আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের আর কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তবে একটা যোগাযোগ থাকতে পারে।’
Advertisement
রোববার সচিবালয়ে সমসাময়িক ইস্যুতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন।
বিএনপির সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘সংলাপের এখন আর সুযোগ নেই, সম্ভাবনাও নেই। এখন এই টাইমে কী সংলাপ করব।’
আপনি টেলিফোনে আলোচনার কথা বলেছেন- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একটা যোগাযোগ থাকতে পারে, এতে অসুবিধাটা কী? তাহলে অনেক কঠিন সম্পর্কের বরফও তো গলতে পারে। যোগাযোগটা থাকা ভালো।’
Advertisement
আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির সঙ্গে বসবেন কি না- জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সেটা এখনও আমরা চিন্তা করিনি। আমাদের দলে কোনো চিন্তা এখন নেই। আমরা মনে হয় এটার আর সম্ভাবনা নেই। আলোচনাটা কেন? কীভাবে নির্বাচন হবে সেটা আমাদের সংবিধানে আছে।’
টেলিফোনে আলোচনার বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন কাদের সাহেব কল করলে আমিও কথা বলব- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মন্ত্রী বলেন, ‘এখানেও তারা শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন। সেক্রেটারি টু সেক্রেটারি কথা বলব। এটা কী প্রি-কন্ডিশন নয়? এ ধরনের কনভারসেশনে কী প্রি-কন্ডিশন আরোপ করা উচিৎ? এটা কি কোনো ডেকোরাম ও ডিসেন্সির ভাষা?’
তিনি বলেন, ‘কন্ডিশনের প্রশ্ন আসলে আমি ফোন দেব না। কথা হতে পারে যেকোনো সময়। আমি কন্ডিশন মানি না।’
এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টি মহাজোটে আছে, মহাজোটেই থাকবে।’
Advertisement
এই সরকারের আমলে অনেক উন্নয়নের মধ্যে অনেক দুর্নীতির খবরও এসেছে- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘উন্নয়ন যেখানে আছে, সেখানে...চাঁদের মধ্যে কলঙ্কও আছে। এটা হতেই পারে। কথা হচ্ছে আমি নন রেসপন্সিভ কি না। সরকার প্রত্যেকটি স্ক্যামের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে।’
আলোচনা একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়েবিভিন্ন দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আলোচনার বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এগুলো একদম একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে। একজনের সঙ্গে হয়তো সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছি, এরসঙ্গে রাজনীতি নেই সেই কথা আমি বলব না। কিন্তু একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে।’
আপনাদের জোটে তাদের চান কি না- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাইলে তো হবে না, তারাও তো চাইতে হবে। এই চাওয়াটা তো আমাদের উপর নির্ভর করবে না।’
আপনাদের আগ্রহের কথা তাদের জানিয়েছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘না এখনও, প্রাথমিক পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের মনোভাব...কথাবার্তা বলেছি। এটা একেবারে ইনিশিয়াল স্টেজের বিষয়, এগুলো এখনও ফাইন্যালি কিছু হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘যদি এটা কোনো মেরুকরণের দিকে আগায়, স্ট্র্যাটেজিক কোনো অ্যালায়েন্সের দিকে, সেটা তো আর গোপন থাকবে না। সেটার আনুষ্ঠানিকতা থাকবে, তখন তো আপনারা সবাই জানবেন। চাঁদ উঠলে কি, আপনারা দেখবেন না?’
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, ‘তার সঙ্গে আমার একটা সম্পর্ক আছে। তাছাড়া উনি এক সময় এখানে কাজ করতেন। কনস্ট্রাকশনে কাজটাজ ছিল। এখানে উনার কিছু পাওনা আছে, এমন একটা কথা আমাদের বলেছেন। আমি বলেছি কাগজপত্রগুলো পিএসের কাছে দিতে, আমরা খতিয়ে দেখব।’
‘সাথে ফাঁকে ফাঁকে তো সব কথাই হয়েছে, রাজনীতির কথা। রাজনীতির বিষয়ে কথাবার্তা তো হয়েছে। নাথিং ইজ ফাইন্যাল। কোনো সিদ্ধান্তে আমরা পৌঁছায়নি।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সব বিষয়েই আলোচনা হয়েছে। এটা হাইড অ্যান্ড সিকের কোনো বিষয় নয়। তাদের বোধ হয় ৮ দলীয় ঐক্য জোট আছে। তারা জোটগতভাবে নির্বাচন করবেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। এখানে আওয়ামী লীগও না বিএনপিও না। তারা আলাদাভাবে জোট নির্বাচন করবেন।’
তিনি বলেন, ‘তবে এটা বলেছেন, আমরা (সিপিবি) মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। আমাদের এই স্পিরিটটা বজায় রেখে যা করার করব। একাত্তরের চেতনা হলো আমাদের প্রাইম কনসিডারেশন। আর কাদের সিদ্দিকীরও ভাবনা এরকমই, তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেন। অ্যালায়েন্স করেন যাই করেন এই স্পিরিটটা ধারণ করে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘তবে জনসভার স্পেসের ব্যাপারে অলি আহমদ সাহেব (বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ) আলাপ করেছেন। কুমিল্লায় একটি মিটিংয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। সেই প্রেক্ষিতে আমি তাকে আশ্বস্ত করেছি কোনো মিটিং হলে আমাকে জানাবেন। তাহলে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে নেব।’
নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার কি ছোট ছোট জোট গঠনে মনোযোগ দিচ্ছে- জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘ছোট ছোট জোট তো হচ্ছেই, সরকার মনোযোগ দেবে কেন?’
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সম্প্রসারণের করা হবে কি না- জানতে চাইলে বলেন, ‘আমাদের এখানে যদি কেউ আসে আমরা বসবো, দল বসবে, জোট বসবে। যদি নতুন কেউ আসে, স্ট্র্যাটেজিক অ্যালায়েন্স করার মতো কোনো দল যদি অফার দেয় সেটা আমরা বিবেচনা করব।’
কালকে ভালো নির্বাচন হবেরাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশনের ভোট গ্রহণ হবে সোমবার। নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কালকে ভালো নির্বাচন হবে। বিএনপি যদি না জেতে, তবে তারা এটাকে ভালো বলবে না। নির্বাচনে যদি অনিয়ম হয় সেটা বলুন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা জিতবই এটা বলব না। তবে আমরা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’
বিএনপি বলেছে, যাই হোক শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনে থাকবে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটা তো ভালো, আমি এই স্পিরিটকে ওয়েলকাম করি।’
আরএমএম/এনএফ/এমএস