রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রধান দুই মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল এবার ব্যালট ইস্যুতে বাকযুদ্ধে নেমেছেন। এ নিয়ে শনিবার পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছেন তারা।
Advertisement
গত কয়েকদিন ধরেই বিএনপির মেয়র প্রার্থী বুলবুল প্রচারণায় গিয়ে অভিযোগ করছেন, ভোটের আগের রাতেই নৌকায় সিল মেরে ব্যালট বাক্সভর্তি করা হবে।
শনিবার এর সঙ্গে যুক্ত করেছেন, ঢাকা থেকে অতিরিক্ত ব্যালট পেপার আনার ষড়যন্ত্র চলছে। সকালে নগরীর সাহেববাজার এলাকায় প্রচারণায় গিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে এ অভিযোগ করেন বুলবুলু।
বুলবুল বলেন, নতুন করে ঢাকা থেকে অতিরিক্ত ব্যালট পেপার আনার ষড়যন্ত্র চলছে। ধানের শীষের গণজোয়ার দেখে ভীত হয়ে ভোট কারচুপি ও জাল ভোটের পরিকল্পনা করছে সরকার সমর্থকরা।
Advertisement
তবে শনিবার নগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিটন এ অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করেন। তিনি বলেন, বিএনপি এখন বলে বেড়াচ্ছেন, আমরা নাকি ভোটের আগেই বাক্সভর্তি করে রাখব। সেটাই যদি হয়, তবে ভোট করছে কেন? অভিযোগ নিয়ে কোর্টে যাচ্ছে না কেন তারা?
লিটন বলেন, এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে ৭০ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হব। পরাজয় নিশ্চিত জেনেই বিএনপি অপকৌশল গ্রহণ করছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেন লিটন।
গণগ্রেফতার ইস্যুতেও পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছেন লিটন ও বুলবুল। বুলবুল বলেন, এজেন্ট, নেতাকর্মী ও সমর্থকদের গণগ্রেফতার করছে পুলিশ। এ পর্যন্ত দেড় শতাধিক নেতাকর্মীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এজেন্টদের হুমকি দেয়া হয়েছে। পার পাচ্ছে না নারী নেতাকর্মীও। এখন পুলিশ আওয়ামী লীগের এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পুলিশের ভূমিকায় রয়েছে।
বুলবুলের এ বক্তব্যও উড়িয়ে দেন লিটন। বলেন, আমার জানা মতে, এখন পর্যন্ত বিভিন্ন অপরাধে পুলিশ বিএনপির ২০-২৫ জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে। তারা বলে বেড়াচ্ছেন, কয়েকশ কর্মীকে আটক করা হয়েছে। আমরা জানি, সব কেন্দ্রে এজেন্ট দেয়ার মতো জনবল বিএনপির নেই। নিজেদের এই দুর্বলতা ঢাকার জন্য তারা গ্রেফতারের অপপ্রচার চালাচ্ছেন। বলছেন, আমরা নাকি তাদের এজেন্টের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছি।
Advertisement
নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়েও সরব লিটন-বুলবুল। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বুলবুল বলেন, নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ আওয়ামী লীগের আজ্ঞাবহ। আওয়ামী লীগ কালো টাকা এবং পেশীশক্তি প্রয়োগ করছে। সরকারদলীয় প্রার্থী আচরণবিধি ভেঙেই যাচ্ছেন। অভিযোগ দিলেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না কমিশন। উল্টো বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন চলছে। পরিস্থিতি বিরাজ করছে যুদ্ধেরমতো। সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে সেনা মোতায়েন করতে হবে।
তবে রাজশাহীতে সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন নেই জানিয়ে লিটন বলেন, নির্বাচনের প্রচারকাজ শুরু হওয়ার পর থেকে বিএনপি আমাদের সম্পর্কে অপপ্রচার চালানোর কৌশল নিয়েছে। এখন পর্যন্ত তারা শতাধিক অভিযোগ করেছে। বলে বেড়াচ্ছে- ভোট করে কী হবে, নৌকা তো জিতেই আছে। নির্বাচন সুষ্ঠু করার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নেই ইত্যাদি ইত্যাদি। ভোটে নেমেই তারা বললো- লেভেল প্লেইং ফিল্ড নেই। এটি তাদের মুদ্রাদোষ।
লিটন পাল্টা অভিযোগ করেন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু জেএমবির স্রষ্টা, বাংলা ভাইয়ের স্রষ্টা। বুলবুলের পথসভায় তাদের লোকজনই বোমা ফাটিয়ে আমাদের ওপর দায় চাপিয়েছে। জানাজানি হয়ে গেছে, বোমা তারা ফাটিয়েছে। সর্বশেষ আমাদের কোণঠাসা করার জন্য বুলবুল গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে ফেসবুকে অপপ্রচার চালানো হয়। তবে লিটনের এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে এতে অপপ্রচার বলছেন বুলবুল।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মঈনুদ্দিন মন্ডল ও রাজশাহী নগর আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক মীর ইশতিয়াক আহমেদ লিমন প্রমুখ।
শনিবার লিটন রাজশাহী কলেজ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতবিনিময় সভায় যোগ দেন। পরে নগরীর একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত বরিশাল বিভাগীয় সমিতির মতবিনিময় সভায় অংশ নেন তিনি।
অন্যদিকে, সকাল থেকে নগরীর জেলগেট থেকে গণসংযোগ শুরু করেন বুলবুল। এরপর সিপাহী পাড়া, ফায়ার সার্ভিসের মোড়, সাহেব বাজার-সোনাদীঘি মোড় এলাকায় গণসংযোগ করেন।
গণসংযোগে অংশ নেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফা, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, বোয়ালিয়া থানা বিএনপি সভাপতি সাইদুর রহমান পিন্টু ও তানোর পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান প্রমুখ।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এএম/আরআইপি