিরসনে একটার পর একটা প্রকল্প শেষ হচ্ছে। আরও প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। ঢাকার যানজট সহনীয় পর্যায়ে আনতে পারি তবে অটোমেটিক সবকিছু ইমপ্লিমেন্ট হয়ে যাবে।’

আরএমএম/জেএইচ/আরআইপি