প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশ্ব মানবতার জন্য ন্যায় ও আদর্শের স্বীকৃত উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি সব মানুষের জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় আদর্শ। হাজারো ছন্দ-কবিতায় ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটায় তাঁর আশেকরা।
Advertisement
সব মানুষের মাঝেই প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানার প্রবল আগ্রহ সদা বিরাজমান। সে কারণেই প্রিয়নবির দৈহিক গঠনের বর্ণনার পর আজ তুলে ধরা হলো প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র ‘মোহরে নবুয়ত তথা নবুয়তের সীলমোহর’-এর বর্ণনা।
প্রিয়নবির মোহরে নবুয়ত কি? কোথায় ছিল তা? দেখতেই বা তা কেমন ছিল?সাহাবায়ে কেরামের মাঝে যারা সেটি দেখেছে, তাদের বর্ণনায় তুলে ধরা হলো সে বর্ণনা-
মোহরে নবুয়তরাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দু’কাঁধের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত একটি গোশতের টুকরা। এটি হলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়তের নিদর্শন। আর প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র শরীরে এ নিদর্শন বা চিহ্ন থাকার কথা পূর্ববর্তী সব আসমানি গ্রন্থেই বর্ণনা করা হয়েছিল।
Advertisement
০ হজরত সায়িব ইবনে ইয়াজিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন আমার খালা আমাকে নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গেলেন। এরপর তিনি (বর্ণনাকারীর খালা) আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার ভাগ্নে অসুস্থ।তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার মাথায় হাত বুলালেন এবং আমার কল্যাণের (সুস্থতার) জন্য দোয়া করলেন।
অতঃপর তিনি ওজু করলেন। আমি তাঁর ওজুর অবশিষ্ট পানি করলাম এবং তাঁর পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর দু’কাঁধের মধ্যস্থ ‘মোহরে নবুয়ত’-এর দিকে আমার দৃষ্টি পড়ে যায়। যা দেখতে পাখির (কবুতরের) ডিমের মতো।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত, শামায়েলে তিরমিজি)
০ হজরত জাবির ইবনে সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দু’কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে মোহরে নবুয়ত দেখেছি। আর তা যেন ছিল ডিমের ন্যায় লাল গোশতপিণ্ড।’ (মুসলিম, মুসনাদে আহমদ, মুসতাদরাকে হাকেম, ইবনে হিব্বান, মিশকাত)
আরও পড়ুন > যেমন ছিল বিশ্বনবির শারীরিক গঠন
Advertisement
০ হজরত আবু যায়েদ আমর বিন আখতাব আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, হে আবু যায়েদ! আমার কছে এসো এবং আমার পৃষ্ঠদেশে হাত বুলাও। তখন আমি তাঁর পিঠে হাত বুলাতে থাকলাম। এক পর্যায়ে আমার আঙ্গুলগুলো মোহরে নবুওয়াতের উপর লেগে গেল। বর্ণনাকারী আমর বিন আখতাব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন, ‘খাতাম’ (মোহরে নবুওয়াত) কী জিনিস? তিনি বললেন, এক গুচ্ছ কেশ।’ (মুসনাদে আহমাদ, মুসতাদরাকে হাকেম, শামায়েলে তিরমিজি)
সাহাবাগণ কি মোহরে নবুয়ত স্পর্শ বা চুম্বন করতে পারনে?০ দুনিয়াতে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত মহিলা সাহাবি হজরত রুমায়সা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, সাদ ইবনে মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর ওফাতের দিন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তাঁর মৃত্যুতে রহমান (আল্লাহ তা’আলা) এর আরশ কেঁপে উঠেছিল। রুমায়সা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন এ উক্তি করেন তখন আমি তাঁর এত কাছে ছিলাম যে, ইচ্ছে করলে তাঁর মোহরে নবুওয়াত চুম্বন করতে পারতাম।’ (মুসনাদে আহমাদ, শামায়েলে তিরমিজি)
মোহরে নবুয়ত দেখেই ঈমান এনেছিলেন হজরত সালমান ফারসি০ হজরত আবু বুরায়দা রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মদিনায় হিজরতের পর একবার সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহু একটি পাত্রে কিছু কাঁচা খেজুর নিয়ে এলেন এবং তিনি তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সামনে রাখলেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে সালমান! এগুলো কিসের খেজুর? (অর্থাৎ হাদিয়া না সাদাকা?) তিনি বললেন, এগুলো আপনার ও আপনার সার্থীদের জন্য সাদাকা।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এগুলো তুলে নাও। আমরা সাদাকা খাই না। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি তা তুলে নিলেন।
পরের দিন তিনি অনুরূপ খেজুর নিয়ে আসলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সামনে পেশ করলেন।
তখন তিনি বললেন, সালমান! এসব কিসের খেজুর? সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আপনার জন্য হাদিয়া।তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবিগণকে বললেন, তোমরা হাত প্রসারিত কর (হাদিয়া গ্রহণ কর)।
অতঃপর সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পৃষ্ঠদেশে মোহরে নবুওয়াত দেখতে পেলেন; অতঃপর ঈমান আনলেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, শামায়েলে তিরমিজি, মুসনাদে বাযযার)
তিলকে পরিবেষ্টিত ছিল মোহরে নবুয়ত০ হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সারজিস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আসলাম। তখন তিনি তাঁর সাহাবিগণের মাঝে ঘুরছিলেন। এক পর্যায়ে আমি তাঁর পিছু ধরলাম। তিনি আমার মনোবাঞ্ছনা বুঝতে পেরে পিঠ থেকে চাদর সরিয়ে ফেলেন। তখন আমি তাঁর দু’কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে মোহরে নবুওয়াত দেখতে পাই। আর তা ছিল মুষ্টিবদ্ধ আঙ্গুলীর ন্যায় এবং এর চারপার্শ্বে আচিলের মতো কতগুলো তিলক শোভা পাচ্ছিল।
অতঃপর আমি তাঁর সামনে এসে দাঁড়ালাম এবং বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন।
তখন তিনি বললেন, তোমাকেও ক্ষমা করুন। তারপর লোকে আমাকে বলতে লাগল, তুমি বড়ই সৌভাগ্যবান। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমার মাগফিরাত কামনা করেছেন।
তখন তিনি বললেন, হ্যাঁ, তিনি তোমাদের জন্যও দু’আ করেছেন। এরপর তিনি এ আয়াত (সুরা মুহাম্মদ-এর ১৯নং আয়াত) তিলাওয়াত করেন-وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ(হে রাসূল!) আপনি আপনার জন্য এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্য মাগফিরাত কামনা করুন।’ (সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, মারেফাতুস সাহাবা, শামায়েলে তিরমিজি)
সর্বোপরিপ্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মোহরে নবুয়ত ছিল আল্লাহ তাআলা কর্তৃক প্রদত্ত নবুয়তের সীলমোহর। যা তিনি প্রিয়নবিকে নবুয়ের নিদর্শন স্বরূপ দান করেছিলেন। যা ছিল এক টুকরো বাড়তি গোশত। সাহাবায়ে কেরামও তা বর্ণনা করেন এবং পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবেও তা বর্ণনা করা হয়েছিল।
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মোহরে নবুয়তের বর্ণনায় রাসুলের প্রেমে আত্মহারা পাগলপারা আশেকরা হৃদয় দিয়ে প্রিয়নবির মোহরে নবুয়তকে উপলব্দি করবে। স্বপ্নযোগে প্রিয়নবির মোহরে নবুয়ত স্পর্শ বা চুম্বন করতে চাইবে। যে চুম্বন বা স্পর্শে তৃপ্ত হবে আশেকে রাসুলদের হৃদয় ও মন। সুনিশ্চিত হবে জান্নাতের ঠিকানা।
আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদিকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের অনুসরণের মাধ্যমে তাঁর একান্ত সান্নিধ্য লাভ করার তাওফিক দান করুন। পরকালে প্রিয়নবির সুপারিশ লাভের মাধ্যমে চিরস্থায়ী সফলতা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম