রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সোমবার। মাঝে শুধু একটি রাত। রাত পোহালেই অর্থাৎ সোমবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা আট ঘণ্টা চলবে ভোটগ্রহণ। এর আগে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়।
Advertisement
তিন সিটিতে মোট ১৭ মেয়রপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আট লাখ ৮২ হাজার ৩৬ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নগরপিতা নির্বাচিত করবেন।
তিন সিটিতে শনিবার মধ্যরাতে শেষ হয় নির্বাচনী প্রচারণা। এখন শুধু ভোটের অপেক্ষা। রোববার সকাল থেকেই এ তিন সিটিতে সুনসান নীরবতা বিরাজ করতে দেখা যায়। টানা কদিনের জমজমাট প্রচারণা শেষে সবই যেন থমকে যায় ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনের জন্য। তবে কৌশলী প্রচারণা চালান প্রার্থীরা।
নির্বাচন উপলক্ষে তিন শহরে মোতায়েন করা হয়েছে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। এসব সিটির ১৫টি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। নির্বাচন উপলক্ষে তিন সিটিতে সোমবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
Advertisement
কেন্দ্রেগুলোতে পাঠানো হচ্ছে ভোটের সরঞ্জাম
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, তিন সিটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছি। ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন সেই ব্যবস্থাও করা হয়েছে। আমরা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে চাই।
ইসির একটি সূত্র জানায়, নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য ইসি একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করেছে। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) উইংয়ের মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের নেতৃত্বে এই কমিটিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও রয়েছেন।
রাসিক
Advertisement
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন দুই সাবেক মেয়রসহ ৫ প্রার্থী। এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৬০ এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে রয়েছেন ৫২ জন প্রার্থী।
এই নগরীর মোট ভোটার ৩ লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন। এর মধ্যে এক লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন পুরুষ এবং এক লাখ ৬২ হাজার ৫৩ জন নারী। ১৩৮টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ১১৪টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরই মধ্যে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন।
এদিকে নির্বাচন উপলক্ষে নগরীতে ১৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। আরও চার প্লাটুন স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র (সদর) ইফতেখায়ের আলম জানান, ভোটের নগরীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকধারী পুলিশও মোতায়েন রয়েছে। দায়িত্বপালন করছেন অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও।
তিনি আরও বলেন, ভোটের আগে ও পরে তিন দিন পুরো নগরী নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হবে। এরই অংশ হিসেবে নগরীর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ভোটকেন্দ্র ঘিরেও থাকছে তিন স্তরের নিরাপত্তা। আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা নেই। এ নিয়ে ভোটারদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ওই নগর পুলিশ কর্মকর্তা।
সিসিক
সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে ১৩৪টি কেন্দ্রে ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ ভোটার তাদের ভোট প্রদান করবেন। এবার নির্বাচনে মেয়র পদে ছয়জন, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৬২ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৩৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
জানা গেছে, সিসিক নির্বাচনে ১৪ প্লাটুন বিজিবি, র্যাবের ২৭টি টিম কাজ করছে। ১৩৪টি ভোটকেন্দ্রের প্রতিটিতে ২২ জন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে ৭ জন পুলিশ, ১২ জন আনসার সদস্য আগ্নেয়াস্ত্রসহ আনসার বাহিনীর একজন প্লাটুন কমান্ডার ও একজন এপিসি এবং একজন ব্যাটলিয়ান আনসার সদস্য থাকবেন।
তবে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে ২ জন করে অতিরিক্ত ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্য অস্ত্রসহ থাকবেন। এ ছাড়া ৯টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, মোবাইল টিম ৯টি, ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকবেন।
মোতায়েন বিজিবির সদস্যরা টহল দিচ্ছেন
সিসিক নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে ১৩৪টি ভোটকেন্দ্রে ২ হাজার ৯৪৮ জন পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
বিসিসি
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে ৬ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৯৪ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এবার ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২১ হাজার ৪৩৬ জন এবং নারী ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজার ৭৩০ জন।
নগরীতে ১২৩টি কেন্দ্রের ৭৫০টি বুথে বিরামহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলবে। এর মধ্যে ৪টি ওয়ার্ডের ১টি কেন্দ্রে ৭৮টি বুথে ভোটগ্রহণ করা হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম পদ্ধতিতে।
বিসিসি নির্বাচনে ১২৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫০টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) ও ৬২টি গুরুত্বপূর্ণ এবং ১১টি কেন্দ্রকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশের বিশেষ শাখা।
অধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) এবং আনসার মিলিয়ে ১৪ জন সশস্ত্রসহ মোট ২৪ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ কেন্দ্রে ১২ জন সশস্ত্র পুলিশ, এপিবিএন ও আনসারসহ মোট ২২ জন সদস্য দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন ছাড়াও পুলিশের একাধিক দলকে টহল দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রিজার্ভ এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
নির্বাচনকালীন যেকোনো অপ্রীতিকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার বিচারের জন্য ১০ জন নির্বাহী এবং ১০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে।
এছাড়া ১৯ প্লাটুন বিজিবি ছাড়াও র্যাবের ৩৫টি টহল দল ও সাদা পোশাকধারীসহ প্রায় সাড়ে ৩০০ সদস্য কেন্দ্রের বাইরে নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন।
এমএআর/এমআরএম