দেশজুড়ে

বিপাকে চালকল মালিকরা

নওগাঁয় খাদ্যগুদামের ধারণ ক্ষমতার তুলনায় বরাদ্দ বেশি। ফলে গুদামে চাল দিতে আসা চালকল মালিকদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অপরদিকে প্রতি ট্রাকে প্রতিদিনের জন্য অতিরিক্ত দেড় থেকে দুই হাজার টাকা করে বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে চালকল মালিকদের। ফলে মালিকদের লাভের বড় একটি অংশ ট্রাক ভাড়ায় চলে যাচ্ছে।

Advertisement

নওগাঁ খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্র জানায়, জেলার ১১টি উপজেলায় ১ হাজার ১৬৭টি চালকল রয়েছে। ১১টি উপজেলায় ১৯টি খাদ্য গুদামের ধারণ ক্ষমতা ৩৯ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন। বোর মৌসুমে চুক্তিবদ্ধ চালের পরিমাণ ৪৩ হাজার ২ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৯ হাজার ৭১৭ মেট্রিক টন, আত্রাইয়ে ৯৪২ মেট্রিক টন, রানীনগরে ২ হাজার ৪২০ মেট্রিক টন, মহাদেবপুরে ১৪ হাজার ৯৬১ মেট্রিক টন, পত্নীতলায় ১ হাজার ৬৮৩ মেট্রিক টন, ধামইরহাটে ৬শ মেট্রিক টন, সাপাহারে ১৭ মেট্রিক টন, পোরশায় ৭৮৫ মেট্রিক টন, মান্দায় ৬১৯ মেট্রিক টন, বদলগাছীতে ৩৯৪ মেট্রিক টন ও নিয়ামতপুরে ৮৬৪ মেট্রিক টন।

জেলার ১ হাজার ১৪০ জন চালকল মালিক সরকার নির্ধারিত ৩৮ টাকা কেজি দরে চুক্তিবদ্ধ হলে গত ১ মে থেকে চাল সংগ্রহ শুরু হয়। এর মধ্যে ৮৭ জন অটোরাইচ মিলমালিক এবং ১ হাজার ৫৩ জন হাসকিং মিলমালিক। এখন পর্যন্ত গুদামে ৮০ শতাংশ চাল সংগ্রহ হয়েছে। ১৯টি খাদ্য গুদামে চাল ধারণ ক্ষমতা ৩৯ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন হলেও পূর্ব থেকে আছে ১১ হাজার ৫ মেট্রিক টন এবং ১৫ লাখ ৫৯ হাজার ১৭০টি খালি বস্তা গুদামে জায়গা দখল করে আছে।

নির্ধারিত সময়ে খাদ্যগুদামে চাল সংগ্রহ শুরু হওয়ার পর থেকে গুদামগুলোতে চাল নিয়ে আসতে থাকেন চালকল মালিকরা। কিন্তু গুদামের ধারণ ক্ষমতার তুলনায় বরাদ্দ বেশি হওয়ায় গুদামে চাল দিতে এসে বিপাকে পড়েছেন চালকল মালিকরা। ফলে দিনের পর দিন চাল নিয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এতে চালকল মালিকদের প্রতিদিনের জন্য বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে।

Advertisement

সদর উপজেলার মেসার্স ফারিহা রাইচ মিলের মালিক শেখ ফরিদ উদ্দিন বলেন, সরকারের গুদামে চাল দেয়ার পর বিল তুলে ধান কিনে আবার চাতাল চালাতে হয়। কিন্তু জায়গা সংকটের কারণে দিনের পর দিন ট্রাকে করে চাল নিয়ে গুদামের সামনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। চাল দিতেও পাচ্ছি না, আবার বিলও পাচ্ছি না। এ জন্য আমাদের সবদিক দিয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে। ট্রাকে করে চাল নিয়ে এসে পাঁচদিন অপেক্ষার পর গুদামে চাল দিতে পেরেছি। এ কয়দিনে আমাকে পাঁচ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে।

সামিয়া চালকলের মালিক মোতালেব হোসেন বলেন, চার হাজার টাকায় ট্রাক ভাড়া করে ২০ মেট্রিক টন চাল গুদামে নিয়ে আসি। চারদিন অপেক্ষার পর গুদামে চাল দিতে পেরেছি। ট্রাকের বাড়তি প্রায় ছয় হাজার টাকা বেশি ভাড়া দিতে হয়েছে। এতে লাভের ভাগ টিয়া খাওয়ার মতো অবস্থা দাঁড়িয়েছে।

ট্রাক চালক মাসুদ রানা বলেন, একদিনের কথা বলে তিনদিনেও চাল নামাতে পারিনি। ট্রাকে ওজন থাকলে স্প্রিংগুলো দেবে যায়। কবে আনলোড হবে বলা মুশকিল।

সদর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ১৪টি গুদামে ধারণ ক্ষমতা সাত হাজার মেট্রিক টন। আর এ বছর বরাদ্দ হয়েছে ১৯ হাজার ৭১৭ মেট্রিক টন। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৬ হাজার মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ হয়েছে। তবে চাল দিতে আসা চালকল মালিকদের কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। গুদামে জায়গা ফাঁকা না থাকায় চাল নিয়ে চালকল মালিকদের কয়েকদিন ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তবে গুদাম খালি হওয়ার পর আবার চালকল মালিকদের চাল নেয়া হচ্ছে।

Advertisement

নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, ইতোমধ্যে ৮০ শতাংশ চাল সংগ্রহ হয়ে গেছে। গুদামে চাল আসার পর আবার অনত্র পাঠানো হচ্ছে। ফলে গুদামে চাল দিতে চালকল মালিকদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চাল সংগ্রহ সম্ভব হবে। আর গত বছর কালো তালিকাভুক্ত চালকল মালিকদের সরকার ক্ষমা করে দেয়ায় তারাও গুদামে চাল দিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।

আব্বাস আলী/আরএ/পিআর