পিরোজপুরের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ব্যারাক হাউজগুলোর করুণ অবস্থা বিরাজ করছে। দীর্ঘ দিন মেরামতের অভাবে ঘরগুলো বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ঘরের চালের টিনগুলো মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেকেই ঘরে পানি পড়া ঠেকাতে পলিথিন টানিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ দিকে সিডরে বিধ্বস্ত ঘরগুলো আজও সংস্কার করা হয়নি।
Advertisement
আবাসনের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ঘরের বসবাসের কোনো অবস্থা নেই। তাছাড়া টয়লেট ও নলকুপগুলো অকেজো। শিক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় অধিকাংশ শিশুই শিশুশ্রমে আর যুবকরা মাদকসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। ব্যারাক হাউজে সমবায় সমিতি থাকলেও এর কার্যক্রম এখনও চালু হয়নি। চারটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধিকাংশ ব্যারাকগুলোতে একই অবস্থা। বাসিন্দারা জানে না ব্যারাকগুলো মেরামত কোনো কর্তৃপক্ষ করবে বা কেউ করবেন কী না। আশ্রয়ণের বাসিন্দারা ১৩ বছরেও তা জানতে পারেনি। তাদের দুরবস্থার কথা মন্ত্রী, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে জানালেও এর কোনো সুফল পাওয়া যায়নি।
সরেজমিনে জানা যায়, জেলার কাউখালী উপজেলার সদর ইউনিনের ২০০১ সালে দুইটি ব্যারাকে মোট ৪৫টি ঘর নির্মাণ করে ৪৫টি অসহায়, দুস্থ ও গৃহহীন মানুষের মধ্যে বরাদ্ধ দেয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় বড় বিড়ালজুরিতে জাপানের সহযোগীকতায় ১০০ পরিবারের আবাসের ব্যবস্থা করা হয়। পর্যায়ক্রমে আমড়াজুরি ইউনিয়নের আমড়াজুরিতে ও গন্ধর্ব এলাকায় দুইটি প্রকল্পে ১০০ করে মোট ২০০টি পরিবারের মাথা গোজার ঠাঁই হয়। নৌবাহিনীর সদস্যরা ওই ব্যারাক হাউসগুলো নির্মাণ করে। পরবর্তীতে অসহায় ছিন্নমূল পরিবারের মাঝে বরাদ্দ দিয়ে ঘরগুলো হস্তান্তর করার পর থেকেই তারা বসবাস করে আসছে।
২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলায় ঘরগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ছোট বিড়ালজুরি এলাকার ব্যারাকের ২টি ঘর বিধ্বস্ত হয়ে গেলে আজো একই অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কোনো কোনোটির ব্যারাকের টিনের চালা বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ছিদ্র হয়ে গেছে। যার ফলে একটু বৃষ্টি হলেই ঘরের ভেতরে পানি পড়ে। বড় বিড়ালজুরির জাপানী ব্যারাক হাউজে কিছুদিন আগে অগ্নিকাণ্ডে ১০টি ঘর পুড়ে গেছে। এছাড়া অনেকগুলো ঘর নষ্ট হয়ে গেছে।
Advertisement
প্রকল্পের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, সিডরের সময় বিধ্বস্ত হওয়া ঘরগুলো মেরামত করা হয়নি। ফলে ওই ঘরের বাসিন্দারা অন্যত্র চলে গেছে।
আমরাজুড়ী ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মহাদেব আচার্য্য জানান, নানা দুর্যোগসহ দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও ওই আবাসনের ঘরগুলো মেরামত বা সংস্কার না করায় ৮০ ভাগ ঘরের চালের টিন মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। আশ্রয়ণের অধিকাংশ হত দরিদ্র মানুষ কেউ মাছ ধরে, কেউ আবার অন্যের জমিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। প্রকল্পের নলকুপগুলো অকেজো আজ প্রায় ৮ বছর। টয়লেটগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। ফলে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
গন্ধর্ব আশ্রয়ণের মাহিনুর বেগমসহ অনেকেই জানান, তাদের সন্তানদের লেখাপড়া করানোর মত কোনো সুযোগ নেই। বাধ্য হয়েই বাবার সঙ্গে শিশুরাও কাজে নেমে পড়েছে।
ওই এলাকার ইউপি মেম্বার আফজাল হোসেন জানান, বিদ্যালয় আশ্রয়ণ থেকে বেশ দূরে হওয়ায় শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। এসব দুরাবস্থার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না তারা।
Advertisement
কাউখালী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুর রশিদ মিল্টন জানান, বরাদ্দ পাওয়ার জন্য চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।
আমড়াজুরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সামসুদ্দেহা চাঁন জানান, বিষয়টি উপজেলা পরিষদের সভায় উপস্থাপন করেছি। উপজেলা পরিষদ তা জেলাকে অবহিত করেছেন। তাছাড়াও দুরবস্থা দূরীকরণের জন্য আশ্রয়ণবাসীদের আবেদন সুপারিশ করে জেলা প্রশাসকের বরাবর পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলার ইউএনও ইসরাত জাহান জানান, সব ক’টি প্রকল্প দেখার সুযোগ হয়নি। অফিস থেকে সার্ভেয়ার পাঠিয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করিয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হবে।
হাসান মামুন/আরএ/এমএস