মানুষের জীবনে যে নির্ধারিত সরবত পান করতে হবে তা হলো মৃত্যু। এমন কোনো জীবন নেই যে মৃত্যুর স্বাদ নেবে না। আর যাই হোক, সৃষ্টি জগতের কোনো জীবন বিনিময়ে মাধ্যমে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন-
Advertisement
‘তোমরা যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই; যদি তোমরা সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গেও অবস্থান কর।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৭৮)
মৃত্যুর কথা স্মরণ করে পরকালের জবাবদিহিতার জন্য যারা দুনিয়াতে প্রস্তুতি গ্রহণ করবে, তাদের জন্য রয়েছে পরকালের চিরস্থায়ী জীবনে মুক্তি, জান্নাতের সুঘ্রাণ ও প্রশান্তি সুনিশ্চিত। যার নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন স্বয়ং রাসুলে আরাবি।
সুতরাং চিরস্থায়ী পরকালের চিরশান্তির জন্য দুনিয়া থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করা জরুরি। যারাই পরকালের জবাবদিহিতার বিষয়টি নিশ্চিত ভেবে আমল করবে তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ।
Advertisement
হজরত বারা ইবনে আজেব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করে বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে এক আনসারি সাহাবির জানাযার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। আমরা তাঁর কবর পর্যন্ত পৌঁছলাম। তখনও তাঁকে কবরে শোয়ানো হয়নি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমরাও তাঁর সঙ্গে বসলাম। যেমন আমাদের মাথার ওপরে পাখি বসে আছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাতে একটি লাঠি ছিল। তিনি লাঠির মাথা দিয়ে জমিনে আঘাত করেন। পরে তিনি উপরের দিকে মাথা তোলেন এবং বলেন, তোমরা আল্লাহর কাছে আজাব থেকে পানাহ চাও। এ কথা তিনি ২/৩ বার বললেন, এরপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘কোনো মুমিন বান্দার যখন দুনিয়া ত্যাগ করে আখেরাতে পাড়ি জমানোর (মৃত্যুর) সময় উপস্থিত হয়; তখন আসমান থেকে সাদা চেহারা বিশিষ্ট ফেরেশতারা নিচে নেমে আসেন। তাদের চেহারা সূর্যের মতো আলোকজ্জ্বল। তাদের সঙ্গে থাকে বেহেশতের কাফন ও আতর। তাঁরা তার (মৃতব্যক্তির) চোখের সীমানায় এবং মৃত্যুর ফেরেশতা (মৃতব্যক্তির) মাথার কাছে বসেন।
তিনি (মৃত্যুর ফেরেশতা) বলেন, ‘হে পবিত্র ও নেক আত্মা! তুমি আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টির দিকে বেরিয়ে আস। তখন আত্মা বেরিয়ে আসে, যেভাবে কলসি থেকে পানির ফোঁটা বেরিয়ে আসে।
Advertisement
তখন ফেরেশতারা আত্মাকে ধরবেন; তাঁকে বেহেশতের আতরযুক্ত কাফনে রাখবেন; সেই কাফন থেকে পৃথিবীর সর্বোত্তম মেশকের সুঘ্রাণ বের হতে থাকবে। তারপর তারা তা (আত্মা/রূহ) নিয়ে ওপরে যাবেন।
তারা যখন কোনো ফেরেশতা দলের কাছ দিয়ে অতিক্রম করবেন, তখন ফেরেশতারা বলবে, এটি একটি উত্তম আত্মা।
বহনকারী ফেরেশতারা বলবেন, ‘এটি অমুকের আত্মা। অর্থাৎ তারা দুনিয়াতে তার নামের পরিচয় দিবেন। তারা দুনিয়ার আসমান পর্যন্ত দরজা খুলে দিতে বলবেন। তখন দরজা খুলে দেয়া হবে। তারপর ঘনিষ্ঠ ফেরেশতারা পরবর্তী আসমান পর্যন্ত তাকে বিদায় জানাবেন। সপ্তম আসমান পর্যন্ত এভাবে চলতে থাকবে।
অতঃপর আল্লাহ তাআলা আদেশ দেবেন, ‘আমার বান্দার দফতর ইল্লিয়্যিনে লিখে রাখে;’ আর ইল্লিয়্যিন হচ্ছে সপ্তম আসমানে মুমিনের আত্মা সংরক্ষণের স্থান।
আরও পড়ুন > মৃত্যু নির্ধারিত সময় ও স্থানেই অবধারিত
মুমিনের আত্মাকে পুনরায় জমিনে (কবরে) তার দেহে ফেরৎ পাঠানো হবে। এরপর দু’জন ফেরেশতা এসে তাঁকে (মৃতব্যক্তিকে) কবরে বসাবেন, তাঁকে জিজ্ঞাসা করবেন-তোমার রব কে? আত্মা বলবে, আমার রব আল্লাহ। তারপর জিজ্ঞেস করবেন, তোমার দ্বীন কি? আত্মা বলবে, আমার দ্বীন ইসলাম। ফেরেশতারা জিজ্ঞেস করবেন, তোমার কাছে প্রেরিত লোকটি কে? আত্মা বলবে, তিনি আল্লাহর রাসুল। তারপর জিজ্ঞেস করবেন, তুমি কিভাবে জানো? আত্মা বলবে, আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি, এর ওপর ঈমান এসেছি এবং তা বিশ্বাস করেছি।
এরপর আকাশ থেকে একজন আহ্বানকারী আওয়াজ দিয়ে বলবেন, ‘আমার বান্দা ঠিক বলেছে’ তার জন্য বেহেশতের বিছানা বিছিয়ে দাও এবং বেহেশতের একটি দরজা তাতে খুলে দাও। তখন সে বেহেশতের সুঘ্রাণ ও প্রশান্তি লাভ করবে। তার কবরকে নিজ চোখের দৃষ্টি সীমানা পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হবে।
রাবি বলেন, ‘তার কাছে সুন্দর চেহারা বিশিষ্ট একজন লোক আসবে’ যার পরনে সুন্দর কাপড় ও শরীরে সুঘ্রাণ থাকবে। সে বলবে, ‘তুমি সুখের সুসংবাদ গ্রহণ কর। এটি সেই দিন, যে দিন সম্পর্কে তোমাকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল।
আত্মা প্রশ্ন করবে, তুমি কে? সুন্দর চেহারা নিয়ে কে আমাকে সুসংবাদ দিচ্ছ। লোকটি উত্তর দেবে, আমি তোমার নেক আমল বা ভাল কাজ।
তারপর আত্মা ফরিয়াদ করতে থাকবে-‘হে আমার রব! কেয়ামত কায়েম কর; কেয়ামত ঘটাও; যেন আমি আমার পরিবার-পরিজন ও মাল-সম্পদের কাছে যেতে পারি।’
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব বান্দাকে দুনিয়াতে কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক চলার মাধ্যমে পরকালের চিরস্থায়ী জীবনে সুখ-শান্তি লাভের তাওফিক দান করুন। পরকালের প্রথম মঞ্জিল কবর থেকে শুরু করে বিচার দিবস পর্যন্ত উত্তম প্রতিদান দানের পাশাপাশি পরকালে চিরস্থায়ী জীবনে সফলতা দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম