বিশেষ প্রতিবেদন

ডিএসসিসির ১৬৭০ বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা!

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন সাড়ে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ বাড়িতেই ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া বাহিত এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। ১৯ হাজার ৫৪২টি বাড়ি পরিদর্শন করে এক হাজার ৬৭০টি বাড়িতে লার্ভার উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে।

Advertisement

গত ২৫ জুন থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ডিএসসিসি এলাকায় অঞ্চল ভিত্তিক মশকের লার্ভা শনাক্ত ও ধ্বংসকরণ কার্যক্রমের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবচেয়ে ভয়বহ চিত্র ডিএসসিসির অঞ্চল ১-এ। সাতটি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এ অঞ্চলের ধানমন্ডি, কলাবাগান, কাঠালবাগান, মন্ত্রিপাড়া ও সেগুনবাগিচার চিত্র ভয়াবহ। মশকের লার্ভা শনাক্ত ও ধ্বংসকরণে সংশ্লিষ্ট কর্মীরা অঞ্চল ১-এর দুই হাজার ৫৯৯টি বাড়ি পরিদর্শন করেন। এর মধ্যে ৯৩৮টি বাড়িতেই লার্ভার উপস্থিতি পান তারা। লার্ভার উপস্থিতির হার ৩৬ দশকিম ০৯ শতাংশ। এছাড়া প্রজননস্থল পাওয়া গেছে ৯৬১টি। পরিদর্শনে লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি ১৬৬১টি বাড়িতে।

এছাড়া আরও চারটি অঞ্চলের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অঞ্চল ২-এ ওয়ার্ড সংখ্যা ১২টি। সেখানে চার হাজার ৩৪৪টি বাড়ি পরিদর্শন করে ১৭৮টিতে লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। শতকরা হিসাবে যা ৪ দশমিক ০৯ শতাংশ। বাড়িগুলোর মধ্যে চার হাজার ১৬৬টি বাড়িতে লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।

Advertisement

একইভাবে অঞ্চল ৩-এ ওয়ার্ডের সংখ্যা ১২টি। সেখানে চার হাজার ৬৯৩টি বাড়ি পরিদর্শন করে ২৭৫টিতে লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। শতকরা হিসাবে যা ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। চার হাজার ৪১৮টি বাড়িতে লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।

অঞ্চল ৪-এ ওয়ার্ড সংখ্যা ১১টি। সেখানে তিন হাজার ৪০৬টি বাড়ি পরিদর্শন করে ৬৯টিতে লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা শতকরা ২ দশমিক ০২ শতাংশ। বাড়িগুলোর মধ্যে তিন হাজার ৩৪০টিতে লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।

অঞ্চল ৫-এ ওয়ার্ডের সংখ্যা ১৫টি। সেখানে চার হাজার ৫০০টি বাড়ি পরিদর্শন করে ২১০টিতে লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। শতকরা হিসাবে যা ৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ। বাড়িগুলোর মধ্যে চার হাজার ২০৯টিতে লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।

প্রতিবেদনে এমন উদ্বেগজনক চিত্র দেখে লার্ভা বা প্রজননস্থল শনাক্ত ও ধ্বংসকরণে ফের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। এর আগেও এমন কর্মসূচি পরিচালিত হয়।

Advertisement

এডিস মশার লার্ভা বা প্রজননস্থল ধ্বংসের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য স্থানীয় কাউন্সিলরদের সমন্বয়ে প্রতিটি অঞ্চলে একটি করে কমিটি গঠন করে ডিএসসিসি। সেই কমিটির সদস্যরা বাড়ির পরিত্যক্ত কলস, বালতি, বোতল, কনটেইনার, টায়ার, পলিথিন ব্যাগ, পানির ড্রাম, ফুলের টবে জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে মশার লার্ভা পেয়ে এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ লিফলেট বিতরণও করেন।

তবে গত ২৫ জুন থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত মশকের লার্ভা শনাক্ত ও ধ্বংসকরণ কার্যক্রমে অনেক বাসাতেই ডিএসসিসির মশক নিধনকর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। ধানমন্ডির বাসিন্দা শিহাবুল ইসলাম বলেন, পত্র-পত্রিকা ও টিভিতে জেনেছি ডিএসসিসি মশকের লার্ভা ধ্বংসের কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে আমাদের বাসা বা আশপাশের বাসায় তাদের দেখা যায়নি। মশকনিধন টিম তো দূরের কথা মশা মারার ওষুধ ছিটানো কর্মীদেরও দেখা মেলেনি।

রাজধানীর মুগদার বাসিন্দা মাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় মশার উপদ্রব অনেক বেশি। মাঝেমাঝে ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ ছিটানো চোখে পড়লেও বাসায় বাসায় গিয়ে মশকের লার্ভা শনাক্ত ও ধ্বংসকরণের বিষয়ে কোনো কার্যক্রম আমাদের বাসায় বা আশপাশেও দেখা যায়নি।

ডিএসসিসির নেয়া কার্যক্রম প্রসঙ্গে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘এ কার্যক্রমে প্রায় ২০ হাজার বাড়িতে সংশ্লিষ্ট কর্মীরা সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। যেসব বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে তা ধ্বংস করা হয়েছে। এসব বাড়িতে ভবিষ্যতে যাতে এডিস মশা বংশবিস্তার করতে না পারে সে বিষয়ে তাদের সচেতন করার পাশাপাশি প্রজননস্থল ধ্বংস করার কৌশলও শিখিয়ে দেয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘অঞ্চল ১-এ মশকের লার্ভার বিষয়টি আমাদের কাছে উদ্বেগজনক মনে হয়েছে। এ অঞ্চলের ধানমন্ডি, কলাবাগান, সেগুনবাগিচা ও মন্ত্রিপাড়ার ৪৫ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এ কারণে আমরা এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসকরণে আবারও কর্মসূচি নিয়েছি।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে থেকেই মশকের বংশবিস্তার রোধে নিয়মিত লার্ভিসাইডিং ও ফগিং কার্যক্রমের পাশাপাশি বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম গ্রহণ, এডিস মশার উপদ্রব থেকে নগরবাসীকে রক্ষায় বাসাবাড়ির ভেতরে থাকা ফ্রিজ, এসি, ফুলের টবে জমে থাকা পানি অপসারণ, সচেতনতামূলক টিভিসি সম্প্রচার, গণবিজ্ঞপ্তি, লিফলেট ও মাইকিং করা হয়েছে। এছাড়া ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে ৫৭টি ওয়ার্ডে ৫৭টি ওয়ার্ড ভিত্তিক কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এএস/এমএআর/জেআইএম