১৮৭৮ সালে পৌরসভা গঠনের মধ্যদিয়ে সিলেট শহরের যাত্রা শুরু হয়। ২০০২ সালে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হয় ১২৪ বছর বয়সী সিলেট পৌরসভা। দেশ স্বাধীনের পর থেকে অর্থাৎ ১৯৭৩ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সিলেট পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ইতিহাসের একটি বিশেষ ধারাবাহিকতা রয়েছে। সেই ধারাবাহিকতা আরিফুল হক চৌধুরীর "নিশ্চিত জয়ে" রক্ষা হলা।
Advertisement
ইতিহাসের এ ধারাবাহিকতা হচ্ছে, পৌরসভা চেয়ারম্যান ও সিটি মেয়ররা সবসময় তাদের আসন হারাতে হয়েছে নিজেদের অধীনস্থ কমিশনার ও কাউন্সিলরদের কাছে। আর কমিশনারদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যাওয়া পৌর চেয়ারম্যানরা পরবর্তীতে আর কখনো বিজয়ী হয়ে পুনরায় ফিরতে পারেননি পৌরসভার শীর্ষ চেয়ারে। পৌরসভার ইতিহাসের এই ধারাবাহিকতা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও অব্যাহত ছিল। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বিজয়ী ঘোষণা করা না হলেও আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন কামরানের চেয়ে চার হাজার ৬২৬ ভোট বেশি পেয়ে এগিয়ে আছেন সিসিকের সদ্যসাবেক মেয়র ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী।
সিটি কর্পোরেশনের প্রথম পরিষদে আওয়ামী লীগ নেতা বদর উদ্দিন আহমদের অধীনে নগরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। পরে ২০১৩ সালে কামরানকে পরাজিত করে মেয়র হন আরিফ। এই নির্বাচনে জয় নিশ্চিত হওয়ায় ইতিহাসের ধারাবাহিকতা বজায় থাকল সিলেট সিটি কর্পোরেশনে।
১৯৭৩ সালে কামরানের নির্বাচনী রাজনীতি শুরু। ওই সময় তিনি সিলেট পৌরসভায় কমিশনার পদে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। তখন পৌর চেয়ারম্যান ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা বাবরুল হোসেন বাবুল। এ দফায় দায়িত্ব পালন করে মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমান কামরান। ১৯৭৭ সালের নির্বাচনেও পৌর চেয়ারম্যান হন বাবুল। দেশে ফিরে ১৯৮৩ সালে ফের নির্বাচন করে কমিশনার হন কামরান, চেয়ারম্যান হন অ্যাডভোকেট আ ফ ম কামাল। ১৯৮৮ সালে কামরান আবারও কমিশনার হন, চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সেই কামাল।
Advertisement
১৯৯৫ সালে সিলেট পৌরসভা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। ওই সময় তার সাথে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন বাবরুল হোসেন বাবুল ও আ ফ ম কামাল। এই দুজনের অধীনে পূর্বে কমিশনার ছিলেন কামরান। তবে বাবুল ও কামাল এই দুজনকেই পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন কামরান।
সিটি কর্পোরেশন হিসেবে সিলেট মর্যাদা পাওয়ার পর ২০০৩ সালে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে মেয়র পদে বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সাথে আ ফ ম কামালও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। কিন্তু এখানেও কামালকে পরাজিত করে মেয়র হন কামরান। ২০০৮ সালে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচনেও কামরান বিজয়ী হন, পরাজয় বরণ করেন কামাল।
বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী ২০০৩ সালে সিটি কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তখন মেয়র পদে ছিলেন কামরান। নির্বাচনী এ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, কামরান যাদের অধীনে কমিশনার ছিলেন, পরবর্তীতে তাদেরকে পরাজিত করে তিনি পৌর চেয়ারম্যান ও মেয়র নির্বাচিত হন।
কামরানের অধীনে আরিফ কাউন্সিলর ছিলেন, পরবর্তীতে কামরানকে পরাজিত করেই মেয়র হন আরিফ। এটাও দেখা যাচ্ছে, যেসব পৌর চেয়ারম্যান নিজের পূর্বের অধঃস্থন (কমিশনার) ব্যক্তির কাছে পরাজয় বরণ করেন, সেসব চেয়ারম্যান আর কখনোই এক সময়কার ওই অধঃস্থন ব্যক্তিকে পরাজিত করতে পারেননি।
Advertisement
এছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশে সিলেট পৌরসভায় বাবুল ও কামাল দু’বার করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সিলেট সিটি কর্পোরেশনে দু’বার মেয়র হন একমাত্র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানই।
ছামির মাহমুদ/বিএ