বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আগামী ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও ভোটকেন্দ্রে সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুলিশ-র্যাব ও বিজিবি সমন্বয়ে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
Advertisement
এরই মধ্যে ১৯ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে বিজিবি সদস্যরা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় টহল দিচ্ছেন।
এছাড়া নির্বাচনের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে তৎপর রয়েছে র্যাব। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মোটরসাইকেলে টহল দিচ্ছেন র্যাব সদস্যরা। নগরীতে মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য মোটরযানের ওপর নজরদারি বৃদ্ধি করেছে মেট্রোপলিটন পুলিশ।
ইতোমধ্যে নগরীর তিনটি প্রবেশ মুখে পুলিশের স্থায়ী চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এছাড়া নগরীর ভেতরে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সার্বক্ষণিক চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনে নজরদারি রাখা হচ্ছে।
Advertisement
এছাড়া বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকা ছাড়তে ও আবাসিক হোটেলগুলোতে চালানো হচ্ছে তল্লাশি অভিযান। ভোটারদের মনেও রয়েছে সহিংসতার আশঙ্কা।
ভোটের সময় যত এগিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে উত্তাপ। গত শুক্রবার রাতে নগরীর ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় প্রধান দুই রাজনৈতিক দল পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে।
আওয়ামী লীগ অফিসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ওই এলাকার ৭ বিএনপি নেতাকর্মীকে আটক করেছে নগরীর বিমানবন্দর থানা পুলিশ। শুধু ওই এলাকায় নয়, গত কয়েক দিন ধরে এবং সব শেষ নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে পুলিশ বিএনপির ১৫ জন নেতাকর্মীকে আটক করে বলে শনিবার দুপুরে সদর রোডের দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার।
যদিও শনিবার বিকেলে নগর ভবনের সামনে আয়োজিত শেষ নির্বাচনী সমাবেশে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, একমাত্র বরিশালে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করছে। আর এটি সম্ভব হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের রাজনৈতিক অভিভাবক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি এবং মহানগর আওয়ামী লীগের যোগ্য নেতৃত্বের কারণে।
Advertisement
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলালের সভাপতিত্বে সমাবেশে মেয়র প্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার।
যদিও নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন ইসলামী আন্দোলন, বাসদ ও কমিউনিস্ট পার্টি এবং লাঙ্গল প্রতীকের মেয়র প্রার্থী।
লাঙ্গল প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, নির্বাচন কমিশনের দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন নিয়ে তারা যথেষ্ট সন্দিহান।
কমিউনিস্ট পার্টির মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট এ কে আজাদ বলেন, সুষ্ঠু ভোট নিয়ে ভোটারদের কোনো রকম আশংকা কাটেনি। বরং নতুন করে আটক আতংক সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগের লোকজন বিশাল বহর নিয়ে মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে জনমনে ভীতির সৃষ্টি করছে। নির্বাচন কমিশন তাদের দেয়া কোনো কথাই রাখেনি বলে দাবি করেন মেয়র প্রার্থী একে আজাদ।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের আশংকা উড়িয়ে দিয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন জানান, ভোটাররা যাতে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন সেজন্য ১২৩টি কেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কমতি রাখা হচ্ছে না। আর ১১২টি ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ) কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। কোথাও আইনের ব্যতয় ঘটলে নির্বাচনী আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন তিনি।
এদিকে বরিশাল সিটি নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ৩৩ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের কমান্ডার লে. কর্নেল সরদার মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিজিবি শনিবার থেকে ভোটের পরদিন পর্যন্ত বরিশাল নগরীতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবে। বিজিবি কোনো কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করবে না। কেন্দ্রের বাইরের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকছে।
যদি কোনো কেন্দ্রে কোনো কারণে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সাময়িক সময়ের জন্য ওই কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করবে বিজিবি।
এমআরএম