আইন-আদালত

ধর্ষণের বিচারের জন্য একজন বিচারক স্ট্যান্ডবাই থাকবেন

অন্য সব অপরাধের মামলার মতো বিচার করলে কোনোদিনই ধর্ষণের বিচার পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম।

Advertisement

তিনি বলেন, ধর্ষণের বিষয়টা অন্য রকম, স্পর্শকাতর। অন্যান্য মামলার সঙ্গে একই বিবেচনায় ধর্ষণের বিচার করলে কোনোদিনই ফলপ্রসূ হবে না।

সোমবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ সফিউর রহমান মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ‘নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ন্যায়বিচার প্রাপ্তি’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে।

তিনি আরও বলেন, অন্য সব অপরাধের মামলার মতো ধর্ষণের মামলার বিচার করলে কোনোদিনই ধর্ষণের বিচার পাওয়া যাবে না। এ কারণে আমার ব্যক্তিগত মত হলো, ধর্ষণের ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে যেন ধর্ষিতা বিচারকের কাছে দ্রুত যেতে পারে সে ব্যবস্থা রাখতে হবে। এজন্য একজন বিচারক স্ট্যান্ডবাই থাকবেন। ধর্ষিতা গেলেই তাকে চিকিৎসকের কাছে পাঠিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাবেন। আসামিকে গ্রেফতারে পদক্ষেপ নেবেন।

Advertisement

অ্যার্টনি জেনারেল বলেন, আসামি ধরা পড়লে আদালতে তাকেই প্রমাণ করতে হবে যে সে ধর্ষণ করেনি। আর আসামি ধরা না পড়লে কী ব্যবস্থা নেয়া যায় সে বিষয়ে আইনজীবী, সরকার, সমাজবীদদের সম্মিলিতভাবে চিন্তা করতে হবে।

তিনি বলেন, ইদানিং কতগুলো সহিংসতা বাড়ছে। আগে ধর্ষণ হলেও নির্যাতিতা বেঁচে থাকতো। এখন কিন্তু ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। কারণ যাতে চিনতে ও বলতে না পারে।

ধর্ষণের পর হত্যার বিচারটা নিয়ে নতুন করে চিন্তা করা উচিত উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, যেমন ভেজালবিরোধী ম্যাজিস্ট্রেটরা গিয়ে জেল দিয়ে দেয়। অন্যান্য কিছু অপরাধ আছে স্পট এনকোয়ারি, স্পট সাজা। ধর্ষিতাদের ব্যাপারেও এমন করা যায় কি না সেটা ভেবে দেখা দরকার। ধর্ষিতা নিজে সঙ্গে সঙ্গে যাতে বিচারের জায়গায় যেতে পারে এবং রাত বা দিন যাই হোক একজন বিচারক নির্দিষ্ট থাকবেন যাতে কোনো ধর্ষিতা আসলে তাৎক্ষণিক তিনি ডাক্তার ডেকে পরীক্ষা করাবেন। তৎক্ষণাক সাক্ষ্য নেবেন, আসামি ধরা থাকলে তাকে বলা হবে উকিল নিয়োগ করে তাকে জেরা করো। পলাতক থাকলে পরবর্তীতে তাকে কীভাবে জেরা করা যায় ইত্যাদি বিষয়ে ভাবতে হবে।

তিনি বলেন, এই মুর্হূতে আামি এটার কোনো সমাধান দিতে পারবো না। আমার একার পক্ষে সম্ভবও না। এটা সমাজবিজ্ঞানী, আইনবিদ, বিচারক সবার সম্মিলিত একটা প্রয়াস হওয়া উচিত।

Advertisement

অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান ও হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম বলেন, ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে স্বাক্ষী উপস্থাপন না করতে পারা, সময়মত মামলা শেষ করতে না পারাসহ আরও কিছু জটিলতা। ৭-৮ বছর হয়ে যায় অথচ একটি ধর্ষণের মামলার নিষ্পত্তি হয় না।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ যেখানে সবার জাবাবদিহিতার কথা বলা আছে। এই আইনের দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য তিনটি মন্ত্রণালয়ের একটি সমন্বিত মনিটরিং কমিটি থাকা দরকার।’

তিনি আরও বলেন, মেডিকেল রিপোর্ট, মামলার শুরুতে সমস্যা না তদন্তে সমস্যা এই বিষয়গুলোও অনেক ক্ষেত্রে মামলাকে জটিল করে তোলে। এই বিষয়গুলোতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে যে আইন হয়েছে তার প্রয়োগ খুব কম হচ্ছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য এই লক্ষ্যে সবাইকে কাজ করতে হবে।

সভায় বিশেষ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এ. এম. মাহবুব উদ্দিন খোকন ও জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক (সিনিয়র জেলা জজ) মো. জাফরোল হাছান।

সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আয়শা খানম। সঞ্চালনা করেন সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম। কেন্দ্রীয় কমিটির বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পরিচালক, লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড লবি অ্যাড. মাকছুদা আক্তার।

সভায় বিচারপতি, আইনজীবী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর শাখার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এফএইচ/এমএমজেড/জেআইএম