দেশজুড়ে

হতদরিদ্রের ঘর নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ

শরীয়তপুরে সদর উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর দরিদ্র বান্ধব কর্মসূচির আওতায় গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিকে পাশ কাটিয়ে, জেলার বাইরে থেকে ঠিকাদার নিয়োগ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে।

Advertisement

জানা যায়, ‘যার জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ বাড়িতে গৃহ নির্মাণ’স্লোগানে প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব পরিকল্পনায় নির্মিত আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ৪৯৫টি গৃহহীন পরিবারকে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ঘর নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। প্রকল্পটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত ৫ সদস্যের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে আর এর কার্যক্রম সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তদারকি করার কথা।

গত মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি করে সহকারি কমিশনার ভূমি, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রকৌশলীকে সদস্য করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব রেখে পাঁচ সদস্যের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে এবং উপকারভোগী পরিবারের সদস্যদের অংশ গ্রহণে গৃহ নির্মাণ ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান পিআইসিকে কোনো কিছু না জানিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের ঠিকাদার নিয়োগ করে ঘর নির্মাণের কাজ করাচ্ছেন।

এই প্রকল্পের যাবতীয় ব্যয় বহনের জন্য সভাপতি ও সদস্য সচিবের যৌথ স্বাক্ষরে একটি ব্যাংক হিসাব নাম্বার থাকা বাধ্যতামূলক। সে অনুযায়ী শরীয়তপুর রূপালী ব্যাংকে একটি যৌথ হিসাব খোলা হয়। কিছুদিন সভাপতি (ইউএনও) জিয়াউর রহমান এবং সদস্য সচিব (পিআইও) নুরুন্নাহারের যৌথ স্বাক্ষরে হিসাব নাম্বারটি চালু থাকে। কিন্তু হঠাৎ করে সদস্য সচিব পিআইও নুরুন্নাহারের কাছ থেকে ইউএনও ব্যাংক চেকের স্বাক্ষর ক্ষমতা নিয়ে নেন।

Advertisement

রূপালী ব্যাংক সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই পিআইও নুরুন্নাহার একটি দরখাস্তের মাধ্যমে নিজের অবস্থান থেকে অব্যাহতি নিয়ে প্রকল্পের সমুদয় টাকা এককভাবে ইউএনওকে উত্তোলনের ক্ষমতা অর্পণ করেন।

সরেজমিনে জানা যায়, সাড়ে ১৬ ফিট দৈর্ঘ্য, ১০ ফিট প্রস্থ একেকটি ঘরের সঙ্গে ৫ ফিট প্রস্থ বারান্দা, একটি টয়লেট এবং ঘরের ভিটি পাকা করে দেয়ার নিয়ম রয়েছে। প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় সরকার ১ লাখ টাকা নির্ধারণ করলেও নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে মাত্র ৫০-৬০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ইউএনও।

হতদরিদ্র মকবুল হোসেন হোসেন সরদার বলেন, আমার ঘর না থাকায় সরকার আমাকে একটি ঘর নির্মাণ করে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। ঠিকাদারের লোকেরা আমার বাড়িতে যেসব কাঠ ও খুঁটি এনেছে তা দিয়ে ঘর নির্মাণ করলে বেশিদিন টিকবে না। আমরা গরীব হলেও এতো সস্তা কাঠ দিয়ে রান্না ঘরও নির্মাণ করি না। আমি মিস্ত্রিদের ফেরৎ পাঠিয়েছি। যদি ভাল কাঠ না দেয়, তাহলে এই ঘর আমি ফেরৎ দিব।

মাগুরা জেলা রাজ মিস্ত্রি সালাউদ্দিন ও ইয়াসিন মিয়া বলেন, ইউএনও স্যার তার ম্যানেজারের মাধ্যমে আমাদের কাছে মালামাল পাঠান। আমরা বড় খুটিতে ৭টা রিং এবং ছোট খুটিতে ৬টা করে রিং ব্যবহার করছি।

Advertisement

ব্যবসায়ী মাওলানা ওমর ফারুক বলেন, একটা ঘরে একটা দরজা ও চারটি করে জানালা আমার কাছ থেকে ক্রয় করে নিচ্ছে ইউএনও সাহেবের লোকেরা। প্রতিটি দরজার মূল্য ৯০০ টাকা এবং প্রতিটি জানালা আমি ৩০০ টাকা করে বিক্রি করছি। মোট ৫ পিচ বিক্রি করছি ২ হাজার ১০০ টাকায়।

রুদ্রকর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ঢালী বলেন, আমার ইউনিয়নে প্রায় ৫০টি ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। আমি শুনেছি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির আমি একজন সদস্য। কিন্তু আমাকে এ বিষয়ে কিছুই অবগত করানো হয়নি। কাকে দিয়ে, কীভাবে ঘর নির্মাণের কাজ করানো হচ্ছে তাও জানি না।

সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোসাম্মাৎ নুরুন্নাহার বলেন, নিয়ম মতে আমি এই প্রকল্পের সদস্য সচিব হলেও আমাকে কোনো দায়িত্ব দেয়া হয়নি। মাগুরা জেলা থেকে কিছু লোক এসে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছে তা শুনেছি। ইউএনও স্যার এবং আমার নামে ব্যাংকে একটা যৌথ হিসাব নাম্বার ছিল এই প্রকল্পের টাকা খরচের জন্য। আমি কয়েকদিন আগে ইউএনও স্যারকে একক দায়িত্ব দিয়ে সেখান থেকে সরে আসি।

সদর উপজেলা প্রকৌশলী আ ফ ম তৈয়বুর রহমান বলেন, আমি যে এই কমিটির একজন সদস্য এই পর্যন্ত সে বিষয়ে ইউএনও আমাকে কোনো কিছু জানাননি। কোনো মিটিং হয়েছে বলেও জানি না। এমনকী আমাকে কোন চিঠিও দেয়া হয়নি।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমানের সঙ্গে অনেকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।

মো. ছগির হোসেন/আরএ/পিআর